শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

সেনাবাহিনীর সঙ্গে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের বন্দুকযুদ্ধ, আটক ১৪

রাঙামাটি প্রতিনিধি

রাঙামাটিতে পার্বত্য শান্তিচুক্তিবিরোধী উপজাতীয়দের আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় প্রায় ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে। এ সময় সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত বেশ কিছু সরঞ্জামও উদ্ধার করা হয়। গতকাল সকালে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার সাবেক্ষ্যং ইউনিয়নের মধ্য আদাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও  স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার সাবেক্ষ্যং ইউনিয়নের মধ্য আদাম নামক এলাকার একটি বিদ্যালয়ে ইউপিডিএফের সশস্ত্র গ্রুপ অবস্থান করছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খাগড়াছড়ি রিজিয়নের মহলছড়ি জোন কমান্ডার লে. কর্নেল হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বে একদল সেনা সদস্য ওই এলাকা চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। ভোর সাড়ে ৫টার সময় অভিযান শুরু করলে সেনা সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীরা। এ সময় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও পাল্টা গুলি ছোড়া হয়। উভয় পক্ষের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী থেমে থেমে গুলিবিনিময়ের একপর্যায়ে ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীরা পিছু হটে। পরে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা অন্তত ১৪ জনকে আটক এবং সামরিক পোশাকসহ বিভিন্ন ধরনের সামরিক সরঞ্জাম উদ্ধার করে। নিরাপত্তা বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, সম্প্রতি আইসিটি অ্যাক্ট আইনে আটককৃত এক ইউপিডিএফ সদস্যের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে নিরাপত্তা বাহিনী জানতে পারে নানিয়ারচর উপজেলা থেকে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা এসে স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আস্তানা বানিয়ে সামরিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। ঘটনাস্থলটি জনবসতিপূর্ণ হওয়ায় নিরীহ জনগণের হতাহতের আশঙ্কায় সেনা সদস্যরা রাতে অপারেশনে না গিয়ে ভোর হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। ভোর রাতে সেনা সদস্যদের অপারেশনের সময় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরাও ব্রাশফায়ার শুরু করে। সেনাবাহিনী পাল্টা জবাব দিতে থাকে। কিন্তু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নিরীহ পুরুষ, মহিলা ও শিশুদের রক্ষার্থে সামরিক অপারেশন পরিচালনা করতে সেনাবাহিনীকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। সূত্র জানায়, এ সময় ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের কয়েকজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও ১৪ জনকে আটক করে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। পালিয়ে যাওয়ার সময় ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা তাদের বেশ কিছু সামরিক পোশাক ও সামরিক সরঞ্জাম ফেলে যায়। সেনাবাহিনী সেগুলো উদ্ধার করেছে। উদ্ধারকৃত বিভিন্ন ডকুমেন্ট থেকে ইউপিডিএফের বিভিন্ন সমর কৌশল ও সামরিক পরিকল্পনার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে বলে জানা গেছে। ইউপিডিএফের রাঙামাটি জেলা ইউনিট প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগ বাবলু চাকমা স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে সংগঠনটির সংগঠক সচল চাকমা এ ঘটনায় ওই গ্রামের প্রায় ১৪ জনকে আটক করার কথা স্বীকার করেন। আটককৃতরা হলেন— বৃষকেতু চাকমা (৪০), পূর্ণ চন্দ্র চাকমা (৬০), এডিশন চাকমা (১৬), স্বপন চাকমা (৩২), পরেশ চাকমা (২৯), তুঙ্গ্যা চাকমা (২২), নয়ন জীবন চাকমা (৪২), বেন্দ চাকমা (৩৫), পিং-প্রফুল্ল চাকমা, নিতু চাকমা (৪১), চরণ চাকমা (২৬), মণি চাকমা (৩৫), রূপেন্টু চাকমা, ওয়াসিম চাকমা, পূর্ণ বসু চাকমা (৩৫)। রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মো. শহিদুল্লাহ এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, সশস্ত্র সন্ত্রাসী আস্তানায় নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযান শেষ হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রাতে আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ রাশিদুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

সর্বশেষ খবর