শনিবার, ২৫ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

অবৈধভাবে ৪৮২ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন বেসরকারি শিক্ষকরা

আকতারুজ্জামান

দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত কিছু শিক্ষক ভুয়া তথ্য দিয়ে গত ৩৫ বছরে সরকারি কোষাগার থেকে ৪৮২ কোটিরও বেশি টাকা অবৈধভাবে বা বিধি-বহির্ভূতভাবে তুলে নিয়েছেন। জাল সনদের মাধ্যমে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করা, ভুল তথ্য দিয়ে প্রযোজ্য স্কেলের উচ্চতর স্কেলে বেতন উত্তোলন, উন্নয়ন কার্যক্রমের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ সঠিক কাজে ব্যয় না করাসহ নানাবিধ বেআইনি ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে এসব টাকা উত্তোলন করেছে বেসরকারি শিক্ষক-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অভিযোগ রয়েছে, অভিযোগের সত্যতার সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বেশির ভাগ শিক্ষকের বিরুদ্ধেই কোনো ব্যবস্থা নেয়নি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদফতর। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র এমন তথ্য জানিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রটি জানায়, সরকারি কোষাগার থেকে অনিয়মের মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া টাকা আদায়ের জন্য মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের কাছে সুপারিশ করেছে। তবে এসব আত্মসাৎ করা টাকা আদৌ আদায় করা হয়েছে কিনা বা কত অংশ আদায় করা হয়েছে এমন কোনো তথ্য সুস্পষ্ট করে জানাতে পারেনি মাউশি অধিদফতর। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ১৯৮১-৮২ থেকে ২০১৫ সালের মে পর্যন্ত মোট ৪৮২ কোটি ৭৮ লাখ ৫২ হাজার ৫৫৭ টাকা তুলে নিয়েছে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। ৩৪ দফায় মোট ৫১ হাজার ৯২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তদন্ত করে এসব জানতে পেরেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর। মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত পরিদর্শন ও নিরীক্ষায় এসব চিত্র উঠে এসেছে। আরও জানা গেছে, অবৈধভাবে অর্থ উত্তোলনকারী অনেক শিক্ষকই ইতিমধ্যে অবসরে চলে গেছেন। কেউ কেউ রয়েছেন বহাল তবিয়তে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী ২০১০-১১ সেশনে প্রায় ৮ কোটি টাকা, ২০১১-১২ সেশনে প্রায় ৭ কোটি, ২০১২-১৩ সেশনে প্রায় ১৫ কোটি, ২০১৩-১৪ সেশনে ২১ কোটি টাকার বেশি অবৈধভাবে উত্তোলন করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের পরিচালক অধ্যাপক মো. মফিজ উদ্দিন আহমদ ভূঁইয়ার কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, দীর্ঘ ৩৫ বছরের তথ্য এগুলো। প্রতি বছরই মন্ত্রণালয়ে এসব প্রতিবেদন পাঠানো হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করে মাউশিতে প্রতিবেদন পাঠায়। তিনি আরও বলেন, আমরা এসব প্রতিবেদন তৈরি করে অর্থ আদায়ের বা ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করতে পারি মাত্র। ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব মাউশির। এসব ব্যাপারে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব তথ্য সঠিক নয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর (ডিআইএ) পরিদর্শনের পর নিশ্চিত হয়ে এসব তথ্য তৈরি করেছে উল্লেখ করলে তিনি বলেন, এ অধিদফতর নিয়েই আমার প্রশ্ন রয়েছে। তারা যেসব তথ্য দিচ্ছে তা সম্পূর্ণ সঠিক নয়। তিনি জানান, পত্রপত্রিকার বিভিন্ন সংবাদ দেখে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের কাছে তথ্য চেয়ে দেখেছি তারা ভুল তথ্য দেয়। শিক্ষকদের যেসব অনিয়মের কথা তারা উল্লেখ করে অনেক সময়েই তা অসত্য প্রমাণ হয়। জাল সনদে অনেক শিক্ষক চাকরি করে সরকারি কোষাগার থেকে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে জানালে তিনি বলেন, ডিআইএর যেসব কর্মকর্তা তদন্তে যান তাদের টাকা দিলেই জাল সনদ সঠিক হয়ে যায় বলেও অভিযোগ করেন ফাহিমা। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিআইএর এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা কোনো সার্টিফিকেটকে ভুয়া বা জাল বলি না। এমন অভিযোগ আসলে সার্টিফিকেট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে জানতে চাই। ‘সনদ তাদের দেওয়া নয়’ এমন তথ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে পেয়েই সেই সার্টিফিকেটকে ভুয়া বলে উল্লেখ করা হয় পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের পক্ষ থেকে।

সর্বশেষ খবর