বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

নেতৃত্বের অভাবে উন্নয়ন হচ্ছে না

অধ্যাপক নূর উন নবী

নেতৃত্বের অভাবে উন্নয়ন হচ্ছে না

আমি দিনাজপুরের মানুষ। দীর্ঘদিন ঢাকায় ছিলাম। ২০১৩ সালের ৮ মার্চ চলে আসি রংপুরে। এর পর থেকে মনে হয়েছে, নিজের জেলায়ই আছি। যেন মায়ের কোলে বাস করছি। এতে আনন্দ যেমন লাগছে, তেমনি আছে কষ্টও। কারণ এখানে উন্নয়ন যেভাবে হওয়ার কথা ছিল, তেমনটি হয়নি।

উন্নয়নের দিক থেকে দেশের সব বিভাগের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে রংপুর। রংপুরের আছে অপার সম্ভাবনা। আছে সম্পদ। সংকট শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্বের। যোগ্য নেতৃত্বের অভাবেই রংপুরে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে এমন মন্তব্য করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর উন নবী। এ শিক্ষাবিদ বলেন, সমাজবিজ্ঞানের একজন শিক্ষক হিসেবে এই পিছিয়ে থাকার প্রধান কারণ আমার কাছে যেটি মনে হয়েছে, সেটি হলো যোগ্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের অভাব। উন্নয়ন বরাদ্দ আনার মতো শক্তিশালী নেতা নেই। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মনে করেন, রংপুরে অপার সম্ভাবনা আছে। সম্পদ রয়েছে। এ সম্পদ আর সম্ভাবনা কাজে লাগানোর মতো যোগ্য দিকনির্দেশক নেই। রংপুরের উত্পাদিত খাদ্যশস্য জেলার চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। কিন্তু উত্পাদিত পণ্যের বাজার না থাকায় এখানকার কৃষকরা ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। কৃষির আধুনিকায়ন হয়নি। এখনো সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন কৃষক। কৃষিভিত্তিক শিল্প-কারখানা গড়ে তুলতে পারলে কৃষক ফসলের ন্যায্য মূল্য পেতেন। আর ন্যায্য মূল্য পাওয়ার নিশ্চয়তা পেলে উত্পাদনে আরও আগ্রহী হয়ে উঠতেন কৃষক। ড. নূর উন নবী বলেন, স্বাধীনতার ৪৪ বছরেও রংপুরে ভারী শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠেনি। রংপুরের উদ্যোক্তারা ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে গিয়ে শিল্প-কারখানা গড়ে তুলছেন। শিল্প-কারখানা না থাকায় বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে না। ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির কারণে রংপুর থেকে ‘মঙ্গা’ দূর করা সম্ভব হলেও দারিদ্র্য দূর হয়নি। এ জন্য এ অঞ্চলের মানুষকে শিক্ষিত করার পাশাপাশি দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করতে হবে। এটি করতে পারলে দূর হবে দারিদ্র্য। এই সমাজবিজ্ঞানী বলেন, রংপুর বিভাগ হওয়ার পর শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। রংপুরের মানুষ একটি বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিট, আইসিসিইউ, সিসিইউ, ট্রমা সেন্টার চালু হয়েছে। হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে পর্যাপ্ত চিকিত্সক দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ পেয়েছে অ্যাম্বুলেন্স। অনেক সরকারি দফতরের বিভাগীয় কার্যালয় চলে এসেছে এখানে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) আঞ্চলিক কার্যালয় হয়েছে। ভারতীয় ভিসা সেন্টার চালু হয়েছে। মানুষকে আর ঢাকা বা রাজশাহীতে যেতে হচ্ছে না। এতে অর্থ ও সময় দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে। অধ্যাপক নূর উন নবী মনে করেন, কোনো এলাকার উন্নয়নে রাজনৈতিক সমন্বয় ও যোগ্য নেতৃত্বের ভূমিকা জরুরি। রংপুরে এর বড়ই অভাব। সরকার কখন সাহায্য দেবে সেদিকে তাকিয়ে থাকলে তো চলবে না। রাজনৈতিক ও সামাজিক উদ্যোগে নিজেদের অধিকার আদায় করে নিতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর