মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

মধ্যরাতে বন্ধ হচ্ছে প্রচার মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

গোলাম রাব্বানী

মধ্যরাতে বন্ধ হচ্ছে প্রচার মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

দ্বিতীয় ধাপের ৬৪৩টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভোটগ্রহণ ৩১ মার্চ। আজ মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে প্রচার-প্রচারণা। শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় আজ ব্যস্ত দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ভোটগ্রহণে প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিভিন্ন মহল থেকে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে সহিংসতা এড়াতে বাড়তি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের দাবি উঠলেও তা হচ্ছে না। নানা শঙ্কা, হামলা ও সহিংসতার মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের ৬৪৩টি ইউপি নির্বাচনের জন্য ৪৭ জেলায় ব্যালট পেপারসহ অন্যান্য সামগ্রী পাঠিয়েছে কমিশন। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই নির্বাচনী এলাকায় নামছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। নির্বাচনী অপরাধের সাজা দিতে সঙ্গে থাকছে নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটরা। তবে এ ধাপের জন্য বাড়তি কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এদিকে বিভিন্ন ইউপিতে নির্বাচনী সহিংসতা অব্যাহত থাকায় ভোট নিয়ে নানা শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন প্রার্থীরা। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন খোদ নির্বাচন কমিশনও। যদিও ইসি ভোটারদের অভয় দিয়ে নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে ইসি।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, দ্বিতীয় ধাপেও আওয়ামী লীগের ৩১ জন চেয়ারম্যান বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ধাপে ৬৪৩ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছে ২ হাজার ৬৮৪ জন। এর মধ্যে ১৭টি রাজনৈতিক দলের এক হাজার ৫০৭ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী  রয়েছে এক হাজার ১৭৭ জন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজ মাঠে নামছে পুলিশ-র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। চার দিনের জন্য স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে থাকবেন তারা। নির্বাচনী উপজেলায় নির্বাহী এবং বিচারিক হাকিমও থাকছে তদারকিতে। প্রথম ধাপের ভোটে সংঘর্ষ-গোলযোগ হয়েছে, প্রাণ গেছে ২৩ জনের। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি ‘ভিজিলেন্স’ ও ‘অবজারভেশন’ টিমের কার্যক্রম বাড়ানো, নির্বাহী হাকিমদের তদারকি দৃশ্যমান করার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল বাড়ানোর এবং বিধি ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘন ও নির্বাচনী অনিয়ম নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর, লিখিত অভিযোগের সত্যতা যাচাই করার পাশাপাশি কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা কমিশনকে জানাতে ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক-পুলিশ সুপারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, ভোট সামনে রেখে সব ধরনের অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ডিসি-এসপি-রিটার্নিং অফিসারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপরও অভিযোগ আসছে, সত্যতা খতিয়ে দেখে ও তদন্ত করে সিদ্ধান্ত দিচ্ছে কমিশন।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, প্রথম ধাপের ভোটে বরিশাল অঞ্চলে গোলযোগ হয়েছে বেশি। বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর ও বরগুনায় সহিংসতা হয়েছে। বগুড়া, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ, ভোলা, খুলনা, ঝালকাঠি, নোয়াখালী, কুষ্টিয়া, শেরপুর, সিরাজগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জে প্রচারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ-হামলা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো চিঠিতে বিধি লঙ্ঘন করে মিছিল-শোডাউন, পোস্টার-তোরণ অপসারণ করাসহ যে কোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এবং মামলা করার নির্দেশ দিয়েছে ইসি। চিঠিতে নির্বাচনী এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহলও বাড়াতে বলা হয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে নির্বাহী হাকিমদের তদারকি বাড়িয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখানোর জন্য জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিয়েছেন এ কর্মকর্তা। আরেকটি চিঠিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ‘ভিজিলেন্স’ ও ‘অবজারভেশন’ টিমের কার্যক্রম বাড়িয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

মাঠে পুলিশ-র‌্যাব-বিজিবি : দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে আজ মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সব নির্বাচনী এলাকায় আজ ২৯ মার্চ থেকে ১ এপ্রিল পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। এক্ষেত্রে পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি, কোস্টগার্ডসহ বিভিন্ন সংস্থার ফোর্স মাঠে থাকবে। ইসি সূত্রগুলো জানিয়েছে, যেখানে সাধারণ ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ভেদে ১৭ থেকে ২০ জনের ফোর্স মোতায়েন থাকবে। এক্ষেত্রে কেবল ভোটের দিনই প্রায় দেড় লাখ ফোর্স ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। এ ছাড়া আজ থেকে ভোটের পরের দিন শুক্রবার পর্যন্ত মোট চার দিনের জন্য মাঠে থাকবে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ডের মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স। ইসির পরিকল্পনা অনুযায়ী পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে প্রতি ইউনিয়নে একটি করে ৬৪৩টি মোবাইল ফোর্স ও প্রতি তিন ইউপির জন্য স্ট্রাইকিং ফোর্স রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি উপজেলায় ২টি করে র‌্যাবের মোবাইল টিম ও একটি স্ট্রাইকিং টিম এবং প্রতি উপজেলায় ২ প্লাটুন বিজিবি মোবাইল ও এক প্লাটুন স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকছে। আবার উপকূলীয় অঞ্চলে প্রতি উপজেলার জন্য কোস্টগার্ডের ২ প্লাটুন মোবাইল ফোর্স ও এক প্লাটুন স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকছে।

আজ প্রচারণা শেষ : নির্বাচন আচরণবিধি অনুযায়ী ভোটগ্রহণ শুরুর ৩২ ঘণ্টা আগে সব ধরনের নির্বাচনী প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ জন্য আজ ২৯ মার্চ মধ্যরাত অর্থাৎ রাত ১২টা থেকে সব ধরনের প্রচারণা বন্ধ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মোটরসাইকেলসহ যান চলাচল নিষিদ্ধ : গতকাল মধ্যরাত থেকে নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া ভোটের আগের রাত থেকে ৩২ ঘণ্টা সব ধরনের যান চলাচল নিষিদ্ধ করেছে ইসি। নির্বাচন কমিশনের এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ভোটগ্রহণের পূববর্তী দিন থেকে ভোটগ্রহণের দিন মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা বলাবৎ থাকবে। এ ছাড়াও ভোটগ্রহণের আগের মধ্যরাত থেকে ভোটের দিন মধ্যরাত পর্যন্ত সব ধরনের যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ইসির নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহে নিয়োজিত দেশি-বিদেশি সাংবাদিক (পরিচয়পত্রধারী), নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শক এবং চিকিৎসা, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি কাজে ব্যবহারের জন্য উল্লিখিত যানবাহন চলাচল নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর