রবিবার, ২২ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা
ইউপি নির্বাচন

কাউন্দিয়া-ফরিদপুরে নিহত দুই, আহত শতাধিক

নিজস্ব প্রতিবেদক

কাউন্দিয়া-ফরিদপুরে নিহত দুই, আহত শতাধিক

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় সাভারের কাউন্দিয়া ও ফরিদপুরের ভাঙ্গায় দুজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়াও জামালপুরে সংঘর্ষ হয়েছে। এসব সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। গত কাউন্দিয়ায় সংঘর্ষের পর গতকাল দেহরক্ষীসহ আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে আটক করা হয়েছে।

জানা গেছে, রাজধানী সংলগ্ন সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নে নির্বাচনী সহিংসতায় হাজী শহিদুল্লাহ ব্যাপারী (৬০) নিহত হয়েছেন। আরও অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।

গত শুক্রবার দিনগত মধ্য রাতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী সাইফুল ইসলাম খান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তার চাচাতো ভাই আতিকুর রহমান খান শান্তর সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের পর স্বতন্ত্র প্রার্থীর আরও দুজন সমর্থক স্থানীয় আলী আহম্মদ খার পুত্র শাহ আলম খাঁ ও প্রতিবেশী আসলাম মিয়াকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকজন ধরে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাদের হদিস মেলেনি। এ ঘটনায় গতকাল ভোরে পুলিশ আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইফুল আলম খানকে তার দেহরক্ষী অসীমসহ আটক করে। সংঘর্ষে গুরুতর আহতদের মধ্যে রয়েছেন জমশের আলী দুলু (৬০), ইসহাক শিকদার (৪০), সেন্টু মিয়া (৫৬), তৌহিদুল ইসলাম শাকিল (৫২), হাজী শফিকুল ইসলাম (৫০) ও নাজিম উদ্দিন। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ নাজিম উদ্দিনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। কাউন্দিয়ায় রাতের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, ইউনিয়নের সিংঘাসা গ্রামে আওয়ামী লীগের দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইফুল আলম খান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আতিকুর রহমান খান শান্তর সমর্থকদের মধ্যে প্রথমে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এরপর শুরু হয় সংঘর্ষ। একপর্যায়ে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। গুলিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক হাজী শহিদুল্লাহ ব্যাপারীর মৃত্যু হয়। নিহত শহিদুল্লাহ কাউন্দিয়া এলাকার মৃত ফটিক চানের ছেলে। ওয়াকিবহাল সূত্রগুলো জানিয়েছে, কাউন্দিয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে বর্তমান চেয়ারম্যান সাইফুল আলম খান ও তার চাচাতো ভাই আতিকুর রহমান খান শান্তর মধ্যে। দুজনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বর্তমান চেয়ারম্যান দল থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। অপর ভাই দল থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস মার্কায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাইফুল ইসলাম খান এক সময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বিএনপির নেতা থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের সবধরনের কার্যক্রম জোরপূর্বক বন্ধ করে রেখেছিলেন। ১৯৯৭ সালে তিনি গুলি চালিয়ে কাউন্দিয়া কৃষক লীগের সমাবেশ পণ্ড করে দেন। গুলিতে আহত হয়েছিলেন অন্তত ৫০ জন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী। এ ছাড়াও র্যাবের দুই গোয়েন্দা সদস্যকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এমন অভিযোগে ২০১০ সালে সাইফুল আলম খানকে দুই সঙ্গীসহ র্যাবের হাতে গ্রেফতার হতে হয়েছিল। এ ছাড়া খাল দখলের সময় প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি চালানোর দায়ে সাইফুল আলম খানসহ ১৯ জনকে র্যাব-৪-এর হাতে আটক হতে হয়েছিল। রাতের ঘটনা সম্পর্কে গতকাল আনারস মার্কা নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী শান্ত খান বলেন, পথসভা করার সময় পরিকল্পিতভাবে সাইফুল আলম খানের লোকজন হামলা চালায়। ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আমজাদ হোসেন বলেন, বিনা কারণে সাইফুল আলম খানের লোকজন হামলা চালায়। তবে আটক সাইফুল ইসলাম খানের পরিবারের অভিযোগ, থানায় সাইফুল আলম খানের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। দেখা করতে পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে না।

ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ ঘটনাস্থল কাউন্দিয়া থেকে জানান, কাউন্দিয়া ইউনিয়নে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অনেকেই। এ ঘটনায় চেয়ারপ্রার্থী সাইফুল আলম খানকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এদিকে কাউন্দিয়ায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে পুলিশের নৌ টহল ব্যবস্থা। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, নির্বাচনকে কেউ যাতে প্রভাবিত করতে না পারে এ জন্য সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থার পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ঢাকার পাশের ইউনিয়নগুলোর নির্বাচনকে বিশেষ প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।

ধারাবাহিকভাবে সন্ত্রাসী, অবৈধ অস্ত্রধারী ও সব ধরনের অপরাধীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

উল্লেখ্য, রাজধানীর পার্শ্ববর্তী ১৩টি ইউনিয়নে ৪ জুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইউনিয়নগুলো হলো— গাবতলী সংলগ্ন সাভার উপজেলার আমিন বাজার, কাউন্দিয়া, তেঁতুল ঝোড়া, ভার্কুতা, বিরুলিয়া, সাভার, বনগাঁও, শিমুলিয়া, ধামসোনা, ইয়ারপুর, আশুলিয়া, পাথালিয়া ও কেরানীগঞ্জ উপজেলার শাক্তা ইউনিয়ন।

ফরিদপুরে নিহত এক : ফরিদপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার নুরুল্যাগঞ্জ ইউনিয়নে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফকুরহাট পূর্বপাড়া গ্রামে দুই মেম্বার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে মোসলেম মিয়া (৬০) নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন। শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকের ওই ঘটনায় এলাকায় তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নুরুল্যাগঞ্জ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রতিদ্বন্দ্বী দুই মেম্বার প্রার্থী মহিউদ্দিন আহমেদ ও আক্কাস মিয়ার সমর্থকদের মধ্যে গত কয়েক দিন ধরে বাকবিতণ্ডা চলছিল। মহিউদ্দিনের লোকজন আক্কাস মিয়ার সমর্থকদের ভোট চাইতে গেলে তাদের বাধা প্রদান করা হচ্ছিল। শুক্রবার রামে আক্কাস মিয়ার সমর্থক মোসলেম মিয়া ভোট চাইতে গেলে তাতে বাধা প্রদান করে মহিউদ্দিনের সমর্থকেরা। এ নিয়ে দুই পক্ষের মাঝে কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আক্কাসের সমর্থক মোসলেম মিয়াকে বেধড়কভাবে পিটিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। ঘটনার পর থেকে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছে প্রশাসন।

সরিষাবাড়ীতে আহত অর্ধশতাধিক : জামালপুর প্রতিনিধি জানান, সরিষাবাড়ী উপজেলায় নির্বাচনী সহিংসতায় চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ অর্ধ শতাধিত আহত হয়েছেন। ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার রাত ৮টার দিকে ডোয়াইল ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী মোরশেদুল ইসলামের পক্ষে একটি নির্বাচনী মিছিল শেষে গবিন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সমাবেশ করার সময় আওয়ামী লীগ প্রার্থী নাছির উদ্দিন রতনের কর্মীরা রামদা, হকিস্টিক, লাঠিসোঁটা নিয়ে সমাবেশে হামলা চালায়। দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের একপর্যায়ে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়। সংঘর্ষে কমপক্ষে ২৫ জন আহত হন। সংঘর্ষ চলাকালে বিএনপি সমর্থক নুরুল ইসলাম, আবদুর রশিদ, রেজাউল, ইদ্রিস আলী, নজরুল ইসলাম ও আবুল হোসেনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এবং ইমান আলী, আবদুল জলিল, কালাম ও মোয়াজ্জেমের বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাঙচুর করে মালামাল লুটের ঘটনা ঘটে। তবে ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগ প্রার্থী নাছির উদ্দিন রতন বিএনপিকে দায়ী করে দাবি করেছেন, শুক্রবার বিকালে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ কর্মী তার পক্ষে ডোয়াইল ইউনিয়নের গবিন্দপুরে প্রচারণায় গেলে কামাল ও আলহাজ নামে দুই কর্মীকে পিটিয়ে আহত করে স্থানীয় বিএনপি কর্মীরা। এই দুই কর্মী এখনো জামালপুর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।

মানববন্ধনে হামলা : এদিকে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে ডোয়াইল বাজার এলাকায় আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের উদ্যোগে প্রায় দেড় হাজার নারী-পুরুষের একটি মানববন্ধনের প্রস্তুতি চলাকালে পুলিশ বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মীদের ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে পুলিশ মানববন্ধনে লাঠিচার্জ শুরু করলে প্রার্থী নাছির উদ্দিন রতনের কর্মীরাও মানববন্ধনে লাঠিসোঁটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে। এতে বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কালাম আজাদসহ কমপক্ষে ২৫ জন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ছয় রাউন্ড শটগানের ফাঁকা গুলি ছোড়ে।

এ ব্যাপারে সরিষাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিল্লাল উদ্দিন জানান, দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর লোকজন মুখোমুখি অবস্থান নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট ছোড়া হয়েছে। লাঠিচার্জের কথা অস্বীকার করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর