রবিবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

অপমৃত্যু মামলার তদন্তেও অপমৃত্যু

মাহবুব মমতাজী

বাসা-বাড়িতে লাশ উদ্ধার আর সড়ক দুর্ঘটনার মধ্যদিয়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে অপমৃত্যুর ঘটনা। আবার কেউ কেউ পানিতে ডুবে এবং গলায় ফাঁস নিয়েও আত্মহত্যা করছে। যেগুলোর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। আর থানায় করা হয় অপমৃত্যুর মামলা। সেই মামলার পরবর্তী অগ্রগতি থমকে যায় ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সদিচ্ছার অভাবে। অনেক ক্ষেত্রে থানা পুলিশ ও চিকিৎসক একে অপরকেও দোষারোপ করেন। তবে এসব অপমৃত্যুর ঘটনার পেছনের রহস্য উদঘাটনের কাজ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদাসীনতায় ঢাকা পড়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে ভুক্তভোগীদের। পুলিশ বলছে, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ঠিকমতো না পাওয়াতে আটকে থাকে তদন্ত কাজ। বেশিরভাগ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ডাক্তারের কাছে ঝুলে থাকে বছরের পর বছর। এমনিভাবে অপমৃত্যুর মামলার তদন্তগুলোরও হয় অপমৃত্যু। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা    বলছেন, তাদের রিপোর্ট দিতে সর্বোচ্চ সাত দিন সময় লাগে। আর ভিসেরা রিপোর্ট পেতে ১৫-৩০ দিন সময় লাগে। সে ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট দিতেও দেরি হয়। ঢাকা মহানগরের ৪৯টি থানায় গত ছয় মাসে গড়ে ১৫টি করে অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের কর্মকর্তারা। আলোচিত দু-একটির ঘটনা ছাড়া তেমন কোনো মামলার অগ্রগতি নেই। রাজধানীর ভাটারা থানায় গত জানুয়ারি থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত ২৯টি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। গত ২৩ আগস্ট পর্যন্ত যাত্রাবাড়ী থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে ৩৭টি। একই সময় পর্যন্ত মিরপুর মডেল থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে ২৫টি। সবুজবাগ থানায় গত ২২ আগস্ট পর্যন্ত অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে আটটি। এর মধ্যে একটি আগুনে পুড়ে, একটি সড়ক দুর্ঘটনার, একটি বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে, একটি পানিতে ডুবে এবং চারটি গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যার। চলতি বছরের শুরু থেকে গত ২৪ আগস্ট পর্যন্ত গুলশান থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে ১৫টি। ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত এক ব্যক্তির স্ত্রী অভিযোগ করেন, গত প্রায় দুই মাস আগে যাত্রাবাড়ী এলাকায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন তার স্বামী। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। এ ঘটনায় তিনি যাত্রাবাড়ী থানায় বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সেই মামলার কোনো কুলকিনারা তিনি জানতে পারেননি। অপমৃত্যুর মামলা তদন্তের বিষয়ে মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, যখনই মামলা হয় তখনই সেটার তদন্ত শুরু হয়। কোনো মামলার তদন্ত ময়নাতদন্ত রিপোর্টের ওপর নির্ভর করে না। আবার কিছু কিছু ঘটনা আছে যেটি ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য আটকে যায় তদন্ত কাজ। পুলিশ জানায়, গত বছরের ২৯ আগস্ট রাজধানীর গুলশানের নিকেতন আবাসিক এলাকা থেকে সুশান্ত রায় নামে ব্র্যাকের এক কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশটি উদ্ধারের সময় তার মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। আর সেখান থেকে রক্ত ঝরছিল। তবে সুশান্তের গলা কক্ষের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে রশি পেঁচানো অবস্থায় পাওয়া যায়। লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। সুশান্ত ব্র্যাকের পটুয়াখালী জেলা সদরের এরিয়া ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি খুলনা জেলার ডুমুরিয়ার আমরউড়িয়াতে। ঘটনার এক বছর হলেও তার কোনো রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। জানতে চাইলে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, ব্র্যাক কর্মকর্তার লাশ উদ্ধারের পর যে অপমৃত্যুর মামলা হয়েছিল তার তদন্তের কোনো অগ্রগতি হয়নি ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না পাওয়ার কারণে। আমরা বেশ কয়েকবার চাইলেও ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক সেই রিপোর্ট এখনো দেয়নি। বিশেষ করে ডা. সোহেল স্যারের কাছে রিপোর্ট থাকলে তো সেটি আর সহজে পাওয়াই যায় না। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আমার কাছে এক বছর ধরে আটকে থাকার তো কথা না। সেই অভিযোগ সঠিক নয়। সাধারণত আমরা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এক সপ্তাহের মধ্যেই দিয়ে দেই। আর ভিসেরা রিপোর্টের জন্য ১৫-৩০ দিন সময় লাগে।

সর্বশেষ খবর