সোমবার, ২৮ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা
‘পরকীয়ার’ বিচার

গৃহবধূ-দেবরপুত্রকে পিটিয়ে মাথা ন্যাড়া করলেন চেয়ারম্যান

পটুয়াখালী প্রতিনিধি

কথিত পরকীয়া প্রেমের অভিযোগে এক গৃহবধূ ও তার দেবরপুত্রকে বাড়ি থেকে তুলে এনে লাঠি দিয়ে পেটানোর পর আহত অবস্থায় তাদের মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছেন পটুয়াখালীর নবনির্বাচিত এক ইউপি চেয়ারম্যান। গত শনিবার রাত ৮টার দিকে গলাচিপা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদে শালিস বেঠকের নামে এ বর্বরতা চালানো হয়। এ ঘটনার পর দুই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে  মামলা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে ইছাদি গ্রামের হাবিবুর রহমান রাঢ়ীর স্ত্রী দুই সন্তানের জননী রাবেয়া বেগম ও একই বাড়ির হাবিবের চাচাতো ভাতিজা মিজানুর রহমানকে পরিষদে ধরে আনতে নির্দেশ দেন ওই ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান খালিদুল ইসলাম স্বপন। মামার নির্দেশ পেয়ে চেয়ারম্যানের ভাগ্নে আশরাফুল হোসেন টিপু তার লোকজন নিয়ে পরিষদ সংলগ্ন রাঢ়ী বাড়ি থেকে তাদের জোর করে তুলে এনে পরিষদের একটি কক্ষে আটকে রাখেন। স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যা ৭টার দিকে শুরু হয় পরকীয়ার শালিস। ‘আমার ইউনিয়নে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে দেব না’ বলে  চেয়ারম্যান স্বপন নিজেই লাঠি দিয়ে মিজান ও রাবেয়াকে বেধড়ক পেটাতে থাকেন। এক পর্যায়ে রাবেয়া অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। এ অবস্থায় তাদের দুজনকে আনা হয় পরিষদের সামনের মাঠে। পরে চেয়ারম্যানের নির্দেশে পরিতোষ শীলকে বাধ্য করেন দুজনের মাথা ন্যাড়া করতে। পরে তাদের দুজনকে ওই অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া হয়।

চেয়ারম্যান এ ঘটনা নিয়ে কাউকে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন। তিনি উপস্থিত সবাইকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘কেউ কিছুই দেখেননি, মুখে কুলুপ  এঁটে থাকবেন।’ জানা গেছে, পরে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে চেয়ারম্যান স্বপন থানা পুলিশ দিয়ে মিজান ও রাবেয়াকে থানায় নিয়ে রাতভর আটকে রাখার ব্যবস্থা করেন। শালিসে উপস্থিত ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ এম এ কুদ্দুস বলেন, ‘শালিসের সিদ্ধান্ত নতুন চেয়ারম্যান একাই নিয়েছেন। তার ওপর কেউই কথা বলতে সাহস পান না। পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক থাকতেই পারে, সে জন্য আইন রয়েছে। লাঠিপেটা অমানুষিক ও মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘন। চেয়ারম্যান নিজের হাতে তাদের পিটিয়েছেন। পরে দুজনের মাথা ন্যাড়া করা হয়েছে। স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের পরই শালিস ডাকায় আমরা না থেকে পারিনি। বার বার নিষেধ করেছি স্বপন সাহেবকে, তিনি আমার কথা শোনেননি। বয়স কম এবং এমপি সাহেবের ভাই— তাই কেউই সাহস করেনি প্রতিবাদ করতে। শত শত লোক উপস্থিত ছিল ওই সময়।’ গলাচিপা থানার ওসি আবদুর রাজ্জাক জানান, ঘটনার পর রাতেই রাবেয়া ও মিজানকে থানায় এনে রাখা হয়েছে। রাতে পুলিশের একটি দল ওই এলাকায় আসামি ধরতে গিয়ে তাদের ধরে এনেছে। অভিযোগ পেলে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ পটুয়াখালীর সহকারী পুলিশ সুপার মো. মঈনুল হক জানান, ভিকটিম দুজন গলাচিপা থানায় রয়েছে। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 যে ঘটনা ঘটেছে সেটা মোটেও ঠিক হয়নি। প্রেমের সম্পর্ক থাকতেই পারে, যে কোনো ঘটনার জন্য আইনের আওতায় এনে অপরাধের বিচার করা যায়।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে গতকাল যুবলীগ সভাপতি ও নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান খালিদুল ইসলাম স্বপনকে বার বার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।

পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনের এমপি ও স্বপনের বড় ভাই আ খ ম জাহাঙ্গির হোসাইন বলেন, ‘কাল রাতে ওসি সাহেব বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। যদি এ ধরনের ঘটনা সত্যি ঘটে থাকে, তাহলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জানা গেছে, এ ঘটনায় পরে রাবেয়ার স্বামী হাবিব রাঢ়ী বাদী হয়ে বর্তমান ও নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানকে ১ ও ২ নং আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এবং অন্যায় আটক ও মারপিট করার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। এ ছাড়াও স্বপনের ভাগ্নে টিপুসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ রাবেয়া বেগম ও তার স্বামীকে থানা হেফাজতে রেখেছে। এ ঘটনায় রাত থেকে মিজান ও হাবিবের গ্রামের বাড়ি স্বজনরা অন্তত ১০টি বসত ঘরে তালা ঝুলিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর