বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার গোপীনাথ দাসের প্রতিবাদ অনশন

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার গোপীনাথ দাসের প্রতিবাদ অনশন

নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সামনে গতকাল প্রতীকী অনশন করেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার গোপীনাথ দাসসহ কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

জেলা পরিষদ প্রশাসকের ‘অন্যায় আচরণে’র প্রতিবাদে জেলা পরিষদের গেটে গতকাল দুই ঘণ্টা অনশন করেছেন মুক্তিযোদ্ধা গোপীনাথ দাস। একাত্তরে তিনি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গ্রুপের কমান্ডার। সূর্য ওঠার আগেই, কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে তিনি অনশন শুরু করেন। তিনি একা বসে অনশন করছেন খবর পেয়ে অন্য মুক্তিযোদ্ধারা তার সঙ্গে একাত্ম হন।

কমান্ডার গোপীনাথের ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ অবস্থান দেখার জন্য বেশ কিছু লোক সেখানে ভিড় জমায়। প্রতিবাদী হিসেবে তিনি স্বনামখ্যাত। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠে তিনি ১৯৭৫ সালে দাড়ি-গোঁফ রাখা শুরু করেছিলেন। সেই দাড়ি-গোঁফ এখনো বজায় রেখেছেন। একা কেন এ প্রতিবাদে নামলেন? জবাবে কমান্ডার গোপীনাথ দাস বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের অন্যায় আচরণের বিচার না পাওয়ায় তিনি আজ অনশনের পথ বেছে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “কিছু দিন আগে জেলা পরিষদ মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও সম্মাননা চেক প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ওই অনুষ্ঠানে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত অনেককেই বিশেষ অতিথি করা হয়। অথচ অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে দাওয়াত করা হয়নি। দাওয়াত না পেলেও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অনুষ্ঠান বলেই আমি সেখানে যাই। সেখানে আমি বলেছিলাম, জিয়াউর রহমান শুধু বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকারী নন, তিনি শত শত মুক্তিযোদ্ধা অফিসারকেও হত্যা করেছেন। তিনি কখনো স্বাধীনতার ঘোষক নন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির দুজন উপজেলা চেয়ারম্যান, তারা আমার বক্তব্যের কোনো প্রতিবাদ করেননি। অথচ প্রতিবাদ করলেন আওয়ামী লীগের লেবাস ধারণ করে জেলা পরিষদের প্রশাসক হওয়া আবদুল হাই। তিনি জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে মেনে নিয়ে আমাকে ‘পাগল’ আখ্যা দিয়েছেন। নিজেকে আওয়ামী লীগের লোক বলে দাবি করেন যে আবদুল হাই তিনি কী করে জিয়াউর রহমানের পক্ষে কথা বললেন!” কমান্ডার গোপীনাথ বলেন, ‘প্রশাসকের অন্যায় আচরণের বিচার দাবি করেছিলাম আওয়ামী লীগের সব নেতার কাছে। কিন্তু তা আমি পেলাম না। তাই একাই প্রতিবাদ করছি। আক্ষেপ হয়, এই আবদুল হাইকে দেখি মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বলে দাবি করেন। এই আবদুল হাই ’৭৫-পরবর্তী সময়ে খন্দকার মোশতাক ও শাহ মোয়াজ্জেমের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন। ১/১১-পরবর্তী সময়ে নারায়ণগঞ্জের পাশের এক এলাকার এমপিকে নিয়ে ঢাকার র্যাডিসন হোটেলে বসে কিংস পার্টি করতে জেনারেল বারীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। রূপগঞ্জের এক অবসরপ্রাপ্ত মেজর ওই বৈঠকের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। আর আমরা বঙ্গবন্ধুর ডাকে যুদ্ধ করেছি, ’৭৫-এর পর গ্রেফতার হয়েছি, জেল খেটেছি, ২০০১-এর পর ঘরছাড়া হয়েছি।’ কমান্ডার গোপীনাথ একা অনশন করছেন— খবর পেয়ে তার পাশে ছুটে এসেছিলেন বয়সের ভারে ন্যুব্জ আরও অনেক মুক্তিযোদ্ধা। তাদের মধ্যে ছিলেন আলী আক্কাস, সামির আলী, আবদুল আজিজ ও মো. মান্নান মিয়া।

সর্বশেষ খবর