রবিবার, ২২ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

বৃষ্টিতে ডুবল ঢাকা চট্টগ্রাম

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও চট্টগ্রাম

বৃষ্টিতে ডুবল ঢাকা চট্টগ্রাম

দিনভর বৃষ্টিতে গতকাল জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে রাজধানীর মৌচাক এলাকা। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র প্রভাবে ভারি বৃষ্টির কারণে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন সড়ক, ওলিগলিসহ বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার গভীর রাত থেকে রাজধানীতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। গতকাল সকাল থেকে প্রবল বৃষ্টিপাতে রাজধানীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক তলিয়ে যায় হাঁটু পানিতে। অন্যদিকে চট্টগ্রামে তলিয়ে গেছে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জসহ নগরীর নিম্নাঞ্চল। মহেশখালের বিপরীতের জনপদগুলো ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কবলে রয়েছে।

সরকারি ছুটির দিন থাকায় গতকাল রাজধানী ঢাকার রাস্তায় যানচলাচলও কম দেখা যায়। তবে যেসব যানবাহন রাস্তায় বের হয়েছিল সেগুলোর ইঞ্জিনে পানি প্রবেশ করায় মাঝ রাস্তাতেই বেশকিছু গাড়ি বন্ধ হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। জলাবদ্ধতার সঙ্গে বৃষ্টি ও চলমান   ঝড়ো হাওয়া এতে একদিকে যেমন নাগরিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে, অন্যদিকে ভোগান্তিও বাড়িয়ে দেয় দ্বিগুণ। আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, গতকাল রাজধানী ঢাকায় ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার গতিবেগে ঝড়ো বয়ে গেছে। সকাল থেকে ২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। অবিরাম বৃষ্টিতে নগরীতে তৈরি হয় জলাবদ্ধতার। নগরীর মতিঝিল, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, রামপুরা, বাড্ডা, ফকিরাপুল, আরামবাগ, গুলশান, বনানী, বারিধারা, মহাখালী, উত্তরা, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, পুরান ঢাকার বংশাল, মালিটোলা, সদরঘাট, লক্ষ্মীবাজার, কুলুটোলা, হেমেন্দ্র দাস রোড, সূত্রাপুর, কাগজিটোলা, রূপচান লেন, গেণ্ডারিয়া, মিলব্যারাক, আরসিন গেটসহ আশপাশের এলাকার অলিগলি ছোটখাটো খালে পরিণত হয়। ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজ লাইন উপচে পড়ে মলমূত্র।

বনানী, বাড্ডা, গুলশান, রামপুরা, মহাখালী, গুলশানসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় খানাখন্দে ভরে সড়ক সমতল দেখাচ্ছিল। ফলে গর্তে পড়ে যানবাহন ও পথচলা মানুষকে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। জলমগ্ন সড়ক দিয়েই ঝুঁকিতে চলছে যানবাহন। অনেকেই আবার যানবাহন না পেয়ে হাঁটু পানি ডিঙ্গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে হেঁটে হেঁটেই ছুটেছেন গন্তব্যে। নিষ্কাশনের সব লাইন আগে থেকেই ময়লা আর আবর্জনায় ভরে থাকায় বৃষ্টিতে জমা পানি দ্রুত নামতে পারছে না। পানি জমে যাওয়ায় বাস, ট্রাক, রিকশা, ট্যাক্সিসহ গণপরিবহনের সংখ্যা ছিল কম। আবার অনেক রাস্তায় খানাখন্দকে রিকশা ভ্যান পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন অনেকে। অনেক অলিগলির ড্রেন উপচে পড়ে রাস্তাঘাট, ঘর-বাড়িতে ময়লা পানিতে একাকার। ম্যানহোলের মুখ খোলা থাকায় গর্তে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হন অনেকে। এ সুযোগে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় হাঁকেন রিকশা ও যানবাহন চালকরা। গতকাল সারাদিন মালিবাগ-শান্তিনগর এলাকা ছিল সাধারণ মানুষের জন্য সবচেয়ে দুর্বিষহ। কয়েকজনকে রিকশা নিয়ে উল্টে পড়তে দেখা গেছে। 

তলিয়ে গেছে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের নিম্নাঞ্চল : ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে দেশের অন্যতম বৃহত্তর পাইকারি বাজার চাকতাই-খাতুনগঞ্জের বাণিজ্যিক এলাকা। এ ছাড়া নগরীর বাকলিয়া, মিয়াখান নগর, চকবাজার ও বহদ্দারহাট এলাকাও প্রায় দুই ফুট পানিতে ডুবে গেছে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হলেও জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হওয়ায় এই প্লাবন সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এদিকে মহেশখালে বাঁধের কারণে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার পর গতকাল বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জোয়ারের পানি নামতে না পারায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে হালিশহর, বৃহত্তর আগাবাদ এলাকায়। এ সময় এলাকার জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের তৈরি মহেশখাল বাঁধ ভাঙার চেষ্টা করেন ক্ষতিগ্রস্ত কয়েক হাজার মানুষ।

 বাধা দিতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন লোকজন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি ছুড়লে বন্দর থানার ওসি এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিমসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। দুপুর ২টার দিকে নগরীর বন্দর রিপাবলিক ক্লাবের পাশে এ ঘটনা ঘটে। বন্দর থানার ওসি এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে জনতার মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় তারা সংঘবদ্ধ হয়ে মহেশখাল বাঁধ ভেঙে দেওয়ার জন্য আসে। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গেলে তারা আমাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় আমরা ৩০ থেকে ৩৫ রাউন্ড শটগানের গুলি এবং চার রাউন্ড টিয়ার শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। ইটের আঘাতে তার ডান হাত মারাত্মকভাবে জখম হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সংঘর্ষের পর পুলিশ মহেশখাল বাঁধ ঘিরে পাহারা বসিয়েছে। তবে এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

এদিকে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরদের নিয়ে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এলাকা পরিদর্শনে গেলে ব্যবসায়ী নেতারা তার কাছে ওই এলাকার উন্নয়নের জন্য লিখিতভাবে ১০ দফা দাবি পেশ করেন। মেয়র ব্যবসায়ীদের ক্ষয়ক্ষতি দেখে সহমর্মিতা প্রকাশ করেন এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন। এ সময় মেয়র নিজেই অনেকগুলো সমস্যা চিহ্নিত করেন এবং তা সমাধানে প্রয়োজনীয় উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের জন্য সঙ্গে থাকা করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।

সর্বশেষ খবর