শনিবার, ২৫ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

ঢাকার রাজনীতিতে শুধুই হতাশা

আওয়ামী লীগে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি সাড়ে তিন বছরেও

রফিকুল ইসলাম রনি

ঢাকার রাজনীতিতে শুধুই হতাশা

সম্মেলনের তিন বছর ছয় মাস পার হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের। দুই নেতা দিয়ে চলছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম। একই অবস্থা ওয়ার্ড ও থানাগুলোতেও। দলীয় কর্মকাণ্ডে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেও দীর্ঘদিনেও পদ না পাওয়ায় নেতা-কর্মীরা হতাশায় ভুগছেন। পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা না হওয়ায় অনেকেই দলীয় কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয় থাকছেন। কেউ কেউ ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন নিজ ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে। আবার জীবনে একদিন মহানগরের রাজনীতিতে না থাকলেও হাইব্রিড নেতারা পদের জন্য মুখিয়ে রয়েছেন। কাঙ্ক্ষিত পদ পেতে তারা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ মহানগরের কমিটি গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই নেতা এবং কেন্দ্রের শীর্ষ নেতাদের বাসা-বাড়ি ও অফিসে ধরনা দিচ্ছেন। তথ্যমতে, ২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পরপরই সংগঠনকে গতিশীল করতে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে বিভক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সহযোগী সব সংগঠনকে বিভক্ত করা সম্ভব হলেও মূল দল আওয়ামী লীগ বিভক্ত করা আজ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। মূলত অবিভক্ত মহানগর কমিটির দায়িত্বরত নেতাদের প্রবল আপত্তির মুখে বারবার পিছু হটতে বাধ্য হন কেন্দ্রীয় নেতারা। ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় মহানগরকে দুই ভাগে বিভক্ত করার সিদ্ধান্তে কমিটি ঘোষণায় বিলম্ব হয়। এরপর গত বছর ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে দল সংগঠিত করতে উত্তরে কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পাদক কর্নেল (অব.) ফারুক খান এবং দক্ষিণে কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ড. আবদুর রাজ্জাককে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তী সময়ে তাদের বিভক্ত মহানগরের কমিটি গঠনের মূল দায়িত্ব দেন দলীয় সভানেত্রী। তারা মহানগর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সমন্বয় করে একাধিকবার কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেন। কয়েক দফা কমিটি ঘোষণার উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তা হয়ে ওঠেনি। সর্বশেষ সম্মেলনের তিন বছর চার মাস পর গত ১০ এপ্রিল বিভক্ত মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়। এতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণে আবুল হাসনাতকে সভাপতি ও শাহে আলম মুরাদকে সাধারণ সম্পাদক এবং উত্তরে এ কে এম রহমতউল্লাহকে সভাপতি ও সাদেক খানকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে ঘোষণা করা হয় থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম। তিন বছর চার মাস পর মহানগরের অভিভাবক পেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা না হওয়ায় নেতারা হতাশায় ভুগছেন।

মহানগর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দিয়েছেন দুই মহানগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত দক্ষিণ সমন্বয়ক আবদুর রাজ্জাক এবং উত্তরের কর্নেল (অব.) ফারুক খান। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তারা খসড়া পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে আলোচনা করেছেন। এখন চূড়ান্ত কমিটি নিয়ে আবার বৈঠক করার কথা রয়েছে। সূত্রটি বলছে, পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে নবীন-প্রবীণদের সমন্বয় করা হচ্ছে। এ ছাড়া নতুন কমিটিতে আনা হচ্ছে নগরের সাবেক ছাত্রনেতাদের। সূত্রমতে, দীর্ঘদিন ধরে মহানগরের রাজনীতি ছিল মূলত সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মরহুম এম এ আজিজ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া-কেন্দ্রিক। কিন্তু নতুন কমিটিতে অনেকটাই কোণঠাসা তাদের অনুসারীরা এমন অভিযোগ করেছেন পদপ্রত্যাশী কেউ কেউ। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তাদের থাকা না থাকা নিয়েও তৈরি হয়েছে ধূম্রজাল। এ নিয়ে হতাশায় আছেন নগরের সাবেক নেতারা। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক এক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে ছিলাম। দলীয় পদে রাখলেও আওয়ামী লীগ করব, না রাখলেও করব। এর পরও চাই দল যেন ত্যাগীদের মূল্যায়ন করে।’ তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমানে থানা ও ওয়ার্ডের কমিটিতে আজিজ, মায়া, সাঈদ খোকনের অনুসারীদের রাখা হয়নি। এক থানা থেকে ভাড়া করে এনে অন্য থানায় নেতা বানানো হয়েছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মহানগর কমিটি গঠন করবেন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মহানগরের প্রত্যেক নেতা-কর্মী সম্পর্কে তিনি আমাদের চেয়ে বেশি জানেন। যারা বিগত দিনে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন তারাই স্থান পাবেন কমিটিতে। কে কোন ভাইয়ের লোক সেটা বড় কথা নয়, আমরা সবাই জননেত্রী শেখ হাসিনার রাজনীতি করি। যাকে দিয়ে শেখ হাসিনার হাত শক্তিশালী হবে তারাই থাকবেন কমিটিতে।’ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ এমপি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও আমরা প্রাথমিক কাজ শেষ করেছি। এখন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।’ উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে এ কমিটি গঠন করা হবে, যারা আগামীতে আন্দোলন-সংগ্রামে ঢাকা মহানগর উত্তরের নেতৃত্ব দেবেন। ইতিমধ্যে আমরা কাজ এগিয়ে নিয়েছি।’ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সমন্বয়ক ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াটি ফাইনাল স্টেজে আছে। আমাদের কাজ সম্পন্ন করেছি। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলেই কমিটি ঘোষণা করা হবে।’ পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগেই এ কমিটি ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর