প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির পরিবর্তন ঘটছে। বিশ্বের সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে। আমরা পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন সেক্টরকে আরও আধুনিক সেক্টরে পরিণত করতে চাই। ভবিষ্যতে পাসপোর্ট সেবা একটি ডিজিটাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। সবকিছু যেন ডিজিটাল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। ই-পাসপোর্টও (ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট) তৈরি করব আমরা। এ পরিকল্পনা ইতিমধ্যে গ্রহণ করেছি। এ ধরনের পাসপোর্ট প্রবর্তিত হলে এ খাতে কোনো জালিয়াতি সম্ভব হবে না।
গতকাল সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরে পাসপোর্ট সপ্তাহ এবং ঢাকা বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, ৯টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস ছাড়াও মানিকগঞ্জ, কুষ্টিয়া, পাবনা, পটুয়াখালী, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও দিনাজপুরে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের নতুন ভবনের উদ্বোধন করেন তিনি। ‘পাসপোর্ট নাগরিক অধিকার : নিঃস্বার্থ সেবাই অধিকার’— এই স্লোগান নিয়ে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত পাসপোর্ট সেবা সপ্তাহ পালিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পাসপোর্ট হলো একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতীক। এটি জাতির মর্যাদা বহন করে। হয়রানি ছাড়া পাসপোর্ট পাওয়া প্রতিটি নাগরিকের অধিকার। এ ক্ষেত্রে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিস নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে পাসপোর্ট সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। আমরা পারব। কারণ আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি কখনো মাথা নত করে না। ?আমরা ইতিমধ্যেই স্বাবলম্বী হয়ে উঠছি। ভবিষ্যতে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াব। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্থানীয় এমপি জাহাঙ্গীর কবির নানক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান এবং ডিআইপির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সারা দেশে সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। ওই ডিজিটাল সেন্টারে গিয়েই মানুষ তার পাসপোর্টের আবেদন করতে পারছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সময় ২০১০ সাল থেকে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) ও মেশিন রিডেবল ভিসা (এমআরভি) প্রবর্তনের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। ইতিমধ্যে এক কোটি ৪০ লাখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এবং তিন লাখ ২৬ হাজার মেশিন রিডেবল ভিসা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের ৬৫টি মিশনে পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস খোলা হয়েছে। এটি একটি যুগান্তকারী ঘটনা। ডিআইপি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরলস প্রচেষ্টায় এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়েছে। এ সময় শেখ হাসিনা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, অনেক মিডিয়া বিষয়টি নিয়ে হতাশাজনক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কিন্তু এ প্রকল্পে ব্যাপকসংখ্যক পাসপোর্ট দেওয়ার পরও মিডিয়া এ নিয়ে কোনো ইতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। মিডিয়ায় সরকারের সমালোচনার পাশাপাশি সাফল্যের প্রতিবেদনও প্রকাশ করতে আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৩৩টি ইমিগ্রেশন চেক পয়েন্ট এবং ৬৫টি পাসপোর্ট ও ভিসা উইং খোলা ছাড়াও সরকার প্রত্যেক জেলায় একটি করে পাসপোর্ট অফিস স্থাপন করেছে। এই অধিদফতরের লোকবল ৩৯৭ থেকে ১ হাজার ১৮৪ জনে উন্নীত করা হয়েছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলানগর আদর্শ মহিলা কলেজের নবনির্মিত একাডেমি ভবন উদ্বোধন করেন। শেখ হাসিনা কলেজটির জন্য আটতলাবিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণের ঘোষণা দেন। তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।