রবিবার, ১৩ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

মিনিস্টার, আই হ্যাভ এ কোয়েশ্চেন

সড়ক ও সেতুমন্ত্রীকে এক ছাত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী শামসুন্নাহার শতাব্দী। দুপুরের তপ্ত রোদে ক্লান্ত শতাব্দী গতকাল স্কুল শেষে বাস না পেয়ে মহাসড়কের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। এ সময় সেখানে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মিটার ছাড়া সিএনজি অটোরিকশা ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছিলেন। অভিযান শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলেন মন্ত্রী। মন্ত্রীকে দেখে থেমে যায় শতাব্দী। সাংবাদিকরা তখন মন্ত্রীকে ঘিরে রেখেছিলেন। সাংবাদিকদের জটলার পাশে অপেক্ষা করছিল মেয়েটি। সাংবাদিকদের প্রশ্ন শেষ হতেই শতাব্দী ইংরেজিতে হাত উঠিয়ে মন্ত্রীর উদ্দেশে বলে ওঠে, ‘মিনিস্টার ওবায়দুল কাদের! আই হ্যাভ এ কোয়েশ্চেন!’ রোদের তাপ থেকে বাঁচতে নীল-সাদা স্কুল ইউনিফর্ম পরিহিত শতাব্দীর মাথায় ছিল নীল টুপি। কাঁধে ভারী স্কুলব্যাগ। কিন্তু গতকাল হঠাৎ মন্ত্রীকে দেখে ছোট্ট এ মেয়েটি তার দুর্ভোগের কথা ওবায়দুল কাদেরের কাছে তুলে ধরে। শতাব্দীর কথা শুনে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সেখানে উপস্থিত সবাই কৌতূহলী হয়ে ওঠেন। সেতুমন্ত্রী শতাব্দীকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘হোয়াট ইজ ইয়োর কোয়েশ্চেন। আর ইউ জার্নালিস্ট?’ মন্ত্রীর এ প্রশ্নে ভড়কে না গিয়ে শতাব্দীর তড়িৎ উত্তর, ‘নো! আই এম এ স্টুডেন্ট।’ মেয়েটির কথা বলার ভঙ্গি ও আত্মবিশ্বাস দেখে ওবায়দুল কাদের তাকে তার প্রশ্ন করার জন্য সায় দেন। শতাব্দী মন্ত্রীর অভয় পেয়ে বলল, ‘আমি যখন স্কুলে আসি তখন গুলিস্তান-আবদুল্লাহপুরগামী বাসগুলো মহিলা সিট নেই বলে আমাকে উঠতে দেয় না। বাসের হেলপাররা বলেন, “আপনাদের উঠতে দেওয়া যাবে না”। এর ফলে আমার প্রায়ই স্কুলে আসতে দেরি হয়ে যায়। কখনো কখনো ক্লাসও মিস হয়। আবার বাসায় ফেরার পথে একই কারণে দেরি হয়। তাহলে মহিলাদের জন্য আলাদা বাসের কি প্রয়োজন নেই?’ মেয়েটির প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, মহিলাদের জন্য বিআরটিসির আলাদা বাস আছে। তখন তিনি শতাব্দীর কাছে জানতে চান সে কোন এলাকা হয়ে স্কুলে যায়। এর উত্তরে মেয়েটি জানায়, স্কুলের যাওয়ার পথে শেওড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে এমইএস পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়। এরপর ওবায়দুল কাদের শতাব্দীর কাছে তার স্কুলে যাওয়ার সময় জেনে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই নির্দেশ দেন রবিবার থেকে সকাল ৬টা-৭টার মধ্যে বিআরটিসির বাস এখানে থাকবে। একই সঙ্গে বিআরটিসি চেয়ারম্যানকে তিনি শতাব্দীর অভিযোগ করা বাসটি কেন মহিলাদের উঠতে দেয় না এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলেন। এত দ্রুত সমস্যার সমাধান পেয়ে মেয়েটি আনন্দিত হয়ে মন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিয়ে চলে যায়। সাংবাদিকদের কাছে শতাব্দী জানায়, স্কুলের আসা-যাওয়ার পথে তার এবং তার সহপাঠীদের এ সমস্যায় প্রায়ই পড়তে হয়। সে গাড়িতে উঠতে পারলেও তার বান্ধবীরা অনেক সময় বাসে উঠতে পারে না। এ জন্য স্কুলে প্রায়ই তাকে বকা খেতে হয়। আর ক্লাসে দেরি করে যাওয়ায় মাঝেমধ্যে তার ক্লাসও মিস হয়। এদিকে গতকাল দুপুরে বিমানবন্দর সড়কে র‌্যাডিসন হোটেলের বিপরীতে ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযানের সময় যাত্রীবাহী বাস থামিয়ে চালকের কাছে কাগজপত্র চান ওবায়দুল কাদের। এ সময় অতিরিক্ত যাত্রী বহন করার কারণে তিনি গাড়ির চালককে জরিমানা করেন। তিনি একই সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশা থামিয়ে তা মিটারে চলছে কিনা জানতে চান। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এ সড়কে অবস্থান করে মন্ত্রী বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিদর্শন করেন। সাংবাদিকদের তিনি জানান, বিভিন্ন অপরাধে গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ২২টি গাড়িকে জরিমানা করা হয়।

আর পাঁচটি বাস ডাম্পিংয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়। তিনি জানান, বিআরটিএর জনবল বাড়ছে বলেই অভিযান জোরদার হচ্ছে। চট্টগ্রামে একজন এবং ঢাকায় আরও একজন নারী ম্যাজিস্ট্রেটসহ বিআরটিএর ম্যাজিস্ট্রেট সংখ্যা এখন ৭। মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমাতে ১৬৫টি ব্ল্যাক স্পট সংস্কারের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তিনি আরও জানান, রাজধানীতে দুর্ঘটনা কমাতে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়েছে।

সর্বশেষ খবর