শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরোতে আরও ৯ বছর : সিপিডি

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী ২০২৪ সালের আগে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরোতে পারবে না বাংলাদেশ। মানব সম্পদ উন্নয়ন, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার করা গেলে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল বা মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে উন্নীত হতে পারবে বলে মনে করে জাতিসংঘ শিল্প, বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আঙ্কটার্ড। আর স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে একটি কর্মপরিকল্পনা নেওয়ার সুপারিশ করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে সিপিডি। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম খান। অনুষ্ঠানে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।  জেনেভা থেকে একযোগে বিশ্বের ৪৮টি দেশে প্রকাশিত আঙ্কটার্ডের ২০১৫-এর প্রতিবেদনে একই সঙ্গে সরকারকে সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়েছে। যে দুটি সূচকের ওপর নির্ভর করে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ, সেগুলো যেন স্থিতিশীল থাকে। এর একটি হলো অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা আর অন্যটি মানব সম্পদ উন্নয়ন সূচক।

প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনটি সূচকের ওপর ভিত্তি করে স্বল্পোন্নত, উন্নয়নশীল ও উন্নত বিশ্বের তালিকা নির্ধারণ করে থাকে জাতিসংঘ। সেগুলো হলো- মাথাপিছু জাতীয় আয়, মানব সম্পদ উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা। তিনটির মধ্যে দুটি সূচকের মানদণ্ড অর্জন করতে পারলে একটি দেশকে এক ধাপ থেকে আরেক ধাপে উঠানো হয়। আঙ্কটার্ড বলছে, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এ সূচকে স্কোর ৩২ বা তার নিচে থাকার নিয়ম রয়েছে। বাংলাদেশের স্কোর আছে ২৫। এ ছাড়া মানব সম্পদ উন্নয়ন সূচকে ৬৬ স্কোর এর মধ্যে বাংলাদেশের আছে ৬৪ এ। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সামান্য পিছিয়ে। তবে মাথাপিছু জাতীয় আয় সূচকে বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে। মাথাপিছু জাতীয় আয় এক হাজার ২৪২ থাকার কথা থাকলেও জাতিসংঘের হিসাবে এখন আছে ৯২৬ এ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আর একটি সূচকের মানদণ্ড পূরণ করতে পারলে আগামী ২০১৮ সালের পর্যালোচনা সভায় বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। একই সঙ্গে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার তালিকাভুক্ত হবে। ‘আগামী ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে’ সরকারের নীতিনির্ধারকদের এমন স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষাকে রাজনৈতিক স্লোগান উল্লেখ করে সিপিডি বলেছে, কোনো বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ছাড়া ওই লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়। এর পেছনে যুক্তি তুলে ধরে সিপিডি বলছে, ২০২১ সাল নাগাদ উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে যেতে চাইলে মাথাপিছু জাতীয় আয় হতে হবে চার হাজার ১২৫ ডলার বা তার চেয়ে বেশি। কিন্তু বাংলাদেশের মাথাপিছু জাতীয় আয় এখন বিশ্বব্যাংকের হিসাবে এক হাজার ৩১৪ ডলার। বাকি ছয় বছরে এটিকে তিন গুণ বাড়াতে হবে। যা শুধু কল্পনা ও স্বপ্নেই দেখা যায়। গবেষণা সংস্থাটির মতে, বর্তমান সরকার সংখ্যার দিকে যতটা মনোযোগী, নীতি কাঠামোর দিকে ততটা নয়। প্রতিবেদন প্রকাশের পর এ প্রশ্নের জবাবে এ অভিমত ব্যক্ত করেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য। তিনি আরও বলেন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি শুধু উন্নয়নের সূচক নয়। এর সঙ্গে মানব সম্পদ উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশসহ অনেক কিছু জড়িত রয়েছে। এবারের আঙ্কটার্ডের প্রতিবেদনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে গ্রামীণ কৃষির ওপর। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃষি খাতের রূপান্তর ছাড়া ১৫ বছর মেয়াদি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন সম্ভব নয়। একই সঙ্গে মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছাও অসম্ভব হয়ে যাবে।

সর্বশেষ খবর