মংলা বন্দর ঘিরে একসময় ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে উঠেছিল। শিল্পনগরী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছিল খুলনা। অনেক পালাবদলের পর আবার সেই মংলা বন্দরকে ঘিরেই দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হতে যাচ্ছে খুলনা। আঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোন করার চিন্তাভাবনা চলছে খুলনাকে নিয়ে। এ ভাবনা বাস্তবে রূপ দেওয়া জরুরি। মংলা বন্দরকে করা হচ্ছে আধুনিক ও ব্যবহার-উপযোগী। ভারত-নেপাল-ভুটান এই বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে আগ্রহ জানিয়েছে। এসব কারণে খুলনা চলে এসেছে ‘অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ’ একটা জায়গায়। পদ্মা সেতু, রেলপথ, মংলা বন্দর ঘিরে খুলনায় অর্থনৈতিক ঊর্ধ্বমুখী অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির। এই অর্থনীতিবিদের মতে, খুলনায় ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অগ্রগতির যে আশাবাদ তৈরি হয়েছে, তা মূলত পদ্মা সেতুকেন্দ্রিক। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে ভারত, নেপাল ও ভুটান মংলা বন্দর ব্যবহার করবে। পাশাপাশি পায়রা বন্দর চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে খুলনা। পদ্মা সেতু চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ঢাকার সঙ্গে হারানো ‘লিংকেজ’টা পুনরুদ্ধার হবে। অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, ষাটের দশক পর্যন্ত খুলনার ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল পাটকলনির্ভর। এরপর এখানে পাওয়ার প্লান্ট, হার্ডবোর্ড মিল তৈরি হয়। সত্তরের দশক থেকে পাটকেন্দ্রিক ব্যবসায় মন্দা ভাব শুরু হলেও তত দিনে বাণিজ্যের অন্য ক্ষেত্র চালু হয়ে যায়। তিনি বলেন, খুলনা-ঢাকা ব্যবসায়িক রুট পরিবর্তন হয়ে তা ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রামমুখী হয়ে পড়ে। যমুনা সেতু হওয়ার পর তা ছড়িয়ে পড়ে উত্তরবঙ্গ পর্যন্ত। কিন্তু এবার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে আবারও পটপরিবর্তন হতে শুরু করেছে খুলনা ঘিরে। অর্থনীতিবিদ আনেয়ারুল কাদির বলেন, ভারতের কলকাতা সমুদ্রবন্দরের একটা অংশ ইতিমধ্যে ভরাট হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে। অন্য অংশের ওপর চাপও অনেক বেড়েছে। তাই ভৌগোলিকভাবে মংলার গুরুত্ব বেড়ে গেছে। ভারত-নেপাল-ভুটান এই বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি শুরু করলে বেসরকারি বিনিয়োগও আসতে থাকবে। তিনি বলেন, খুলনা থেকে যশোরের নওয়াপাড়া অঞ্চলে ঐতিহাসিকভাবেই বাণিজ্যের একটা শক্ত ভিত রয়ে গেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে দিন দিন এটি প্রসারিত হতে থাকবে। অর্থনীতির এই অধ্যাপক বলেন, অদূরভবিষ্যতে মংলা বন্দর ঘিরে যে অর্থনৈতিক স্থাপনা হবে, তাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমার জুড়ে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আসবে। তখন এ জায়গার অর্থনৈতিক উষ্ণতা আর কখনো কমবে না।