দেশের শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিমুখী জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড শিপবিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিজ অব বাংলাদেশ (এইওএসআইবি) ১০ হাজার যুবককে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জাহাজ নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন সাধন ও আত্মনির্ভরশীল যুবসমাজ তৈরি করতে স্কিল ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইআইপি) নামে প্রকল্পের আওতায় ২০১৭ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে উল্লেখিত সংখ্যক কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রণালয়ের যৌথ অর্থায়নে ৩০ কোটি টাকার এ প্রকল্প কাজ শুরু হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এইওএসআইবি সূত্রে জানা গেছে, দেশের ১২টি শিপবিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিতে যে কোনো এলাকার ১৮ থেকে ৩০ বছরের অষ্টম শ্রেণি পাস যুবক নবাগত প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে কাজে যোগ দিতে পারবে। তাদের প্রত্যেককে তিন হাজার টাকা হারে মাসিক বৃত্তিও প্রদান করবে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ২০ থেকে ৪৫ বছর বয়সী কর্মরত শ্রমিকদের আরও দক্ষ করতে দুই সপ্তাহব্যাপী দেড়হাজার টাকা বৃত্তিদানের ভিত্তিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের আওতায় এক হাজার কর্মীর প্রশিক্ষণ চলছে। মূলত ওয়েল্ডিং অ্যান্ড ফেব্রিকেশন, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড নেভিগেশন ইক্যুইপমেন্ট ইন্স্টলেশন এবং মেশিন টুল্স অপারেশন এই তিনটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।
এইওএসআইবির প্রধান সমন্বয়ক ক্যাপ্টেন হাবিবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এটা সরকারের একটি মহৎ উদ্যোগ। প্রকল্পের আওতায় হাতে-কলমে যারা প্রশিক্ষণ নেবেন, তারা দেশের যে কোনো শিপবিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে পারবেন। এছাড়া দক্ষকর্মীরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ ধরনের বিদেশি ইন্ডাস্ট্রিতেও ভালো বেতনের চাকরির সুযোগ পাবেন। তৈরি পোশাকের পরে দেশের দ্বিতীয় রপ্তানিমুখী শিল্প হিসেবে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ও সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে এইওএসআইবির সমন্বয়ক (অর্থব্যবস্থাপনা) মো. ওমর ফারুক মল্লিক বলেন, এটা সরকারের ভিশন টুয়েন্টি-টুয়েন্টি ওয়ানের একটি প্রকল্প। বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উন্নীত করতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের এটি একটি অন্যতম উদ্যোগ। জাহাজ নির্মাণ শিল্পে দক্ষ জনবল তৈরি, উত্পাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধি করে দেশীয় অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করা এবং বেকার যুবসমাজকে কর্মমুখী করাই প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য বলে জানান তিনি। এসইআইপি সূত্র জানায়, ওয়েল্ডিং অ্যান্ড ফেব্রিকেশন বিষয়ে যারা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন তাদের সনদ প্রদান করবে জার্মানির ডিএনভি. জিএল। প্রশিক্ষণার্থীদের পরীক্ষাগ্রহণের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক এই জার্মান প্রতিষ্ঠানটি যোগ্যতার সনদ প্রদান করবে। এছাড়া ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড নেভিগেশন ইক্যুইপমেন্ট ইন্স্টলেশন এবং মেশিন টুল্স অপারেশন বিষয়ে প্রশিক্ষণার্থীদের যোগ্যতার সনদ দেবে বাংলাদেশ সরকার।
যে সনদ দেশি-বিদেশি যেকোনো জাহাজ নির্মাণ শিল্পে গ্রহণযোগ্য হবে। দেশের যে সব শিপবিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে সেগুলো হচ্ছে—চট্টগ্রামের ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, ওয়েস্টার্ন মেরিটাইম ইনস্টিটিউট, ইউসেপ, দেশ শিপবিল্ডিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ওশান ইলেকট্রিক্যাল লিমিটেড, এবিসি বাংলাদেশ-তুরস্ক টেকনিক্যাল স্কুল, এমএফসি ডকইয়ার্ড লিমিটেড, ঢাকার খান ব্রাদার্স শিপবিল্ডিং লিমিটেড, নারায়ণগঞ্জ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড শিপবিল্ডিং, রেডিয়েন্ট শিপইয়ার্ড লিমিটেড, মেঘনা শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ডকইয়ার্ড এবং আনন্দ শিপইয়ার্ড অ্যান্ড শিপওয়েস লিমিটেড।