রাজধানী ঢাকার কাপ্তান বাজারের প্রবেশপথেই চোখে পড়ত খোদাবক্স সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার তলা একটি বিশাল ভবন। একসময় পড়াশোনায় মুখরিত ছিল শিক্ষাঙ্গনটি। স্কুলের ছুটির ঘণ্টার শব্দ শুনে হৈচৈ করে বের হতো শিক্ষার্থী দল। বর্তমানে সেই চিরচেনা ভবনটি থাকলেও নেই শিক্ষার্থীর আনাগোনা। কারণ, সেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখন অতীত আর ইতিহাস।
জানা যায়, খোদাবক্স সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পরিত্যক্ত অবস্থায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর এর একাংশ গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১২ সালে শিশুকল্যাণ ট্রাস্টকে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর পর থেকে এখানে সমাজের ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিনা বেতনে পড়ানো হচ্ছে। এর আগেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের সূত্রাপুর, গেণ্ডারিয়ার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়। এর পরই স্থানীয় প্রভাবশালীরা স্কুলের চার ভাগের তিন ভাগই দখলে নিয়ে নেন। স্কুলটির বন্ধের কারণ সম্পর্কে কয়েকজন স্থানীয় জানান, দখলদারিত্বের মুখে টিকতে না পেরে স্কুলটি প্রথমে পরিত্যক্ত, এরপর বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে সেখানে পরিচালিত কারিগরি স্কুলটির প্রধান শিক্ষক দেওয়ান মোজাম্মেল হক জানান, স্কুলের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। ২০১২ সালে শিশুকল্যাণ ট্রাস্টের এ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনার দায়িত্ব নেন তিনি। সরেজমিন দেখা যায়, খোদাবক্স স্কুলটির প্রধান ফটকে সিটি ছাগল ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাইনবোর্ড টানানো রয়েছে। মূল ভবনটি বাদে বাকি সব দখলে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ভবনে প্রবেশের জন্য পকেট গেট রাখা হয়েছে। আর স্কুলের সামনের অংশটিতে মাঠের চারপাশে ঘিরে বসানো হয় ছাগলের হাট। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাগল ব্যবসায়ী জানান, ৮-১০ বছর ধরে এখানে ছাগল ব্যবসা করছেন তারা। সমবায়ী নেতা খালেক চেয়ারম্যান এর নিয়ন্ত্রণ করেন। প্রতিদিন এখানে দুই হাজার ছাগল কেনাবেচা হয়। এখান থেকে ঢাকা শহরের কসাইদের কাছে ছাগল সরবরাহ করা হয়। আর ব্যবসায়ীদের ছাগলপ্রতি ১৩ টাকা দিতে হয়; যার জন্য খালেক চেয়ারম্যানকে গড়ে ২৬ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। এ বিষয়ে জানতে জেলা শিক্ষা অফিসের ডিপিও জাহিদ হাসানের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।