বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিদ্বেষমূলক বক্তব্যে এনজিওর নিবন্ধন বাতিল, বিল পাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাংবিধানিক কোনো প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিদ্বেষমূলক কিংবা অশালীন কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য দিলে নিবন্ধন হারাবে সেই বেসরকারি সংস্থা বা এনজিও। নিবন্ধন বাতিল বা কার্যক্রম স্থগিত, অনুমোদিত বিদেশি অনুদান গ্রহণে তিন গুণ জরিমানার বিধান রেখে বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবকমূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন বিল, ২০১৬ গতকাল সংসদে পাস হয়েছে। বিলে সংবিধান এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিদ্বেষমূলক ও অশালীন কোনো মন্তব্য করলে বা রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড করলে বা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডে  অর্থায়ন, পৃষ্ঠপোষকতা বা সহায়তা করলে বা নারী ও শিশু পাচার বা মাদক ও অস্ত্র পাচারের সংশ্লিষ্টতা থাকলে, তা দেশের প্রচলিত আইনে অপরাধ বলে গণ্য হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনে গতকাল কণ্ঠ ভোটে বিলটি পাস হয়। বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন সংসদকাজে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। এর আগে বিলের ওপর আনীত সংশোধনী ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব কণ্ঠ ভোটে নাকচ হয়ে যায়। আগে ১৯৭৮ সালে জারিকৃত ফরেন ডোনেশনস (ভলান্টারি অ্যাকটিভিটি) রেগুলেশন অর্ডিন্যান্স ও ১৯৮২ সালে জারিকৃত ফরেন কন্ট্রিভিউশন (রেগুলেশন) অর্ডিন্যান্সবলে বাংলাদেশে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) পরিচালনা ও বিদেশি অনুদান নেওয়া হতো। সামরিক শাসনামলের জারিকৃত অধ্যাদেশ দুটি আদালতের রায়ে বাতিল হয়। একত্রে নতুন আইন করতে এ বিলটি করা হয়েছে। সংবিধানের চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিলটি সংসদে উত্থাপিত হয়। পরে বিলটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেয় আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রিপোর্টে বিলটি সংশোধিত আকারে পাসের সুপারিশ করেন। বিলে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) পরিচালনা ও বিদেশি অনুদান নেওয়ার ক্ষেত্রে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ছাড়া অনুমোদন ছাড়া কোনো প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন না করার বিধান করা হয়েছে। বিলে বলা হয়েছে, একটি এনজিও ১০ বছরের জন্য নিবন্ধন পাবে। তবে আইন অমান্য করলে যে কোনো সময় নিবন্ধন বাতিল বা স্থগিত করা যাবে। এনজিওতে বিদেশি উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষেত্রেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা ছাড় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিদেশি অনুদান একটি নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাবে (মাদার অ্যাকাউন্ট) থাকতে হবে। ব্যয়ের হিসাব অডিট করার পর এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালকের কাছে দিতে হবে। এনজিওবিষয়ক ব্যুরো এসব বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কার্যক্রম পরিদর্শন, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করবে। আইন না মানলে প্রথমে সতর্ক করা হবে। নিবন্ধন বাতিল ও জরিমানার বিধানও আইনে রাখা হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ বা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী, সংসদ সদস্য, স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল, সুপ্রিমকোর্টের বিচারকসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে অধিষ্ঠিত ব্যক্তি, সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা বা কর্মচারী, এ আইনের অধীন নিবন্ধিত এনজিও বা সংস্থার কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী বৈদেশিক অনুদান গ্রহণ করতে পারবে না। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তালিকাভুক্ত কিংবা নিষিদ্ধ ব্যক্তি বা সত্তাও বিদেশি অনুদান নিতে পারবে না বলে প্রস্তাবিত আইনে বলা আছে। এ ছাড়া বিলে নিবন্ধন বাতিল বা কার্যক্রম স্থগিত, বিধি প্রণয়ন ক্ষমতা, নির্বাহী আদেশ জারিসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর