শনিবার, ২০ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

উত্তরবঙ্গজুড়ে ভাদরকাটানি উৎসব

প্রতিদিন ডেস্ক

উত্তরবঙ্গজুড়ে ভাদরকাটানি উৎসব

দেশের উত্তরাঞ্চল জুড়ে চলছে ঐতিহ্যের ভাদরকাটানি উৎসব। বাংলা ১ ভাদ্র থেকে এ উৎসবের সূচনা হয় এবং চলে মাসজুড়ে। ধুমধাম করে বিশেষভাবে এ উৎসব পালন করা হয় পঞ্চগড়,দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁওসহ বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চল এবং ভারতের পশ্চিম ও দক্ষিণ দিনাজপুর মালদহ, মুর্শিদাবাদে। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, শরৎ ঋতু বিরহের ঋতু। এ মাসে নববধূকে স্বামীর মুখ দেখতে হয় না। তাতে অমঙ্গল হয়। তাই ভাদরকাটানির জন্য বাবার বাড়িতে চলে যান নববিবাহিত বধূরা। স্থানীয়দের বিশ্বাস, বিবাহিত জীবনের প্রথম ভাদ্র মাসের এক থেকে দশ তারিখ পর্যন্ত স্বামীর মুখ দেখলে অমঙ্গল হয়। তা ছাড়া সাধারণত এ মাসে বিয়ের কোনো আয়োজনও তেমন একটা হয় না। প্রচলিত এ প্রথাটি যুগ যুগ ধরে এ অঞ্চলের বাঙালি পরিবারের মধ্যে চলে আসছে। নিয়ম অনুযায়ী, কনেপক্ষ শ্রাবণ মাসের দু-একদিন বাকি থাকতেই বরপক্ষের বাড়িতে সাধ্যমতো বিভিন্ন রকমের ফল, মিষ্টি, পায়েসসহ নানা রকম পিঠা-পুলি নিয়ে যায়। বরপক্ষও সাধ্যমতো তাদের আপ্যায়ন করে। বাড়িতে কনেপক্ষের লোকজন আসায় চারদিকে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। এই উৎসবে চলে ছাগল, মুরগি, ডিম, দুধ, কলা, দই, চিড়া, মুড়ি, পায়েস, পুলি, পিঠা খাওয়ার পালা।

আমাদের পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানিয়েছেন, পঞ্চগড়ে নানা আয়োজনে এ উৎসব চলছে। উৎসবে বধূপক্ষ কন্যাকে আনতে যান নানা আয়োজন করে। একইভাবে স্বামীপক্ষও ভাদরকাটানি শেষে বধূকে আনতে যান। এই আনা-নেওয়াই উৎসব। আত্মীয়-স্বজন,পাড়া-প্রতিবেশীর মধ্যে ভাদরকাটানি নিয়ে এরই মধ্যে ধুম পড়ে গেছে। চলছে নানা ধরনের পিঠা আর মিষ্টান্ন তৈরির কাজ। এ পিঠা আর মিষ্টান্নের হাঁড়িকে পঞ্চগড়ের স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ‘সান্দোস’। ওয়াকিবহালরা জানান, উৎসবটি এখন প্রতীকী অর্থে পালিত হচ্ছে। সময়ের অভাবে এখন আর গোটা ভাদ্র মাস বাপের বাড়িতে থাকতে হয় না বধূকে। ৭ থেকে ১৫ দিন থাকলেই চলে। তবে এ উৎসবে শামিল হন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষ।

দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুর শহরের রামনগরের বেলালউদ্দিন জানান, তার বউ গেছে বাপের বাড়িতে। এর আগে বউকে বিদায় দিতে হয়েছে। কনের বাড়ির লোকজন দল বেঁধে কন্যাকে নিতে এসেছে। এর জন্য ডিম, দুধ, কলা, দই, চিড়া, মুড়ি, পায়েস, পুলি, পিঠার আয়োজন করতে হয়েছে। বীরগঞ্জের আবদুর রাজ্জাক জানান, ভাদরকাটানি উৎসব অসাম্প্রদায়িক একটি উৎসব। এ অঞ্চলে এই উৎসব দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এক সময় সভ্রান্ত হিন্দু সম্প্রদায় এ উৎসব জাঁকজমকভাবে পালন করত। এখন ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সবাই পালন করছেন।

সর্বশেষ খবর