মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

নীলফামারীর সবকটিই মরা খাল

হারিয়ে যাওয়া নদী ২

আবদুল বারী, নীলফামারী

নীলফামারীর সবকটিই মরা খাল

নীলফামারীর ওপর দিয়ে প্রবাহিত ছিল ছোট-বড় ২২টি নদী। এগুলোর সবই এখন মরা খাল। পলি পড়ে ও দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ার কারণে এ দশা হয়েছে। নদী নামের মরা খালগুলোর দুই পাড়জুড়ে এখন চাষ হচ্ছে ধানসহ নানা ফসল। পাশাপাশি গড়ে তোলা হচ্ছে অবৈধ স্থাপনা। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, জেলার উল্লেখযোগ্য নদীগুলো হলো তিস্তা, বুড়ি তিস্তা, চারালকাঠা, বুড়িখোড়া, যমুনাশ্বরী, খড়খড়িয়া, দেওনাই, শালকি, পাঙা, চিকলি ও ধাইজান নদী। এসব নদীর বেশির ভাগই তিস্তা ও করতোয়ার শাখা থেকে প্রবাহিত ছিল। এরও আগে আরও যেসব নদীর অস্তিত্ব ছিল সেগুলো হলো জেলা শহরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বামনডাঙা নদী ও বিভিন্ন উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত আওলিয়া খানা, ধুম, নাউতারা, বুল্লাই ও চারা নদীসহ অসংখ্য নদী। এখন সরকারি হিসাবে এসব নদীর অস্তিত্বও নেই, নামও নেই। এসব নদী কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। টিকে থাকা নদীগুলোও এখন হারিয়ে যাওয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে। সূত্র জানায়, এক সময় বিশাল এলাকা নিয়ে প্রবাহিত বামনডাঙ্গার তীরে গড়ে উঠেছিল শাখামাছা বন্দর। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, ১০০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে প্রমত্তা ওই নদীকে গ্রাস করেছে কতিপয় দখলদার। শুধু তাই নয় বর্তমানে সরকারি ভূমি দফতরের কাগজপত্র বা নকশাতেও এখন অস্তিত্ব নেই বামনডাঙা নদীর। এক শ্রেণির ভূমি কর্মকতা-কর্মচারীর সহায়তায় দখলবাজরা এই বামনডাঙা নদীসহ অসংখ্য নদীকে নিজস্ব জমি হিসেবে দাবি করে চলেছেন। সরেজমিন জেলার বিভিন্ন নদী ও নদী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নদী আর নদী নেই। দেখে বোঝার উপায় নেই এসব নদীর বুক চিরে এক সময় চলাচল করত বড় বড় নৌকা। নীলফামারীর টুপামারী ইউনিয়ন দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িখোড়া নদীর পাড়ের বাসিন্দা ও ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মছিরত আলী শাহ্ ফকির (৭০) বলেন, ‘স্বাধীনতার আগে ও পরে এই নদীতে বড় বড় নৌকা চলত। সেই সময় নীলফামারীর নদী ঘটা হিসেবে টুপামারী বন্দর ছিল সব থেকে বড় বন্দর। এই বন্দরে বড় বড় পাল তোলা নৌকা ও ছোট ছোট জাহাজ প্রতিদিন ভিড়ত। কিন্তু এখন নদীতে পানি নেই। সবাই যার যার মতো নদীর জমি দখল করে সেখানে আবাদ করছেন। নীলফামারী সদর উপজেলার ইটাখোলা ইউনিয়নের সিংদই গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া চারা নদী পাড়ের বাসিন্দা সুধীর চন্দ্র রায় (৬৫) বলেন, ‘আগে এই নদীতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত নৌকা মালামাল নিয়ে আসা যাওয়া করত। এখানে সিংদই ঘাট নামে একটি নৌকা ভেড়ানোর ঘাট ছিল। কিন্তু এখন নদীতে নৌকা তো দূরের কথা নদীর অস্তিত্বই নেই।’ ডোমার মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ শাহিনুর রহমান বাবু জানান, শালকি নদীকে কেন্দ্র করেই চলত ডোমারের ব্যবসা বাণিজ্য। এক সময় যে নদীর ওপর দিয়ে নৌকায় করে ব্যবসা-বাণিজ্য চলত, এখন সেই নদী দখলদারদের কবলে। নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নদীর বিকল্প নেই। নীলফামারী জেলার ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ২২টি ছোট-বড় নদী পলি জমে আজ প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। নদীর বুকে আবাদ হচ্ছে বিভিন্ন ফসল। এ ছাড়া ও বিভিন্ন নদী অবৈধ দখলদারদের হাতে দখল হয়ে গেছে। নদীগুলো বাঁচাতে হলে দখলদার মুক্ত করতে হবে এবং খনন করতে হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর