শনিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

না খেয়ে দিন কেটেছে কথা বললেই মারপিট

সায়েদ জালাল উদ্দিন, কক্সবাজার

না খেয়ে দিন কেটেছে কথা বললেই মারপিট

থাইল্যান্ড-ফেরত কক্সবাজারের যুবক দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছে, মানব পাচারকারী দালালরা দিনের পর দিন তাকেসহ অন্যদের না খাইয়ে রেখেছে। খাবার চাইলেই করেছে মারধর।

দেলোয়ার হোসেন দালালদের সহায়তায় কাজের সন্ধানে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাকে মালয়েশিয়ার বদলে থাইল্যান্ডে আটকে রেখে পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দালাল চক্র। একপর‌্যায়ে থাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় সে দেশে ফিরতে পেরেছে। থাইল্যান্ডে ১০ মাস ১০ দিন আটকে থাকার পর ২৫ জানুয়ারি দেশে ফেরে দেলোয়ার। তার বাড়ি কক্সবাজার সদরের ইসলামপুরের নতুন অফিসপাড়া এলাকায়। বয়স আঠারো পেরিয়ে উনিশ ছুঁইছুঁই। বাবা ফরিদুল আলম ক্ষুুদ্র লবণ চাষি। ছয় ভাই ও দুই বোনের মধ্যে দেলোয়ার পঞ্চম। বাড়ির ছোটখাটো কাজকর্ম করত। চালাক-চতুরতায় কোনো অংশে পিছিয়ে ছিল না। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই ফাঁদে পড়ে যায় দালাল চক্রের। এদের প্রলোভনে আকৃষ্ট হয়ে সে উঠে পড়ে দালালের নৌকায়। এভাবেই শুরু হয় ঘটনা। দেলোয়ার জানায়, দালালদের কথামতো প্রথমে সে বাড়ি থেকে যায় চট্টগ্রাম। সেখান থেকে পরদিন ভোরে বাসে করে টেকনাফ। প্রায় দুই ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে গ্রামের পথ দিয়ে যেতে হয় দালালদের আস্তানায়। দেলোয়ার বলে, “সেখানে যেতেই আমাদের তল্লাশি করে যার যা ছিল সব ছিনিয়ে নেয় দালালরা। আমার পকেটে থাকা ৫০০ টাকাও নিয়ে নেয়। হাতে ‘এইচ-১৫’ নম্বর লাগানো হয়। সেখান থেকে আনুমানিক এক ঘণ্টার পথ পায়ে হাঁটিয়ে একটি বাড়িতে নিয়ে বন্দী করা হয়। ওই বাড়িতে ৩৬ জনের মতো লোক বন্দী ছিলাম। এর এক দিন পর আমাদের স্যানডেল, জামাকাপড়সহ সব খুলে নেওয়া হয়। পরনে হাফপ্যান্ট ছাড়া কিছুই রাখতে দেয়নি। আমাদের লাইনে দাঁড় করিয়ে সামনে দৌড়াতে বলা হয়। লাইনে ১০ জন পরপর একজন লাঠিয়াল ছিল। প্রায় চার ঘণ্টা পর্যন্ত সামনে দৌড়ালাম। দেলোয়ার জানায়, ‘ খবর আসে পুলিশ আসছে। দালালরা তখন পালিয়ে যায়। এরপর একে একে সবাই আটক হয় পুলিশের হাতে। তারা আমাদের উদ্ধার করে একটি স্কুলের মাঠে নেয়। সেখান থেকে একটি ক্যাম্পে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তারপর সেখান থেকে আদালতে নেওয়া হয়। শুনানি শেষে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ৪ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ২০ দিন কারাদণ্ডাদেশ দেন সে দেশের আদালত। আমাদের কোনো টাকা ছিল না বিধায় ২০ দিন কারাভোগ করি। ২০ দিন পর মুক্তি পেলে সাদাউ ইমিগ্রেশনে নেওয়া হয়। সেখান থেকে দুই দিন পর প্রায় ২০ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে পাঙ্গানো ইমিগ্রেশন সেন্টারে রাখা হয়। আট মাস অর্থাত্ ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেখানে ছিলাম। সেখান থেকে ১৩ ডিসেম্বর আমাদের ব্যাংকক নিয়ে যাওয়া হয়। দুই দিন পর বাংলাদেশের অ্যাম্বাসির লোকজন এসে হেফাজতে নেন। ২৫ জানুয়ারি রাতে আমাকে দেশের মাটিতে পা রাখার সুযোগ করে দেওয়া হয়।’

সর্বশেষ খবর