সোমবার, ২৮ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা
নয়া দিল্লির চিঠি

ফের উত্তপ্ত দিল্লি ইসলামাবাদ সম্পর্ক

ঋতুপর্ণা রায়

ভারতের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনল পাকিস্তান। শুধু অভিযোগ বর্ষণই নয়, বেলুচিস্তান থেকে ভারতীয় নৌবাহিনীর সাবেক অফিসার কুলভূষণ যাদব নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পাকিস্তান সরকার ইসলামাবাদে নিয়ে এসেছে জেরার জন্য। দৃশ্যতই অস্বস্তিতে ভারতীয় নেতৃত্ব গোটা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে জানিয়েছে, ওই ব্যক্তি সময়ের আগে অবসর নিয়েছিলেন। তার সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো সংযোগ নেই। সামনেই ভারত এবং পাকিস্তানের শীর্ষ বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে ওয়াশিংটন ডিসিতে। সেখানে পরমাণু নিরাপত্তা সম্মেলনে উপস্থিত থাকছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। ঠিক তার আগে এই ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে আস্থার অভাব ফের স্পষ্ট হয়ে তৈরি হলো তিক্ততা। ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে পাঠিয়ে পাকিস্তান অভিযোগ করেছে র’-এর এক অফিসার বেলুচিস্তানে অবৈধভাবে ঢুকে ষড়যন্ত্রমূলক কাজকর্ম চালাচ্ছেন। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব। বেলুচিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শরফরাজ বুগতি দাবি করেছেন, ওই ভারতীয় সাবেক অফিসার নাকি বেলুচিস্তানে পৌঁছে সেখানকার বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করেছিলেন। ওই অঞ্চলে হিংসায় মদদ দিতেও সচেষ্ট ছিলেন তিনি। সাউথ ব্লক অবশ্য এই অভিযোগ সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়ে বলেছে, ভারত সরকারের সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তির কোনো সম্পর্ক নেই। গোটা অঞ্চলের স্বার্থে শান্ত এবং সুস্থির পাকিস্তান ভারতের কাম্য। তবে গোটা ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে কূটনৈতিক পারদ কিছুটা চড়ল বলে মনে করা হচ্ছে। সম্প্রতি কাঠমান্ডুতে ভারত-পাকিস্তান দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাশাপাশি বসে দ্বিপক্ষীয় সামগ্রিক আলোচনা চালু করার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। ভারত যতবারই কাশ্মীরে পাকিস্তানি জঙ্গি অনুপ্রবেশ এবং নাশকতার অভিযোগ তুলেছে ইসলামাবাদও পাল্টা বেলুচিস্তানে ভারতীয় হস্তক্ষেপের বিষয়টি তুলে এনেছে। মোশাররফ এবং জারদারির জমানায় এ অভিযোগ এতটাই প্রবল ছিল যে, শর্ম আল শেখ-এর যৌথ বিবৃতিতে বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করতে বাধ্য হয়েছিল মনমোহন সরকার। পরে বিষয়টি নিয়ে ঘরোয়া রাজনীতিতে বিতর্কের ঝড় ওঠে। নানা প্রক্রিয়ায় তখন তাকে ধামাচাপা দিতে বাধ্য হয়েছিল নয়াদিল্লি। নওয়াজ শরিফ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এ বিষয়টিকে প্রত্যক্ষভাবে সামনে নিয়ে আসার ঘটনা এই প্রথম। ভারতের সঙ্গে আলোচনার পর্ব শুরু হওয়ার আগে কৌশলগতভাবে মোদি সরকারকে চাপে রাখার এটি এক কৌশল বলেই মনে করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বড় অংশ। নওয়াজ সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিবের ডিমার্শ দেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়েছে। গুপ্তচরবৃত্তির এ অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই নয়াদিল্লি তার পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বলা হয়েছে, যে ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে তিনি একসময় নৌবাহিনীতে কাজ করতেন ঠিকই কিন্তু সময়ের আগেই অবসর নিয়ে নেওয়ায় তার সঙ্গে ভারত সরকারের কোনো যোগসূত্র নেই। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপের কথায়, ‘আমরা ওই ব্যক্তির সঙ্গে ভারতীয় কূটনীতিকদের যোগাযোগের জন্য আবেদন জানিয়েছি। কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মাথা গলানোর অভিপ্রায় ভারতের নেই। আমরা বিশ্বাস করি, শান্তিপূর্ণ পাকিস্তান গোটা অঞ্চলের জন্যই জরুরি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর