বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

বৈঠকের পর বৈঠক, নিয়ন্ত্রণে আসছে না আইনশৃঙ্খলা

রূপগঞ্জে নির্বাচনী সহিংসতায় ১ জন নিহত মুন্সীগঞ্জে আহত ২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক

বৈঠকের পর বৈঠক, নিয়ন্ত্রণে আসছে না আইনশৃঙ্খলা

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন নিয়ে শুধু বৈঠকের পর বৈঠক করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নিয়ন্ত্রণে আসছে না আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। কমছে না নির্বাচনী সহিংসতা। এদিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে সোমবার রাতে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে জাহাঙ্গীর মিয়া নামের একজন আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া গতকাল মুন্সিগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীর সর্মথকদের মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে নির্বাচনী পোস্টার ছেঁড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় প্রার্থীসহ দুজন আহত হয়েছেন।

পিরোজপুরের স্বরূপকাঠী উপজেলায় ইউপি নির্বাচনের জেরে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের বিপক্ষে নির্বাচন করায় হামলা ও পুলিশি হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও সমর্থকরা। এ ছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাতের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী ধাপের নির্বাচনগুলোতে পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা আছে। আগামী ২৩ এপ্রিল তৃতীয় ধাপের নির্বাচন সামনে রেখে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নির্বাচনী এলাকাগুলো। এ ধাপের নির্বাচনী সহিংসতায় নড়াইল ও ঝিনাইদহে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে আজও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বেলা সাড়ে ১১টায় ইসি সচিবালয়ে জরুরি বৈঠকে বসছে নির্বাচন কমিশন। এর আগে ইউপি নির্বাচন শুরুর আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পাশাপাশি একজন নির্বাচন কমিশনার দপ্তরে দপ্তরে গিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন তাদের সঙ্গে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদাসীনতার কারণে সংঘাত-সংঘর্ষ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইসির কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, বৈঠক করে তেমন কোনো কাজ হচ্ছে না। ক্ষমতাসীনদের নিয়ন্ত্রণেই কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এমনকি পক্ষপাতের অভিযোগে কয়েকজন ওসি, ইউএনওকে বদলিও করেছে ইসি। এর পরও কোনো কাজ হচ্ছে না। এ জন্য চার ধাপের ইউপি নির্বাচন সামনে রেখে বৈঠকে বসছে ইসি।

ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন—চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আগামী চারটি ধাপের ভোট সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কেন্দ্র দখল ও জালভোট ঠেকাতে প্রতিটি ইউপিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অস্ত্রধারী সদস্য বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা বাড়াতে স্ট্রাইকিং ফোর্সসহ র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবির টহল বাড়ানো হচ্ছে। ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় তৃতীয় ধাপের ভোটের আগেই এমন শক্ত অবস্থানে যাচ্ছে ইসি। এ জন্য আজ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসছে কমিশন।

