শনিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

নামছে এভিয়েশন সিকিউরিটি ফোর্স

ঝুঁকিতে বিমানবন্দর

মির্জা মেহেদী তমাল

নামছে এভিয়েশন সিকিউরিটি ফোর্স

ব্রিটিশ এভিয়েশন ফোর্সের আদলে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় নামছে এভিয়েশন সিকিউরিটি ফোর্স (এভসেক)। বিমানবাহিনী, পুলিশ ও র‌্যাবের চৌকস কর্মকর্তাদের নিয়ে এ বিশেষ বাহিনী গঠন করা হচ্ছে। আনসার বাহিনীর সদস্যরাও নতুন এ নিরাপত্তাবাহিনীতে থাকছেন। শিগগির এ বাহিনীকে বিমানবন্দরে দেখা যাবে। পরীক্ষামূলকভাবে ১০০ সদস্যের একটি বিশেষ বাহিনী আগামী সপ্তাহেই বিমানবন্দরে নামছে। তাদের প্রশিক্ষণ শেষ পর‌্যায়ে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেছে, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নিয়ন্ত্রণে থাকবে এ বাহিনী। এভিয়েশন নিরাপত্তা বিষয়ে আন্তর্জাতিকমানের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এ বাহিনীর সদস্যদের। কারিগরি বিষয় দেখভাল করবেন বিমানবাহিনীর সদস্যরা। এ ছাড়া সিকিউরিটি  ফোর্সের অন্য সদস্যরা বিমানবন্দরের বহির্গমন ও ট্রানজিট যাত্রীদের তল্লাশি, লাগেজ স্ক্যানিং ও মনিটর করবেন। বহির্গমন যাত্রীদের ইমিগ্রেশন কার্যক্রমও তদারক করবেন ফোর্সের কারিগরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্যরা। নতুন এ বাহিনীর জন্য থাকবে আকর্ষণীয় পোশাক। থাকবে অত্যাধুনিক অস্ত্র ও নিরাপত্তাবিষয়ক সরঞ্জাম।

জানা গেছে, মিসরে একটি রাশিয়ান বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর পৃথিবীর বেশ কিছু দেশের বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ঝুঁকির তালিকায় বাংলাদেশের নাম রয়েছে। এর কিছুদিন পরই শাহজালাল বিমানবন্দর পরিদর্শন করে ব্রিটিশ এভিয়েশন টিম। ওই টিমের প্রতিবেদনে বলা হয়, শাহজালালের নিরাপত্তাব্যবস্থা খুবই দুর্বল। ত্রুটিপূর্ণ স্ক্যানিং মেশিন ও অজ্ঞ অপারেটরকে ফাঁকি দিয়ে যে কোনো সময় বোমা কিংবা ধ্বংসাত্মক বস্তু অন্য দেশে চলে যেতে পারে। এ ছাড়া অপ্রতুল নিরাপত্তা ও বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশের অজুহাতে বিমানে কার্গো নেওয়া বন্ধ করে দেয় অস্ট্রেলিয়া। এতে কাতার, এমিরেটস, সিঙ্গাপুর, ক্যাথে প্যাসিফিক ও মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসসহ বেশ কয়েকটি বিদেশি এয়ারলাইনস ও এয়ার ফ্রেইট বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়াগামী কোনো পণ্য নিচ্ছে না। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তার মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে বুধবার নিজ কার‌্যালয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশ দেন। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী ফ্লাইট ও যাত্রীদের নিরাপত্তা নির্বিঘ্ন করতে এবং বিমানবন্দরের নিরাপত্তার স্বার্থে গঠন হবে একটি বিশেষ নতুন এভিয়েশন নিরাপত্তাবাহিনী। তবে জনবল এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। এটি হবে আন্তর্জাতিকমানের একটি নিরাপত্তাবাহিনী। যতদিন এ বাহিনী গঠন না হচ্ছে, ততদিন বিশেষ বাহিনী বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। সিভিল এভিয়েশনের এক কর্মকর্তা বলেন, ব্রিটিশ সরকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে নানা প্রশ্ন তোলার পর প্রধানমন্ত্রীর কার‌্যালয়ে বিমানবন্দর নিরাপত্তাসংক্রান্ত এক বিশেষ সভা হয়। সভা সিভিল এভিয়েশনের অর্গানোগ্রামে নতুন একটি বাহিনী গঠনের প্রস্তাব করে। তাদের প্রস্তাবের আদলে বাহিনী গঠন করে বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। এতে একসঙ্গে সব দিক রক্ষা হবে। এ ধরনের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন বাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। তিনি বলেন, এ জন্য জনবলের অনুমোদন চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তা এখনো অনুমোদন হয়নি। বিমানবন্দর নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট সিভিল এভিয়েশনের আরেক কর্মকর্তা বলেন, বিমানবন্দরের নিরাপত্তার জন্য দ্রুত একটি বাহিনী এভিয়েশন সিকিউরিটি ফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। যতদিন এ বাহিনী গঠন না হবে ততদিন বিভিন্ন বাহিনীর ২৫০ জন সদস্য বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। ইতিমধ্যে ১০০ জনের একটি দলের প্রশিক্ষণ শেষ পর‌্যায়ে। সূত্র জানায়, সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে পড়ায় সরকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। তার ওপর যুক্তরাজ্য শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারা সরাসরি সরকারকে বলেছে, শাহজালালের নিরাপত্তা বাড়ানো না হলে তারা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ঢাকা-লন্ডন রুটে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে। তারা বলেছে, ফ্রান্সে জঙ্গি হামলার পর তাদের দেশেও হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। যেসব দেশ থেকে উড়োজাহাজ সরাসরি যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে অবতরণ করে সেখান থেকেও হামলা হতে পারে। এ ধরনের আশঙ্কা মাথায় রেখেই ব্রিটিশ ডিপার্টমেন্ট ফর ট্রান্সপোর্টেশনের কর্মকর্তারা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। পরে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের সঙ্গে বৈঠক করে নিরাপত্তা জোরদারের কথা বলেছেন। ফলে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। সূত্র জানায়, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষণ ও রিপোর্টের আলোকে সরকার আগামী তিন মাসের মধ্যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তা বাড়ানোর লক্ষ্যে ফ্লাইট সেফটি বিভাগকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় এভিয়েশন সিকিউরিটি ফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত ছাড়াও অযোগ্য, অদক্ষদের সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। দক্ষ কর্মী ও জনবল নিয়োগের পাশাপাশি উন্নত যন্ত্রপাতির মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্যোগও নেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর