সোমবার, ২৮ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

অর্থ ফেরতে সব ব্যবস্থাই নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক

মানিক মুনতাসির

অর্থ ফেরতে সব ব্যবস্থাই নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম থেকে চুরি হওয়া রিজার্ভের অর্থ ফিরিয়ে আনতে এবং দোষীদের চিহ্নিত করতে সব ব্যবস্থাই নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে ফেডারেল রিজার্ভ কর্তৃপক্ষকে টেলিফোনের পাশাপাশি চিঠি দিয়ে জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিলকে (এএমএলসি) ৬ ফেব্রুয়ারিই চিঠি দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে। কিন্তু ৪ ফেব্রুয়ারি ঘটনার পর থেকেই এর দায় নিতে চায়নি ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম। প্রতিষ্ঠানটি এখনো বলছে, তাদের কোনো দায় নেই। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটিসহ অন্যান্য বিভাগের দুর্বলতা চিহ্নিত করার কাজ শুরু করা হয় ৬ ফেব্রুয়ারি থেকেই। হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট প্রিন্টারটি অকেজো করে দেওয়ার পর পর এর কর্তৃপক্ষের পরামর্শক্রমে সুইফট কেস নম্বর ১০৫২২৯২৬ খোলা হয়। সেই সঙ্গে সুইফট প্রোডাকশন সার্ভার বন্ধ করে দেওয়া হয়। অথচ সুইফট কর্তৃপক্ষ গতকাল পর্যন্ত বলেছে, তাদের কোথাও কোনো সমস্যা নেই। অর্থাৎ সুইফট কর্তৃপক্ষও দায় এড়িয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।

সূত্র জানায়, এ ঘটনায় কারিগরি পর্যালোচনার জন্য ৭ ফেব্রুয়ারি সুইফট পদ্ধতি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর বিকল্প হিসেবে সুইফট হেল্প লাইন খোলা হয়। পরদিন ৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের হয়ে হ্যাকারদের পাঠানো ৩৫টি পেমেন্ট আদেশ মধ্যস্থতাকারী ব্যাংকগুলোকে লেনদেন না করতে বলা হয় ফেডারেল রিজার্ভের পক্ষ থেকে। কিন্তু ব্যাংকগুলো ৩০টি লেনদেন বন্ধ করলেও, পাঁচটি লেনদেন সম্পন্ন করে ফেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের রি-কনফার্মেশন ছাড়াই। যার সম্পূর্ণ দায়ভার পড়ার কথা ফেডারেল রিজার্ভের ওপর। অথচ ফেডারেল রিজার্ভ বলছে, তাদের কোনো দায় নেই। এদিকে ১২ ফেব্রুয়ারি প্যান এশিয়া ব্যাংকিং করপোরেশনের পক্ষ থেকে একটি পেমেন্ট আদেশ বন্ধ করে ২০ মিলিয়ন ডলার ফিরিয়ে আনা হয়। বাকি যে চারটি পেমেন্ট আদেশের লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে, সেগুলোর সম্পূর্ণ দায়ভার ফেডারেল রিজার্ভের। এর মধ্যে ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে একাধিক যোগাযোগ করা হয়। সেদিন থেকেই এএমএলসি প্রধানও বাংলাদেশ ব্যাংককে জানায় যে, তারা অর্থ উদ্ধারে কাজ শুরু করেছে। এরপর তত্কালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান ১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর পর ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে সে দেশে কিছু নথিপত্রও পাঠিয়ে দেন। এরই মধ্যে এএমএলসি মামলার প্রস্তুতিও নিতে থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে, বাংলাদেশ ব্যাক আইন-২০০৩ এর ৯ এর ১ ধারা অনুাযায়ী, এ ঘটনা অর্থমন্ত্রী বা অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানাতে বাধ্য নয়। সে বিবেচনা এবং ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুরোধে ঘটনা গোপন রাখতে সরকারকে বিলম্বে জানানো হয়। এতে টাকা উদ্ধার প্রক্রিয়া সহজ হতো বলে মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল ফিলিপাইনে গিয়ে টাকা উদ্ধারের বিষয়ে সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করে। চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে সে সময়ে নেওয়া সব প্রক্রিয়া এখনো বহাল রেখেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর ফজলে কবির। সূত্র জানায়, ফেডারেল রিজার্ভ ও ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভুল না করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই অর্থ খোয়া যেত না। তবে হ্যাকাররা যে পন্থায় টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, সেটা অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং সূক্ষ্ম থেকেও সূক্ষ্মতর। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে কোনোভাবেই বোঝার উপায় ছিল না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর