বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

সোনা পাচারে ‘ট্রানজিট পয়েন্ট’ রিয়াজউদ্দিন বাজার

জড়িত অর্ধশত ব্যবসায়ী দুর্নীতিবাজ পুলিশ

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

সোনা পাচারে ‘ট্রানজিট পয়েন্ট’ রিয়াজউদ্দিন বাজার

দেশের সোনা চোরাচালানের ট্রানজিট পয়েন্টে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজার। মধ্যপ্রাচ্য থেকে সোনার অবৈধ চালান এনে তা দেশের ঐতিহ্যবাহী এ পাইকারি বাজারের বিভিন্ন গুদামে মজুদ করা হয়। পরে তা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এবং ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পাচার করা হয়। রিয়াজউদ্দিন বাজারের প্রায় ৫০ ব্যবসায়ী সোনা পাচার এবং মজুদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের এ কাজে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে স্বয়ং পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে।

সোনা চোরাচালানে কুরিয়ার হিসেবে পুলিশ সদস্যদের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে সিএমপি কমিশনার আবদুল জলিল মণ্ডল বলেন, ‘পুলিশ সদস্য পাচারকারীদের বাহক হিসেবে কাজ করে এ ধরনের কোনো তথ্য আমরা এখনো পাইনি। যদি পুলিশের কোনো সদস্য এ ধরনের অপরাধ করে থাকে তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

জানা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে বিমানযোগে সোনার চালান চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে চট্টগ্রাম নিয়ে আসা হয়। পরে সে চালান চলে যায় রিয়াজউদ্দিন বাজারের সোনা মজুদদারের কাছে। রিয়াজউদ্দিন বাজারে আসা চালানগুলোর কিছু অংশ স্থানীয় বাজার এবং ঢাকাসহ দেশের  বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হয়। তবে রিয়াজউদ্দিন বাজারের আসা চালানের সিংহভাগ চলে যায় ভারতে। সোনা আমদানিতে ভারতের কড়া অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে আসা সোনার চাহিদা বেশি। তাই রিয়াজউদ্দিন বাজারে আসা সোনা চালানের বেশির ভাগই কুমিল্লা, বেনাপোলসহ বিভিন্ন অবৈধ পথে চলে যায় ভারতে। রিয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে কমপক্ষে ৫০ জন সোনা চালানকারীর সন্ধান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের মধ্যে রয়েছেন— জসিম, হাকিম, সাত্তার, এহসান, ইকরাম, সিএনজি জসিম, আজম ওরফে হুন্ডি আজম, আজগর, কবির, বাবলা, আরিফ, জাফর, সরোয়ার, মনজু, আশিক, কাশেম, রাজ্জাক, শাহ আলম, বাবলা, সৈয়দ আলী, রহিম ওসমান প্রমুখ। অভিযোগ রয়েছে, বিমানবন্দর থেকে রিয়াজউদ্দিন বাজারে সোনা চালান আনতে ‘কুরিয়ার’ হিসেবে ব্যবহূত হন পুলিশের অসাধু কিছু সদস্য। মূলত পুলিশি ‘ঝামেলা’ এড়াতে পাচারকারীরাই পুলিশ সদস্যদের ব্যবহার করেন। সিএমপি কমিশনার আবদুল জলিল মণ্ডল বলেন, ‘রিয়াজউদ্দিন বাজারের গুটিকয়েক ব্যবসায়ী সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত এমন তথ্য রয়েছে। কিন্তু প্রমাণের অভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না। তবে তাদের কড়া নজরদারিতে রাখা হয়েছে।’ এ ব্যাপারে রিয়াজউদ্দিন বাজার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুল খালেক বলেন, ‘দু-একজন ব্যবসায়ী অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িত থাকতেই পারেন। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে তাদের দায়ভার রিয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ীরা নিতে পারে না।’

সর্বশেষ খবর