আগামী ২৩ এপ্রিল তৃতীয় ও ৭ মে চতুর্থ ধাপের নির্বাচন হবে। এখন পর্যন্ত পঞ্চম ও ষষ্ঠ ধাপের তফসিল ঘোষণা হয়নি। তবে পঞ্চম ধাপে ২৮ মে এবং ষষ্ঠ ধাপে ৪ জুন ভোটের জন্য তারিখ নির্ধারণ করা আছে। এদিকে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকের এই নির্বাচন ঘিরে গেল দুটি ধাপে ৪২ জনের প্রাণহানি ও পাঁচ সহস্রাধিক লোক আহত হওয়ার ঘটনায় অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে দেশব্যাপী। ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজ। ক্ষমতাসীন জোটের শরিক দলগুলো পর্যন্ত নির্বাচনে কারচুপির প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠে। অনেকে নির্বাচন বাতিল করাসহ নির্বাচন কমিশনারদের পদত্যাগের দাবি তোলেন। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ— নারায়ণগঞ্জ (রূপগঞ্জ) : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া ইউপি নির্বাচনের প্রচারণা নিয়ে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।  সংঘর্ষে জাহাঙ্গীর মিয়া (৪০) নামে একজন নিহত হয়েছেন। এ সময় উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন। এদিকে সংঘর্ষ ও নিহতের ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার মধ্যরাতে উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়নের বড়ভিটা এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহত জাহাঙ্গীর মিয়া বড়ভিটা এলাকার ইলিয়াছ মিয়ার ছেলে। তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী তোফায়েল আহাম্মেদ আলমাছের সমর্থক ছিলেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মুড়াপাড়া ইউনিয়ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন পান তোফায়েল আহাম্মেদ আলমাছ। একই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আবদুল জাব্বার। আগামী ২৩ এপ্রিল এই ইউপিতে নির্বাচন নিয়ে তাদের মধ্যে চরম দ্বন্দ্ব চলে আসছে। সোমবার রাত পৌনে ১১টার দিকে মুড়াপাড়া ইউনিয়নের বড়ভিটা এলাকায় ওই দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে তাদের কর্মী-সমর্থকরা প্রচার চালান। এ সময় প্রচারণাকে কেন্দ্র করে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে বাগিবতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে দুই প্রার্থীর সমর্থকরা রামদা, চাপাতিসহ বিভিন্ন অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে ১০ জন আহত হন। তাদের অনেককেই গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে কুপিয়ে ও পায়ের রগ কেটে গুরুতর জখম করা হয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। আহতদের মধ্যে জাহাঙ্গীর মিয়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মুন্সিগঞ্জ : মুন্সিগঞ্জে ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সর্মথকদের মধ্যে গুলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। তবে গুঞ্জন রয়েছে, আহতদের মধ্যে পাঁচজনকে অস্ত্রসহ আটক করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে শহরের উপকণ্ঠ মুক্তারপুর এলাকার বাগবাড়ী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানান, ভোট চাওয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আবদুস ছাত্তার ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী গোলাম মোস্তাফার লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। একপর্যায়ে ছাত্তার মিয়ার নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতা ফয়েজ আহম্মেদ পাভেল ও মৃদুল দেওয়ান স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মোস্তাফার কারখানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে এবং বিদ্রোহী প্রার্থীর বুকে গুলি করতে চাইলে স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে মোস্তাফাকে রক্ষা করেন। এ সময় ছাত্তার মিয়ার পাঁচ ক্যাডারকে গণধোলাই দিয়ে গোলাম মোস্তাফার একটি কারখানার কক্ষে আটকে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। মুন্সীগঞ্জের পৌর মেয়র হাজি ফয়সাল আহম্মেদ বিপ্লবের হস্তক্ষেপে আহতদের মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। এদিকে ওই পাঁচজনকে অস্ত্রসহ আটকের গুঞ্জনে আবদস ছাত্তার মিয়ার বিক্ষুব্ধ সমর্থকরা তাদের মুক্তির দাবিতে পঞ্চসারে বানিয়াবাড়ী এলাকায় ঢাকা-সিপাহীপাড়া সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে দেড় ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে। পরে পুলিশ গিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে ওই ঘটনার জেরে শহরের জুবলী রোডে দুই পক্ষে সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের পাঁচজন আহত হয়েছে।

পিরোজপুর : স্বরূপকাঠী উপজেলায় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের কর্মী-সমর্থরা হামলা ও পুলিশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ কারণে অনেকেই এলাকাছাড়া হয়ে আছেন বলে জানা গেছে। পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠী উপজেলায় ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে আটটিতে জয়লাভ করেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার প্রার্থীরা। এর পরও বিভিন্ন ইউনিয়নে নৌকা মার্কার প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের কর্মী-সমর্থকদের ওপর পর একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটেছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা এ হামলা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার জলাবাড়ী ইউনিয়নে নির্বাচনের পর জেপির চেয়ারম্যান প্রার্থী তহিদুল ইসলামের সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা চালায় নৌকার প্রার্থী আশীষ বড়ালের লোকজন। হামলার আশঙ্কায় সেসব বাড়ির লোকজন সপরিবারে হামলার আগে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। হামলাকারীরা কাউকে না পেয়ে পাঁচটি বাড়ি ভাঙচুর করে।  ব্রাহ্মণবাড়িয়া : সোমবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে নির্বাচনী পোস্টার ছেঁড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় প্রার্থীসহ দুজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ দুজনকে গ্রেফতার করেছে। উপজেলার পূর্বভাগ ইউনিয়নের কোয়ারপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রাম : বোয়ালখালী উপজেলার করলডেঙ্গা ইউনিয়নের দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে দুজন আহত হয়েছেন। গতকাল বিকেলে নগরীর আন্দরকিল্লা এলাকায় দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বোয়ালখালী উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সাক্ষাত্কার নিতে গতকাল দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের অফিসে ডাকা হয়। বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ ও সাবেক চেয়ারম্যান আবুল মনছুরের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় আহত মামুন কবির শিকদার (৩১) নামে একজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

জানা গেছে, সোমবার করলডেঙ্গা ইউনিয়নে তৃণমূল কর্মী সমাবেশের ডাক দেন আবুল মনছুর। একই স্থানে আবদুল ওয়াদুদ সমাবেশের ডাক দিলে প্রশাসন উভয় পক্ষের সমাবেশ বন্ধ করে দেয়। পরে উভয় পক্ষকে নিয়ে নিজ কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আতাউল হক। এ সময় সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে ওই দিন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

সর্বশেষ খবর