মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

সেন্টু হাজংয়ের চোখে কৃষিবিপ্লবের স্বপ্ন

নালিতাবাড়ী প্রতিনিধি

সেন্টু হাজংয়ের চোখে কৃষিবিপ্লবের স্বপ্ন

বন্যহাতির উপদ্রব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে পাহাড়িরা নানাভাবে অসহায়। বছরজুড়ে হাতে কোনো কাজ না থাকায় একটা সময় নারী-পুরুষ কৃষিশ্রমিক হিসেবে অন্যের জমিতে কাজ করত। রাসায়নিক সার কীটনাশক কিনে নিজের জমিতে চাষাবাদ ছিল অনেকটা দুঃস্বপ্নের মতো। কিন্তু জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ, বিলুপ্ত প্রজাতির দেশি ধান সংরক্ষণ ও সংকরায়নের মাধ্যমে নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন করে কৃষিবিপ্লবের স্বপ্ন দেখছেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী কতুবাকুড়া গ্রামের কৃষক সেন্টু হাজং। ২০০৭ সালে একটি বেসরকারি সংগঠনের কাছ থেকে ‘জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ ও নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন’-এর ওপর তিন দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন সেন্টু হাজং। এ প্রশিক্ষণ পুঁজি করে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য পর্যায়ক্রমে নিজের ৪ একর জমিতে জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে তিনি সফলতা পান। আর ছোট ছোট প্লট করে বিভিন্ন এলাকা থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এমন দেশি ধান সংগ্রহ করে নতুন জাতের ধান উদ্ভাবনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজের জমিতে সেসব ধান চাষ করে যে ফলন হয় সেগুলো থেকে বাছাই করে বীজ হিসেবে সংরক্ষণ করছেন।

সেন্টু হাজং জানান, ব্রিডিং পদ্ধতি প্রয়োগ করে এ পর্যন্ত তিনি ১৫ প্রকারের দেশি ধান উদ্ভাবন করেছেন। আগামী বছর চূড়ান্ত পরীক্ষা করে উদ্ভাবিত ১৫টি ধানের নতুন নাম দেওয়া হবে। উদ্ভাবিত এ ১৫টি ধান দীর্ঘ নয় বছরে নতুন নামে পরিচিতি পাবে।

তিনি জানান, তার সংরক্ষণে বীজধানগুলো হচ্ছে : দেশি জাতের পাইজাম, পুড়াবিনি, দুধবিন্নি, কাইচ্চাবিন্নি, নেদারাবিন্নি, মারাক্কাবিন্নি, দাড়িয়াবিন্নি, কার্তিকবিন্নি, কাশিয়াবিন্নি, চাপাল, মালঞ্চি, গোলাপি, আনামিয়া, পারিজাত, ডেপা, পঙ্খিরাজ, তুলসীমালা, চিনিশাইল, কালিজিরা, আচ্চি, স্বর্ণলতা, ময়নাগিরি, মালখিড়া, চাপালি, গোলচাঁপা, জলকুমারী, বগি, আরপরিনা, মালতী, কালিগোবিন্দ, রংপুরিয়া, কার্তিকশাইল, ফুলগাইঞ্জা, বাসিরাজ, দলকচু, আউমিশাল। এ রকম দেশি ধানের বীজ ছোট ছোট প্লাস্টিকের কৌটা, বস্তা ও ছড়ার মাধ্যমে সংরক্ষণ করেন তিনি।

সেন্টু জানান, কেঁচো দিয়ে কম্পোস্ট সার তৈরি করে আসছেন তিনি। মধুপুর থেকে পাঁচ বছর আগে ২০টি কেঁচো এনেছিলেন। এখন তার সংগ্রহে রয়েছে ১০-১২ কেজি কেঁচো। এ ছাড়া জৈব পদ্ধতিতে কীটনাশক তৈরি করে তিনি ব্যাপক সফলতা লাভ করেছেন। তিনি জানান, জৈব পদ্ধতিতে আবাদ করতে শারীরিক পরিশ্রম ছাড়া আর কোনো খরচ নেই। তাই এলাকার কৃষক এখন এ পদ্ধতির প্রতি ঝুঁকছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর