সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

ফিটনেস নেই পুলিশের গাড়ির

মির্জা মেহেদী তমাল

ফিটনেস নেই পুলিশের গাড়ির

গত মাসের ঘটনা। রাজধানীর উত্তরায় পিকআপ ভ্যানে টহল দিচ্ছিলেন পাঁচ-ছয় জনের একদল পুলিশ। রংচটা গাড়িটির চেহারা বলতে কিছু ছিল না। ভাঙাচোরা ওই গাড়ি নিয়েই পুলিশ ছুটছিল। কিছুদূর যাওয়ার পর হঠাৎ স্টার্ট বন্ধ। অগত্যা পুলিশকে ঠেলতে ঠেলতে পিকআপটি নিয়ে যেতে হলো থানা কম্পাউন্ডে। এ চিত্র এখন পুলিশ বিভাগের। ঢাকাসহ প্রতিটি মেট্রোপলিটন শহরে দিনে-রাতে চোখে পড়ে ফিটনেসবিহীন পুলিশের গাড়ি। নিজেদের থানার গাড়ির যেমন ফিটনেস নেই, তেমন বাইরে থেকে নেওয়া গাড়িগুলোও আনফিট। অভিযানে রাস্তায় বের হলে এভাবে প্রায়ই বন্ধ হয়ে যায় গাড়ির স্টার্ট। ডিএমপির কলাবাগান থানা পুলিশ গাড়ির অভাবে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় টহল দেয়। সব মিলিয়ে গাড়িতে ধুঁকছে এখন পুলিশ।

পুলিশের এসব গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা ঠিকমতো হয় কিনা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ—বিআরটিএ তা জানে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভাগীয় শহর ও মফস্বল এলাকার পুলিশের অবস্থা আরও করুণ। অন্যান্য স্থানের মতো দুর্গম জনপদ খাগড়াছড়িতেও পুলিশ চলাচল করে ভাড়া গাড়িতে। চলতে গিয়ে দুর্ঘটনাও ঘটে।

পুলিশ সদর দফতরের একটি সূত্র জানায়, অভিযানে ব্যবহারের জন্য পুলিশের কাছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন আছে ৯ হাজার ৪১৬টি। এর মধ্যে ২ হাজার ৮১৪টি গাড়ি নতুন। দাঙ্গা-হাঙ্গামার কাজে এসব গাড়ি ব্যবহারের কথা। বাকি ৬ হাজার ৬০২টি গাড়ি অভিযানে ব্যবহারের জন্য। এর মধ্যে ২০ বছর বা এরও বেশি পুরনো গাড়িই বেশি; ২ সহস্রাধিক গাড়ি ত্রুটিপূর্ণ। রয়েছে ২ হাজার ৬৪৭টি মোটরসাইকেল। বেশির ভাগের নম্বরপ্লেট নেই। পিকআপ ভ্যান আছে ২ হাজার; ৭৫০টি পিকআপ চলাচলের উপযোগিতা হারিয়েছে বেশ আগে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ব্যবহারের জন্য ৫৬০টি জিপ, ৯২টি পেট্রল জিপ ও ৬০টি মাইক্রোবাস রয়েছে। রয়েছে পুলিশ সদস্যদের আনা-নেওয়ার জন্য ৩৩টি বাস ও ১৯টি মিনিবাস। আছে ৭২টি হাইওয়ে পেট্রল কার, ৯২টি প্রিজন ভ্যান, ২২টি অ্যাম্বুলেন্স ও ৩৫০টি ট্রাক। এর বেশির ভাগই মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসহীন। ঢাকা মহানগর পুলিশের ১ হাজার ৪১২টি গাড়ির মধ্যে মোটরসাইকেল ৯৫২টি, পিকআপ ভ্যান ২৬০টি, জিপ ৯২টি, পেট্রল জিপ ২১টি, মাইক্রোবাস ২৬টি, বাস ১৬টি, রায়ট কার ৮টি, অ্যাম্বুলেন্স ৫টি ও প্রিজন ভ্যান ২২টি। জানা গেছে, দেশের ৪ শতাধিক থানার গাড়ির প্রায় অর্ধেক অচল হয়ে থাকায় পুলিশ অভিযানে বের হতে গিয়ে ভাড়া করছে বেসরকারি বাস, পিকআপ ভ্যানসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি। তবে এর বেশির ভাগ চলাচলের অনুপযোগী। পুলিশসূত্র জানায়, প্রতিটি থানায় অন্তত ৩টি করে সরকারি পিকআপ ভ্যান থাকার কথা। সব থানায় পুলিশ সদস্যরা গাড়ি পাচ্ছেন না। গাড়ি না থাকা বা পুরনো গাড়ির কারণে দ্রুত অভিযান চালানো যাচ্ছে না; আসামি ধরাও সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন থানার পুলিশ সদস্যের কাছ থেকে জানা গেছে, পিকআপ ভ্যান, জিপ, পেট্রল জিপ, মাইক্রোবাসের কোনোটির হেডলাইট জ্বলে না, কোনোটির সামনের অংশ চ্যাপ্টা হয়ে গেছে, কোনোটি রংচটা, কোনোটির ব্রেক নেই। ঢাকা মহানগরীতে চলাচলকারী বেশির ভাগ গাড়ির অবস্থার কারণ উল্লেখ করে একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এসব গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তা থেকে রেকার দিয়ে টেনে নিয়ে রাখতে হয় নিরাপদ জায়গায়। মফস্বলে গাড়ির অভাবে পুলিশ সদস্যরা হেঁটেও আসামি ধরতে যান। রাজধানীর সবুজবাগ থানার এক পুলিশ সদস্য তার তিক্ত অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করে বলেন, রাতের বেলায় টহল দিতে গেলে হঠাৎ গাড়ির ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে। তখন টর্চ লাইট জ্বালিয়ে পথ চলতে হয়। বর্ষার দিনে সামান্য বৃষ্টি হলেই গাড়ি স্টার্ট নেয় না। রাস্তায় গাড়ি থেকে নেমে বহুবার অন্য গাড়িতে উঠতে হয়েছে। রাজধানীর ওয়ারী জোনের একটি থানার ওসি বলেন, ‘আমার থানায় ৪টি গাড়ি আছে। ১টির অবস্থা মোটামুটি ভালো। বাকিগুলোর দশা খারাপ। ১টি পিকআপের অবস্থা শোচনীয়। এসব গাড়ির চেয়ে রিকশা আগে চলে। অপারেশন চালাতে গেলে মাঝরাস্তায় গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়। অভিযান আর চলে না। থানায় সত্বর উন্নতমানের গাড়ি দিলে আমাদের দুঃখ কমবে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর