শনিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

অস্থির চালের বাজার

মোস্তফা কাজল

অস্থির চালের বাজার

বাজার দর

হঠাত্ অস্থির রাজধানীর চালের বাজার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৫-৬ টাকা বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। যদিও চালের এ বাড়তি মূল্য কৃষকের ঘরে যাচ্ছে না। মধ্যস্বত্বভোগীরা হাতিয়ে নিচ্ছেন বাড়তি অর্থ। অভিযোগ রয়েছে, কৃষকের কাছ থেকে নানা কৌশলে চাল কিনে নিয়ে মধ্যস্বত্বভোগীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বাড়াচ্ছেন। বড় বড় রাইস মিলের মালিকরা এ সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে। তবে চালের দামের এ হঠাত্ বৃদ্ধির জন্য আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি সরকারি গুদামে চাল সংগ্রহ কর্মসূচিকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া বাজারে সবজি ও মাছের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। পাশাপাশি ভোজ্যতেলের দাম লিটারে ১-২ টাকা কমেছে। রসুনের দাম কেজিতে ৮-১০ ও চিনির দাম ২-৩ টাকা বেড়েছে।

ব্যবসায়ীদে সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার খুচরা বাজারে জানুয়ারির শুরুতে প্রতি কেজি মিনিকেট চালের দাম ছিল ৪২-৪৪ টাকা। বর্তমানে এ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬-৪৮ টাকায়। ওই সময়ে প্রতি কেজি বিআর-২৮ বিক্রি হচ্ছিল ৩২-৩৪ টাকায়। বর্তমানে ৩৬-৩৮ টাকা। নাজিরশাইলের কেজি ৪৬ থেকে বেড়ে ৪৮-৫০ টাকা হয়েছে। চালের দাম বাড়ার জন্য খুচরা বিক্রেতারা মোকামে দাম বেড়ে যাওয়াকেই কারণ হিসেবে দেখাচ্ছেন। তাদের বক্তব্য, বেশি দামে কিনতে হয় বলেই বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। অবশ্য পাইকাররা এ জন্য দায়ী করেন মিল মালিকদের। তার সঙ্গে যুক্ত করেন ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি আর চটের বস্তা বাধ্যতামূলক করার কথাও। রাজধানী ঢাকার মিরপুর বাজার ও বাদামতলী এলাকার পাইকারি চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক সপ্তাহ আগেও ৫০ কেজির প্রতি বস্তা মিনিকেট চালের দাম ছিল ১ হাজার ৯০০ থেকে ২০০০ টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২০০ থেকে ২২৫০ টাকা। অর্থাত্ কেজিপ্রতি চালের দাম পাইকারি বাজারেই বেড়েছে ৪ থেকে ৬ টাকা।

চালকল মালিকদের কাছেও অজুহাতের কমতি নেই। তাদের দাবি, ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে চালের দাম। তারা জানান, এক মাসে হাইব্রিড ছাড়া অন্যান্য ধানের দাম মণপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। এক মাস আগে বিআর-২৮ ও বিআর-২৯ ধানের দাম ছিল প্রতি মণ ৫৫০ থেকে ৫৬০ টাকা। বর্তমানে তা ৬৩০ থেকে ৬৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চালের বাজার অস্থির হওয়ার জন্য সরকারি গুদামে চাল সংগ্রহের নামে দুর্নীতি ও অনিয়মকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিযোগ, সরকারি গুদামে চাল সরবরাহের জন্য লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক হওয়ায় বাইরের লোকজন কাগজে-কলমে চাল সরবরাহ করতে পারছেন না। তাদের অভিযোগ, চাল সংগ্রহের নামে সারা দেশে মিল মালিকরা প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন। সারা বছর যারা এ মৌসুমের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এতে মানসম্পন্ন চাল সংগ্রহ কার্যক্রম মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। মিল মালিকরা আরও জানান, গত বোরো মৌসুমে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা চাপ দিয়ে তাদের কাছ থেকে প্রতি কেজিতে দুই থেকে আড়াই টাকা কমিশন নিয়েছিলেন। এবার আমন মৌসুমে আড়াই থেকে তিন টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। এ ছাড়া সবজি ও মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি আলু ১৫-১৬, পটোল ৩০, টমেটো ১৫, পেঁপে ২০, বেগুন ২৫, বাঁধাকপি ১৫-২০ এবং প্রতিটি ফুলকপি ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া খোলা বাজারে সব ধরনের শাকের দাম বেড়েছে। মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক কুড়ি (বড়) কই ২০০, প্রতি কেজি শিং ৩৫০-৫০০, আইড় ৪০০, পাঙ্গাশ ১৫০, পুঁটি ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর