মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

পুলিশই যখন ইভ টিজার...

সাখাওয়াত কাওসার

কোনো বখাটে তরুণ নয়, এবার ইভ টিজিংয়ের অভিযোগ উঠেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা খোদ পুলিশের বিরুদ্ধে। তাও আবার দূরে কোথাও নয়, খোদ সবুজবাগ থানার সামনেই ঘটেছে ইভ টিজিংয়ের মতো ঘটনা। দিনের পর দিন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের এমন ইভ টিজিং সহ্য করলেও গতকাল সাহস করেই এর প্রতিবাদ করেছেন এক তরুণী। তবে থানায় অভিযোগ দিতে গিয়ে ভুক্তভোগী তরুণী পড়েছেন উল্টো বিপদে। থানার ভিতরে থাকা পুলিশ সদস্যদের হয়রানির শিকার হয়েছেন তিনি। সবশেষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একটি পেজে নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা এবং অপরাধীদের ছবিগুলো শেয়ার করেছেন তিনি। এরপর থেকে ফেসবুকের এই পোস্টটি অন্তত ৫ শতাধিকবার শেয়ার হয়েছে। আর মন্তব্য ও পড়েছে অসংখ্য। এ ব্যাপারে সবুজবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কুদ্দুস ফকির ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মেয়েটির সঙ্গে আমার বেলা ১১টার দিকে কথা হয়েছে। সন্ধ্যার পর তার থানায় আসার কথা। অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উম্মে ওবায়দা ইফতাহ নামে ওই তরুণী ফেসবুকের ডেসপারেটলি সিকিং ঢাকা পেইজে লিখেছেন, “এটা বাসাবো, সবুজবাগ থানার সামনে থেকে তোলা। আমার ডেইলি যাতায়াত পথ। ডেইলিই পুলিশ আর বিডিআর (প্রকৃতপক্ষে এরা আনসার ব্যাটালিয়ান সদস্য)-এর এরা দাঁড়িয়ে থাকে, কারণ সাথেই থানা। স্বাভাবিক চিত্র অনুযায়ী জায়গাটা অন্যসব জায়গা থেকে সেফ হওয়ার কথা। প্রতিদিন কেউ না কেউ টিজ করে, আজেবাজে কথা বলে। না সাধারণ লোকেরা না। এই ইউনিফরমড রক্ষকরা। কিছু বলি না। চুপচাপ চলে যাই। আজও যাচ্ছি। চার পাঁচজন দুদিকে দাঁড়ানো। একপাশ থেকে একজন বলল, ইসসসস্। আরেকজন বলল, লাগবো নাকি! ওপাশের লোকগুলোকে উদ্দেশ্য করে আরও জোরে বলল, কি লাগবো! এ পাশের একজন বললো, লাগবো তো, কিন্তু অনেক খড়খড়া।

তাদের পাশ কাটিয়ে চলে আসছিলাম, কি মনে করে পেছনে ফিরলাম। ব্যাগ থেকে ফোন বের করতেই চারজন আলাদা হয়ে অন্যদিকে হাঁটা শুরু করল। আমিও পেছনে পেছনে গিয়ে ছবি তুলে সোজা থানার ভেতরে। বললাম যে আপনারা সিকিউরিটি দেবেন কী, যদি নিজেরাই টিজ করেন। বলে, নাম বলেন। আইডেন্টিফাই করেন। এভাবে বললেই তো হয় না। ওখানে না হলেও ২৫/৩০ জন ছিল। স্বাভাবিকভাবেই সবাই এত্ত মজা পাচ্ছিল, কেউ কেউ ওই থানার ভেতরে থাকা অবস্থাতেই বলল, খাইছেরে, দারোগা আইছে।

কি বলবো!!! কাকে বলবো!!! কি করবো!!! শখ নাই এই দেশে বাইরে বের হবার। আমার ড্রেস বাজে ছিল না। লং মেক্সি ড্রেস, ওড়না দেওয়াই ছিল।”

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল সকাল ১০টা ২৩ মিনিটে মেয়েটি এই পোস্টটি ফেসবুকে আপলোড করে। পোস্টের সঙ্গে তিনটি ছবি যুক্ত করা রয়েছে। ছবিগুলোতে হাতে পানির বোতলসহ একটি সাধারণ আনসার ও দুটিতে ব্যাটালিয়ান আনসার সদস্যকে দেখা যাচ্ছে। সাধারণ আনসারের ছবিটি পেছন থেকে তোলা। আর ব্যাটালিয়ান আনসারের মুখে হালকা দাঁড়ি। তার মুখ দেখা যায়, কিন্তু বুকের নেমপ্লেট দেখা যায় না। পোস্টটি গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ৫০০ বার শেয়ার হয়েছে। এ ছাড়া অসংখ্য মানুষ কমেন্টস করেছেন। মাশরুফ হোসেন ও জাহেদ পারভেজ চৌধুরী নামে দুই পুলিশ কর্মকর্তার গোচরীভূত হওয়ায় তারা বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। অভিযোগকারী তরুণী দুপুর ২টা ২০ মিনিটে কমেন্টসের ঘরে লিখেছেন ‘আমার বাড়ি পুলিশ আর কমিশনারের লোক দিয়ে ভরে গেছে।’ একটু পর আবার তিনি লিখেছেন, ‘বাসায় একটু পর পর লোকজন আসতেছে। আমাকে চা খেতে ডাকছে আর ওনারা এটা নিয়ে সিরিয়াস অ্যাকশনে যাচ্ছেন।’ সন্ধ্যা ৭টা ২১ মিনিটে মেয়েটি ওই স্ট্যাটাসের কমেন্টে একজনের প্রশ্নের উত্তরে লিখেছেন, তিনি থানায় যাওয়ার পথে রয়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর