বুধবার, ২ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

শিশুদের ব্রেন ক্যান্সার ও চোখের সমস্যা বাড়ছে

প্রতি ১০ লাখে আট শিশুর ক্যান্সার

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। প্রায় ৬ কোটি ২০ লাখ শিশুর মধ্যে প্রতি ১০ লাখে ৮টি শিশুই ক্যান্সারে আক্রান্ত। বিশেষ করে শিশুরা রেটিনোব্লাস্টোমায় (চোখের ক্যান্সার) আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। দেশে ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুর প্রায় ২৫ শতাংশই এ ক্যান্সারে আক্রান্ত। এ ছাড়া গত ১০ বছরে শিশুদের মস্তিষ্কের ক্যান্সারও বেড়েছে ৯০০ গুণ। বাংলাদেশের একদল গবেষক তাদের নিজস্ব উদ্যোগে প্রথমবারের মতো শিশুদের ক্যান্সার নিয়ে করা একটি গবেষণায় এটা পেয়েছেন। গবেষণাটি চালানো হয় ১০ বছরে ২০টি হাসপাতালে ক্যান্সারের চিকিৎসা নিতে আসা ৩ হাজার ২০০ শিশুর ওপর। সম্প্রতি যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় জার্নাল ‘বিএমসি ক্যান্সার’-এ তাদের গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন মিরপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেসের ক্যান্সার গবেষক মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন ও নেদারল্যান্ডসের ইরাসমাস এমসি ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের গবেষক হেনরিকা করিম কস। এ দুজনসহ গবেষণা দলে দেশি-বিদেশি মোট ১১ জন সদস্য ছিলেন। গবেষক মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন ও দলের আরেক সদস্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির হিমু জানান, তিন বছর ধরে ২০টি হাসপাতালের ১০ বছরের তথ্য সংগ্রহ করে তারা গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, বাংলাদেশের প্রতি ১০ লাখ শিশুর মধ্যে ৮টি ক্যান্সারে আক্রান্ত। যদিও গবেষকরা বলছেন, এর প্রকৃত হার আরও অনেক বেশি। কেননা, হাসপাতালগুলোয় ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুর রেজিস্ট্রির সঠিক তথ্য না থাকায় তারা গবেষণা ক্ষেত্রে প্রকৃত সংখ্যা পাননি। এ ছাড়া ক্যান্সার নিয়ে সঠিক ধারণা না থাকাসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও ক্যান্সার নির্ণায়ক যন্ত্রপাতির অভাবে এবং অভিভাবকদের অসচেতনতার কারণে সঠিকভাবে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ও হার নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে না। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে প্রতি বছর ৭৬, ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ২৪৭ ও ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৩৬৯টি শিশু ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসে। গবেষকরা বলেন, এতদিন মনে করা হতো লিম্ফোমা, নেফ্রোব্লাস্টোমা শিশুদের প্রধান ক্যান্সার। কিন্তু গবেষকদের এই বড় পরিসরের গবেষণায় দেখা গেছে, রেটিনেব্লাস্টোমাই শিশুদের প্রধান ক্যান্সার। ২০১১-১৪ সালের গবেষণালব্ধ তথ্যানুযায়ী দেশের মোট ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুর প্রায় ২৫ শতাংশই এ ক্যান্সারে আক্রান্ত। গবেষকরা মনে করছেন, সচেতনতা না থাকায় শিশুরা এ ক্যান্সারে প্রাণ হারায়। অথচ শুরুতে নির্ণয় করতে পারলে ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে এ ক্যান্সার পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব। শিশুদের নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করালে এ ক্যান্সার নির্ণয় ও সে অনুসারে চিকিৎসা সম্ভব। গবেষণা অনুযায়ী লিউকেমিয়া আক্রান্তের হার এসেছে দ্বিতীয় স্থানে। সাধারণত, এ ক্যান্সারে আক্রান্তরাও বুঝতেই পারে না যে তারা ক্যান্সারে আক্রান্ত। অনেক সময় মাসের পর মাস জ্বর নিয়ে ভুগে শিশু মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। যদি প্রচার করা যায় তাহলে এ ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশুর মৃত্যুহার কমানো সম্ভব হবে মনে করেন গবেষকরা। শিশুদের জন্য আরেক ভয়ঙ্কর হাড়ের ক্যান্সার। এটি ১০-১৪ বছরের শিশুদের বেশি হয়। এর লক্ষণও ভয় পাওয়ার মতো নয়। হাড়ে ব্যথার কথা বলে শিশুরা। অনেক অভিভাবক বিষয়টি আমলে নেন না। পরে তা মারাত্মক আকার ধারণ করলে আর কিছুই করার থাকে না। গবেষণায় অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে এসেছে। তা হলো, শিশুদের মস্তিষ্ক বা ব্রেনের ক্যান্সার। গেল ১০ বছরে তা প্রায় ৯০০ গুণ বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে গবেষকরা মনে করছেন, ব্রেন ক্যান্সার নির্ণয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা আগের তুলনায় সহজলভ্য হওয়ায় এ ক্যান্সার আক্রান্তদের সংখ্যা নির্ণয় হচ্ছে বেশি। এর আগে লিম্ফোমা প্রধান ক্যান্সার মনে করা হলেও এখন তা পাঁচ নম্বরে চলে এসেছে। এ ধরনের ক্যান্সার প্রায় ৮৫ শতাংশ কমেছে। গবেষণায় আরও এসেছে, কেবল রাজধানী ঢাকায় শিশুর ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসার সুযোগ আছে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্যান্সার আক্রান্তই বাইরে অবস্থান করে। ফলে তাদের জন্য ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসা করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তা ছাড়া ক্যান্সার আক্রান্তের জন্য প্রয়োজনীয় বেড ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অপ্রতুল। যেহেতু ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে তাই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে এখনই। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরির পাশাপাশি বেডের সংখ্যা বৃদ্ধি, রোগ নির্ণয় সহজীকরণ, ঢাকার বাইরে চিকিৎসার সুবিধা সহজীকরণের জন্য সুপারিশ করেছেন গবেষকরা।

সর্বশেষ খবর