পৌরসভা নির্বাচনের বিধি লঙ্ঘনের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা। অনেক দিন পরে নির্বাচনী মাঠে নৌকা-ধানের শীষের লড়াইও জমে উঠেছে। তবে প্রতিযোগিতা করেই চলছে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের কাজও। নির্বাচনী প্রচারের পাশাপাশি প্রতিনিয়তই মিছিল-শোডাউন করছেন প্রার্থীরা। এমনকি দলীয় ক্যাডাররা তাদের সঙ্গে দেশি অস্ত্র নিয়ে কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন পৌরসভায় শোডাউন করছেন। দিচ্ছেন মোটরসাইকেল মহড়া। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়তই আচরণবিধি লঙ্ঘনের নানা অভিযোগ আসছে ইসিতে। এ ছাড়া গতকাল গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে পৌরসভায় বিএনপি প্রার্থীর অফিস ভাঙচুর করেছেন আওয়ামী লীগের সমর্থকরা। যশোর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীকে হত্যার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ এসেছে ইসিতে। এদিকে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে কোনো প্রার্থীকে উপস্থিত না থাকতে বলেছে ইসি। এ ছাড়া একডজন এমপির বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে ইসি।
বিনা ভোটে ১৪০ জন নির্বাচিত : পৌরসভা নির্বাচনে তিন পদে ২৩৪ পৌরসভায় প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন ১২ হাজার ৪৩ জন। মেয়র পদে ৬, সাধারণ কাউন্সিলর ৯৪ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর ৪০— মোট ১৪০ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ইসি কর্মকর্তারা জানান, মেয়র পদে নাম ও প্রতীকসহ ব্যালট পেপার মুদ্রণ আজ বুধবার শুরু হবে। নামের আদ্যাক্ষরের বর্ণানুক্রমে ব্যালট পেপারে প্রার্থীর নাম ও প্রতীক থাকবে। সাধারণ ওয়ার্ডের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ব্যালট পেপার ছাপানো হয়ে গেছে।
টহলে বিজিবি-র্যাবপৌর নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন হচ্ছে না। তবে বিজিবির সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব করছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। পুলিশ, আনসার-ভিডিপি ও ব্যাটালিয়ন আনসার থাকবে ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তায়। মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বিজিবি, র্যাব, এপিবিএন, কোস্টগার্ড ও পুলিশ সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন। ১৯ ডিসেম্বর আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে বৈঠকের পর নির্বাচন কমিশন এ প্রস্তাব চূড়ান্ত করবে। ভোটের আগে-পরে ২৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর চার দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মাঠে রাখতে চায় ইসি।
৩০ ডিসেম্বর ২৩৪ পৌরসভায় ভোট হবে। এতে ২০টি দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে মেয়র পদে ৯২৩ প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন। সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে লড়াইয়ে রয়েছেন আরও ১১ হাজারের বেশি প্রার্থী। সাড়ে ৩ হাজার ভোট কেন্দ্রের এসব পৌরসভায় ভোটার রয়েছেন প্রায় ৭১ লাখ।
ইতিমধ্যে ভোটে থাকা অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থী ও এনপিপি পৌরসভায় সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পৌর ভোটে সেনা মোতায়েন না চাইলেও সিইসির সঙ্গে বৈঠকের পর আবদুল মঈন খান বলেছেন, ভোটারদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে যা দরকার ইসিকে করতে হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, পৌর ভোটে সেনা মোতায়েনের দরকার পড়বে না। এ বাহিনীকে মোতায়েনের বিষয়টি ভেবেচিন্তে করতে হবে। কেউ চাইলে তো হবে না।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, সাধারণ ভোট কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৯ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ) কেন্দ্রে ৮ জন অস্ত্রধারী পুলিশসহ মোট ২০ জন সদস্য মোতায়েন রাখা হবে। বিধি লঙ্ঘনের বিচারের জন্য নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম নিয়োজিত থাকবেন পৌরসভাভিত্তিক। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচনী এলাকায় চিহ্নিত অপরাধী, চাঁদাবাজ, মস্তান, অস্ত্রবাজ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।
প্রার্থিতা প্রত্যাহার : ইসির তদন্ত কমিটি : নোয়াখালীর চাটখিল পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীকে ‘জোর’ করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করানোর অভিযোগ এসেছে ইসিতে। এ জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন। ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদনও দিতে বলেছে ইসি। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চাটখিলের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু বিএনপির প্রার্থীকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারে বাধ্য করা হয়েছে বলে দলটির পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে ইসিতে। এ জন্য ইসির আইন শাখার উপসচিব মো. মহসীনুল হকের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।