বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

‘ধনী বাংলাদেশিদের’ খোঁজে যুক্তরাষ্ট্র

ঋণ না নিয়েও সেখানে নগদ টাকায় কেনা হয়েছে বাড়ি

প্রতিদিন ডেস্ক

ঋণ না নিয়ে পুরো অর্থ নগদে পরিশোধ করে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি কেনাদের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে সে দেশের অর্থ মন্ত্রণালয় বা ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। এর মধ্যে বাংলাদেশিরাও আছেন। বিদেশ থেকে বেআইনিভাবে তথা হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ আমদানি ঠেকাতে এ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট সূত্রে জানা গেছে।

শুরুতে নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটান ও ফ্লোরিডার মায়ামি-ডেড কাউন্টিকে টার্গেট করা হয়েছে। এ দুটি স্থানে বিলাসবহুল ও বহুতল বাড়ির মূল্য সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশের অনেক রাজনীতিকও বাড়ি ও ব্যবসা কেনার মাধ্যমে গত দেড় বছরে নিউইয়র্ক, ফ্লোরিডা, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, নিউজার্সি অঞ্চলে বিপুল অর্থের বিনিয়োগ ঘটিয়েছেন। বেশ কিছু আমলাও এ ধরনের বিনিয়োগে জড়িত বলে প্রবাসীদের সন্দেহ। খবর এনআরবি নিউজের। জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কিছু বাড়ি বেচাকেনা হয়েছে নগদ মূল্যে। এ ক্ষেত্রে ক্রেতার পরিচয় গোপন রাখা হচ্ছে। এমনকি অর্থের উত্সও প্রকাশ করা হয়নি। এ নিয়ে এতদিন কারও মাথাব্যথা ছিল না। সাম্প্রতিক সময়ে রিয়েল এস্টেট সেক্টরে বিপুল নগদ অর্থের বিনিয়োগ ঘটায় কর্তৃপক্ষ অর্থের উত্স নিয়ে বিচলিত বোধ করছে। নামসর্বস্ব কোম্পানি খুলে তার বিপরীতে এসব বাড়ির দলিল সম্পাদন করা হয়েছে। এসব তথ্য উদ্ঘাটনের জন্য দলিল সম্পাদনে সম্পৃক্ত সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে রয়েছেন রিয়েল এস্টেট এজেন্ট, আইনজীবী এবং ব্যাংকার। গত বছর নিউইয়র্ক টাইমসে এ সম্পর্কে বেশ কটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিদেশে ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করে তা দিয়ে বিরাট অট্টালিকা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের মালিক হওয়া যাচ্ছে, সে ধরনের উদ্বেগজনক ও চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করে নিউইয়র্ক টাইমস। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় অর্থ পাচার করে অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দার স্ট্যাটাসও নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নগদ অর্থে বাড়ি কেনার সময় কোনো পক্ষই সে অর্থের উত্স নিয়ে মাথা ঘামাতে পারে না। এ ব্যাপারে আইনি জটিলতাও নেই। আর এ সুযোগটিই নিচ্ছে বিদেশের দুর্নীতিবাজ, চোরাকারবারি অথবা মাফিয়া চক্র। তারা কাঁড়ি কাঁড়ি ডলার এনে যুক্তরাষ্ট্রে বাজারজাত করছে। মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম এনফোর্সমেন্ট নেটওয়ার্কের পরিচালক জেনিফার সাস্কি ক্যালভেরি গভীর উদ্বেগের সঙ্গে উল্লেখ করেন, কালো টাকা যুক্তরাষ্ট্রের রিয়েল এস্টেট সেক্টরে গচ্ছিত রাখার এমন প্রক্রিয়াকে চলতে দেওয়া উচিত হবে না। এ জন্যই বিশাল অট্টালিকার মূল্য নগদে পরিশোধ করা হয়েছে, এমন সব দলিল পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাড়ি কেনাবেচায় দায়িত্ব পালনকারী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে অবিলম্বে ক্রেতার বিস্তারিত পরিচয় ও আয়ের উত্স ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টে জমা দিতে। রিয়েল এস্টেট ডাটা কোম্পানি ‘প্রপার্টি শার্ক’ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের শেষার্ধে ম্যানহাটানে ১ হাজার ৪৫টি আবাসিক ভবন বিক্রি হয়েছে যেগুলোর প্রতিটির মূল্য ৩ মিলিয়ন ডলারের অধিক ছিল। অর্থাত্ সর্বমোট সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলার নগদে পরিশোধিত হয়েছে। সে সময় ম্যানহাটানে এক বাংলাদেশিও একটি বহুতল ভবন নগদ মূল্যে কিনেছন বলে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। এফবিআইর ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম সেকশনের প্রধান প্যাট্রিক ফেলোন বলেন, বেআইনিভাবে অর্জিত অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের রিয়েল এস্টেট সেক্টরে বিনিয়োগের পথ রুদ্ধ করার এখনই সময়।

সর্বশেষ খবর