কোনো মর্যাদাই পেলেন না তিন সিটি করপোরেশনের মেয়ররা। নানা জটিলতায় আটকে আছে তাদের প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা দেওয়ার প্রস্তাব। নির্বাচিত তিন সিটির মেয়র আনিসুল হক, সাঈদ খোকন এবং আ জ ম নাছির উদ্দিনের দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় ১০ মাস অতিবাহিত হলেও তাদের পদমর্যাদার বিষয়ে এখনো কোনো সুরাহা হয়নি। আমলাতন্ত্রের লাল ফিতায় আটকে আছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রের পদমর্যাদার বিষয়টি। অবশ্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এ বিষয়ে তাদের কাছে এখনো সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেলে তারা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেয়রদের পদমর্যাদা ঠিক না হওয়ায় সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠানে মেয়ররা কী ধরনের প্রটোকল পাবেন তা নিয়ে। এ ক্ষেত্রে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সি অনুযায়ী, মেয়ররা মন্ত্রী, না প্রতিমন্ত্রী, নাকি এমপিদের চেয়ারের পরে বা আগে বসবেন, এ নিয়ে জটিলতা দেখা দিচ্ছে প্রায়ই। এতে একদিকে অনুষ্ঠানের আয়োজকপক্ষ যেমন দ্বিধায় ভোগে, তেমনি খোদ মেয়ররাও পড়েন বিব্রত পরিস্থিতির মুখে। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতেও এ সমস্যার সমাধান হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ সম্পর্কে তার কিছুই জানা নেই। এটি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, ‘মেয়র পদটি নিজেই একটি মর্যাদাসম্পন্ন পদ। ফলে আমি আমার অবস্থানে অত্যন্ত প্রশান্তি নিয়ে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছি। এ ক্ষেত্রে প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার স্বীকৃতি না পেলেও দায়িত্ব পালনে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’ পদমর্যাদা অর্জন করার চেষ্টাও করছেন না বলে জানান এই মেয়র। তবে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই ভালো জানেন বলে মনে করেন আনিসুল হক। জানা গেছে, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সিতে মেয়রদের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী মর্যাদা দেওয়া হয়নি। রাষ্ট্রপতির আদেশে অবিভক্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়ররা আগে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা ভোগ করতেন। কিন্তু বিগত মহাজোট সরকারের সময় এ আদেশ বাতিল করার পর এসব সিটি করপোরেশনের মেয়ররা আর প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পাচ্ছেন না। এখন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রামের নির্বাচিত মেয়রদের মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হবে কি না, এ বিষয়টিও ঝুলে আছে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ব্যবসায়ী নেতা আনিসুল হক এবং দক্ষিণে সরকার সমর্থিত প্রার্থী সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন নির্বাচিত হন। অন্যদিকে চট্টগ্রামে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাবেক ছাত্রনেতা আ জ ম নাছির উদ্দিন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তিন সিটি করপোরেশনের মেয়রদের মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তাদের আদৌ এ মর্যাদা দেওয়া হবে কি না তা নিশ্চিত নয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এ তিনজনকে মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দিলে অন্য সিটি করপোরেশনের মেয়রদেরও একই মর্যাদা দিতে হবে। তবে এ সিদ্ধান্ত একেবারেই সরকারের উচ্চপর্যায়ের। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানায়, মেয়রদের প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি রাষ্ট্রপতির একান্ত এখতিয়ার। তবে এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী যদি মেয়রদের প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করেন, সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত দেবেন। আর রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের আগে এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি মনে করি এটি তাদের দেওয়া উচিত। কেননা মেয়রদের প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা দিলে তারা আরও সম্মানিত বোধ করবেন। এতে তাদের কাজের গতি আরও বৃদ্ধি পাবে।’ অন্যদিকে একটা বিতর্কেরও অবসান ঘটবে বলে মনে করেন তিনি।