মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

জলকেলি উৎসব

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

জলকেলি উৎসব

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে গতকাল চট্টগ্রামের চকবাজারে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী তরুণ তরুণীরা জলকেলিতে মেতে ওঠেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

নববর্ষকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাংগ্রেং পোওয়ে (জলকেলি) উৎসবে মেতে ওঠেন রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষজন। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে একে অপরকে পানি ছিটিয়ে দেন তারা। গতকাল সন্ধ্যায় নগরীর কাতালগঞ্জে বাংলাদেশ রাখাইন স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন এ উৎসবের আয়োজন করে।

মাইকে গানের তালে তালে তারা একে অপরকে ছিটিয়ে দিচ্ছেন পানি। সেই দলে আছেন তরুণ-তরুণী থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাও। শিশুরাই বা কেন বাদ যাবে। আছে তারাও। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী চমাং রাখাইন জানান, এ উৎসব আরও কয়েকদিন পরে হওয়ার  হওয়ার কথা। কিন্তু এ উৎসব উপলক্ষে সবাই গ্রামে ফিরে যাবেন। ফলে তাদের শিশুরা এ উৎসব ভালোভাবে জানতে পারে না। তাদের জন্য আগেভাগে এ উৎসব পালন করা হলো। ফলিত পদার্থবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী উমে রাখাইন বলেন, আমাদের সম্প্রদায়ে পানি হচ্ছে পবিত্রতার প্রতীক। আমরা বিশ্বাস করি, এই জল আমাদের সব কষ্ট গ্লানি ধুয়ে নিয়ে যায়।

এদিকে, রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু-সাংগ্রাইন-বৈসু-বিষু (বৈসাবি)  উৎসবকে ঘিরে পর্যটকের ঢল নামতে শুরু করেছে পাহাড়ে। পর্যটকদের পদচারণায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে পর্যটননগরী তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান। পর্যটকদের সরব উপস্থিতিতে পাহাড় যেন উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে। পর্যটকদের ভিড়ে শহরের সবকটি আবাসিক হোটেল, মোটেল, সরকারি রেস্ট হাউসে লোকজনের ভিড়। লেগে রয়েছে অগ্রিম বুকিংও। পার্বত্যাঞ্চলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় বৈসাবি উৎসব আর রাঙামাটির নৈসর্গিক আবেশ ও দর্শনীয় স্থানগুলো পর্যটকদের আকর্ষণ কাড়ে সহজেই। তাই এ উৎসবের টানে ছুটে আসছে দূর-দূরান্ত থেকে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। বৈসাবি ও বর্ষবরণ আর পর্যটকদের পদচারণায় যেন উৎসবের জোয়ারে ভাসছে পাহাড়িকন্যা রাঙামাটি।

রাঙামাটি পর্যটন মোটেল ও হলিডে কমপ্লেক্মের ব্যবস্থাপক অলোক বিকাশ চাকমা জানান, বাংলা নববর্ষ আর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বৈসাবি উৎসবকে ঘিরে প্রতিদিন অগণিত পর্যটক রাঙামাটিতে আসতে শুরু করেছেন। প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চার হাজার পর্যটকের আগমন ঘটছে পর্যটন কমপ্লেক্সে। রাঙামাটি ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ঝিনুক ত্রিপুরা জানান, চৈত্র মাসের শুরুতেই একটি পাখি এসে বিজু বলে ডাক দিয়ে যায়। এ পাখিকে বিজু পেক্কো (বিজু পাখি) বলে। এ পাখির সুমধুর কলতান বিজু বা চৈত্রসংক্রান্তি উৎসবের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে। এটা পার্বত্যাঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ধারণা।

জানা গেছে, রাঙামাটি পর্যটন মোটেল, টুকটুক ইকোভিলেজ, পেদাটিংটিং ও চাংপাং রেস্টুরেন্ট, ডিসি বাংলো জাদুঘর, পৌর পার্ক, সুখী নীলগঞ্জ, উপজাতীয় জাদুঘর, রাজবন বিহার, চাকমা রাজবাড়ী, সুবলং ঝরনা স্পটগুলো বৈসাবি উৎসব ঘিরে পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। কেবল দেশি-বিদেশি পর্যটকই নন, স্থানীয়রাও ছুটে চলেছেন রাঙামাটির চোখ জুড়ানো প্রকৃতির সৌন্দর্যের আধারে। অনেকে কর্মব্যস্ততার ফাঁকে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে অবকাশ কাটাতে আসছেন পাহাড়ে। উল্লেখ্য, পার্বত্যাঞ্চলের ১০ ভাষাভাষি ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বৈসাবিকে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে পালন করে থাকে। সবমিলে এর নাম রাখা হয় বৈসাবি। চাকমা রীতি অনুযায়ী ১২ এপ্রিল অর্থাৎ চৈত্র মাসের ২৯ তারিখ গঙ্গ্যাদেবীর উদ্দেশ্যে নদীতে ফুল ভাসিয়ে প্রার্থনার মধ্য দিয়ে সূচনা করা হবে ফুলবিজুর উৎসব। পরদিন ১৩ এপ্রিল মূলবিজু এবং ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখ ও গোজ্যেপোজ্যা দিন উদযাপিত হবে। এ ছাড়া ১৫ এপ্রিল উদযাপন করা হবে মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী জলকেলি উৎসব।

সর্বশেষ খবর