সোমবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

খবর নেই খানজাহান আলী বিমানবন্দরের

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

খবর নেই খানজাহান আলী বিমানবন্দরের

ঢিমেতালে চলছে খুলনার খানজাহান আলী বিমানবন্দরের নির্মাণ কাজ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

দক্ষিণাঞ্চলবাসীর বহুল প্রত্যাশিত খানজাহান আলী বিমানবন্দরের দৃশ্যমান অবকাঠামো নির্মাণকাজ এখনো শুরুই হয়নি। রানওয়ে সম্প্রসারণে নতুন করে ৫৩৬ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য মাঠপর্যায়ে ভূমি জরিপ ও প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ-সংক্রান্ত ফাইলটিও আট মাস মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে। সব মিলিয়ে কচ্ছপগতির বেড়াজালে আটকা পড়েছে এই বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্প। গত বছর জুলাই থেকে পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর হিসেবে খানজাহান আলী বিমানবন্দরের নির্মাণকাজ শুরুর কথা ছিল। এ জন্য গত বছরের ৬ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সভায় ৫৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকার প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। জানা যায়, খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণবিষয়ক ‘রোডম্যাপ’ অনুয়ায়ী প্রথম পর্যায়ে ২০১৫ সালের নভেম্বরের মধ্যে প্রকল্প কর্মকর্তা নিয়োগের কথা থাকলেও এখনো তা হয়নি। একই সঙ্গে মাঠপর্যায়ে জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় শুরু করা যায়নি প্রকল্পের চূড়ান্ত নকশা প্রণয়নের কাজ। বাগেরহাট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দরের জন্য পূর্বে কিছু জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। ওই জমির দক্ষিণে নতুন করে সন্তোষপুর মৌজা, ফয়লা বাজারের আংশিক, মিরেখালী, গোবিন্দপুর, ধলদা গ্রাম ও উত্তরে সোনাতুনিয়া গ্রাম, বামুন্ডা মৌজা, বলিয়াঘাটা নদী পর্যন্ত বিশাল এলাকা অধিগ্রহণের আলোচনা হলেও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের কাছে এখনো কোনো প্রস্তাবনা আসেনি। ফলে খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণবিষয়ক রোডম্যাপ অনুযায়ী চলতি বছরের আগস্টের মধ্যে প্রস্তাবিত জমি অধিগ্রহণ ও চূড়ান্ত নকশা প্রণয়ন শেষে নির্মাণকাজের ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া প্রায় অসম্ভব। সরেজমিন দেখা গেছে, গত বছর ৬ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সভায় ৫৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বাগেরহাটের ফয়লায় অবস্থিত খানজাহান আলী বিমানবন্দর প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু এখনো বিমানবন্দর নির্মাণ তদারকির জন্য প্রকল্প এলাকায় কোনো অফিস স্থাপন করা হয়নি। মাঠজুড়ে অবাধে গবাদিপশু বিচরণ করছে। বিমানবন্দরের জমিতে মাছের ঘের করে চাষ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। অনেকে ধান ও সবজি চাষও করছেন। কয়েক কোটি টাকা দামের মাটি ভরাটের কাজে ব্যবহৃত বড় বড় ট্রাক, রোলার, ড্রেজার, তেলবাহী ট্যাঙ্কার অযত্নে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। বিমানবন্দরের একাংশে স্থাপিত অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ির একটি কক্ষে বিমানবন্দর নির্মাণের একটি হালনাগাদ ‘রোডম্যাপ’ দেখতে পাওয়া যায়। বিমানবন্দর এলাকার অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তারা জানান, গত বছর সেপ্টেম্বরে যশোর থেকে বিমানের স্টোর সেকশনের একটি টিম এখানে রাখা অব্যবহৃত নির্মাণ যন্ত্রগুলোর একটি তালিকা করতে এসেছিল। এর পর থেকে বিমান বন্দর-সংশ্লিষ্ট আর কেউ এখানে আসেননি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সাত-আট বছর ধরে বিমানবন্দরের জায়গা অরক্ষিত পড়ে আছে। গত বছর প্রকল্প অনুমোদনের পর একটু তোড়জোড় হলেও আবার তা ঝিমিয়ে পড়েছে। এখানে বিমানবন্দর দেখাশোনার জন্য কোনো অফিস বা লোকজন নেই। বাগেরহাট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বিমানবন্দরের জন্য ৯৪ একর জমি অধিগ্রহণ হয় ১৯৯৭ সালে। গত বছর একনেক সভায় ৫৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকার প্রকল্পটি অনুমোদনের পর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের করতে তা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত হয়। পূর্বের পাঁচ হাজার ফুট রানওয়ের বদলে সাত হাজার ফুট লম্বা রানওয়ে এবং পাশে আরও তিন হাজার ফুট রানওয়ে নির্মাণের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। চলতি মাসের শুরুতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ) একটি টিম ৫৩৬ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য সম্ভাব্য জমির মাঠপর্চা, ম্যাপ ও খতিয়ানের রেকর্ড সংগ্রহ করে নিয়ে গেছে। তবে তারা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ওই জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেয়নি। জানা যায়, বিমানবন্দর নির্মাণবিষয়ক রোডম্যাপ অনুযায়ী চূড়ান্ত নকশা অনুমোদনের পর চলতি বছরের জুন মাসে দরপত্র আহ্বান এবং আগামী আগস্ট থেকে নভেম্বরের মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগের কথা। একই সঙ্গে আগামী ডিসেম্বরে শুরু করে ২০১৮ সালের জুন মাসের দিকে বিমানবন্দরটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু শুরুতেই ধীরগতি হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প শেষ হওয়া প্রায় অনিশ্চিত। বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিমানবন্দরের জন্য জমি অধিগ্রহণ-সংক্রান্ত বিষয়ে বেসামরিক পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে কোনো প্রশাসনিক অনুমোদন বা অর্থ বরাদ্দ এখনো পাওয়া যায়নি। এটি পেলেই জমি অধিগ্রহণ শুরু হবে। তিনি বলেন, এখন যে ৯৪ একর জমি রয়েছে, সেখানে প্রশাসনিক ভবনসহ টার্মিনাল নির্মাণ করতে কোনো বাধা নেই।

এ প্রসঙ্গে জানাতে চাইলে বাগেরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দরের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে। জানা যায়, খানজাহান আলী বিমানবন্দরের জন্য ৯৪ একর জমি অধিগ্রহণের পর ১৯৯৭ সালে মাটি ভরাটের কাজ শুরু হয়। কয়েক দফা বন্ধের পর ২০০১ সালে মাটি ভরাটের কাজ ফের শুরু হলেও অর্থ বরাদ্দের অভাবে তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০১৩ সালের এপ্রিলে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) বিশেষজ্ঞদের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ দেয় বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। ওই বছরের ২৬ নভেম্বর বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে কুয়েট বিশেষজ্ঞরা তাদের প্রতিবেদন জমা দেন। ওই প্রতিবেদনে নির্মাণের যৌক্তিকতা তুলে ধরে দ্রুত প্রথম ধাপে ছোট বিমান ওঠানামার জন্য ২৫০ কোটি টাকা এবং দ্বিতীয় ধাপে পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। কুয়েট বিশেষজ্ঞদের এ দুটি প্রস্তাবনার বিষয়টি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করে। পরে এ দুটি প্রস্তাবনা একীভূত করে তৈরি করা হয় পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্প। বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ হলে বৃহত্তর খুলনায় পর্যটনশিল্পের প্রসার ঘটবে। মংলা বন্দর, ইপিজেড, চিংড়িশিল্প ও রামপাল বিদ্যুেকন্দ্র ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ হবে। ফলে জরুরি হয়ে দাঁড়াবে দ্রুত যোগাযোগ নেটওয়ার্কের। বিমানবন্দর হলে সুন্দরবন, ষাটগম্বুজ মসজিদ, খানজাহান আলীর মাজারকে কেন্দ্র করে পর্যটনশিল্পও প্রসারিত হবে।

সর্বশেষ খবর