সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

চট্টগ্রামে বাড়ছে আত্মহত্যা

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে আত্মহত্যা। পারিবারিক কলহ ও অসন্তোষ, লেখাপড়া নিয়ে বকাঝকা, অভিমান, হতাশা এমনকি পান থেকে চুন খসলেই ঘটছে একের পর এক আত্মহত্যার ঘটনা। কখনো স্ত্রী-সন্তানকে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে অহরহ। গত দেড় বছরে চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলায় চার শতাধিক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। একের পর এক আত্মহত্যার ঘটনায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের প্রশাসন। সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, ‘সামাজিক সচেতনতাই পারে আত্মহত্যা রোধ করতে। তাই কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে আত্মহত্যা রোধের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেয় পুলিশ।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আত্মহত্যার ঘটনা তদন্তে পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা করা হয় না। অনেক সময় তারা ময়নাতদন্ত না করার জন্যও চেষ্টা-তদবির করে। এর ফলে আত্মহত্যার ঘটনাগুলো অপমৃত্যু মামলা হিসেবেই থেকে যায়। নিয়মিত হত্যা মামলা আর হয় না।’ চট্টগ্রাম বারের সিনিয়র আইনজীবী পারভেজ তালুকদার বলেন, স্বচ্ছতার সঙ্গে আত্মহত্যার ঘটনা তদন্ত করলে প্ররোচনাকারীর পরিচয় বেরিয়ে আসত। বেরিয়ে আসত আত্মহননের প্রকৃত ঘটনাও। আত্মহত্যা নিয়ে প্ররোচনাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে এ ধরনের ঘটনা কমে আসত। এক্ষেত্রে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পুলিশ আত্মহত্যার তদন্তে নামতে পারে।’ জানা যায়, পারস্পরিক অবিশ্বাস ও বোঝাপড়ার অভাব, পারিবারিক ও আর্থিক সমস্যা, বিবাদ, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া,  যৌন হয়রানি, যৌতুক, ফতোয়া-গ্রাম্য শালিসের মাধ্যমে অপমানিত হওয়া, দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতাসহ নানা কারণেই ঘটছে একের পর এক আত্মহত্যা। চট্টগ্রাম জেলা ও নগর পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, গত দেড় বছরে নগরী ও জেলায় চার শতাধিক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে ২০১৫ সালেই নগরী ও জেলায় প্রায় ৩০০ আত্মহত্যা মামলা থানায় রেকর্ড হয়েছে। রেকর্ডের বাইরেও অনেক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া আত্মহত্যা করতে গিয়ে আহতের সংখ্যাও হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ার দাবি নগর ও জেলার একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার। অনুসন্ধানে জানা যায়, পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ না করায় আত্মহত্যার ঘটনা সাধারণত ইউডি (আননেচারাল ডেথ বা অপমৃত্যু) হিসেবে থানায় রেকর্ড করা হয়। যার কারণে এসব আত্মহত্যার নেপথ্যে কারণ কার্যত প্রকাশ পায় না। তদন্ত করা হয় না কোনো আত্মহত্যার ঘটনাও। শাস্তির আওতায় আনা যাচ্ছে না প্ররোচনাকারীকে। আবার কোনো কোনো সময় রহস্যজনক ঘটনাও ধামাচাপা পড়ে যায় পুলিশি দায়িত্বহীন তদন্তের কারণে। এ কারণে হত্যাকাণ্ডকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার সুযোগও তৈরি হয়েছে।

সর্বশেষ খবর