মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বর্ণাঢ্য আয়োজন কাউন্সিলে

উৎসবমুখর আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা

রফিকুল ইসলাম রনি

বর্ণাঢ্য আয়োজন কাউন্সিলে

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নৌকার আদলে তৈরি হচ্ছে মঞ্চ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশের অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিল জাঁকজমকপূর্ণ, উৎসবমুখর ও আনন্দঘন পরিবেশে করতে চলছে মহাকর্মযজ্ঞ। স্মরণকালের সেরা কাউন্সিল সফল করতে দিন-রাত সমানতালে চলছে নেতাদের বৈঠক ও নতুন নতুন কর্মপরিকল্পনা। ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্ব উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলছে দুর্বার, এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার’—এই স্লোগানে আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুই দিনব্যাপী এই কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসায় দম ফেলার সময় নেই দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের।

রাজধানীসহ সারা দেশে বর্ণিল সাজসজ্জার মাধ্যমে উৎসবমুখর পরিবেশের পাশাপাশি ঢাকায় লাখো নেতা-কর্মী সমবেত করারও পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। ইতিমধ্যে কাউন্সিলের মূলভেন্যু সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ধানমন্ডি দলীয় সভাপতির কার্যালয়কে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। আগামীকাল ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হবে রাজধানীর প্রবেশদ্বার ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আলোকসজ্জা, এলইডি মনিটর স্থাপনের কাজ। এ লক্ষ্যে স্থানীয় এমপি, স্থানীয় ও সাবেক ছাত্রনেতাদের দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে। প্রতিদিনই উপ-কমিটির নেতারা পৃথক পৃথক বৈঠক করছেন। কাউন্সিলের সার্বিক প্রস্তুতি বিষয়ে অবগত করছেন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।

দৃষ্টিনন্দন কর্মব্যস্ত ধানমন্ডির কার্যালয় ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান : কাউন্সিলকে সামনে রেখে অনেক দিন ধরেই আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডি কার্যালয়কে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে সরকারের উন্নয়ন চিত্র। সন্ধ্যার পর ধানমন্ডি ৩/এ এলাকায় গেলেই চোখ ধাঁধানো রঙবেরঙের আলো চোখে পড়ে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সম্মেলন সফল করতে গঠিত উপ-কমিটির নেতা, সাবেক ছাত্রনেতা, জেলার নেতাদের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে উঠছে কেন্দ্রীয় কার্যালয়। রাত-দিন কাজ করছেন দফতর, প্রচার, অভ্যর্থনা, মঞ্চ সাজসজ্জা উপ-কমিটির নেতারা। অন্যান্য কমিটিও নিয়মিত বৈঠকে মিলিত হচ্ছে। গত দুই দিনে ধানমন্ডির কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় ও সহযোগী সংগঠন, জেলা ও পদপ্রত্যাশী নেতা এবং তাদের অনুসারীদের পদভারে মুখরিত কেন্দ্রীয় কার্যালয়। সারা দেশ থেকে কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের তালিকা আসছে দলীয় সভাপতির কার্যালয়ে। সেগুলো অফিস সহকারী থেকে শুরু করে দফতর উপ-কমিটির নেতারা সমন্বয় করছেন। আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের ভেন্যু নির্ধারণ করা হয়েছে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। প্রথম দিন ২২ অক্টোবর উদ্বোধনী অধিবেশন শেষে দ্বিতীয় দিন ২৩ অক্টোবর সারা দেশ থেকে আসা কাউন্সিলরদের নিয়ে পার্শ্ববর্তী ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হবে মূল কাউন্সিল অধিবেশন। গুরুত্বপূর্ণ এ অধিবেশনে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন। কাউন্সিলের মূল ভেন্যুতে মঞ্চ ও প্যান্ডেল সাজানোর কাজ চলছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে মঞ্চ ও সাজ-সজ্জা উপ-কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে চূড়ান্ত হওয়া এ মঞ্চের আকৃতি উদ্বোধন করা হয়েছে। নৌকা আকৃতির মঞ্চ হবে এবং উচ্চতা হবে মাটি থেকে ২৫ ফুট। মঞ্চের পেছনে ৩৫ ফুট উচ্চতার এলইডি পর্দা থাকবে। মঞ্চের সামনের দিকে স্বচ্ছ কাচের খুঁটিবিহীন একটি গ্যালারি তৈরি করা হবে। যার আকার হবে ২৩০ ফুট বাই ১২৫ ফুট। সেখানে সাত হাজার অতিথির আসন থাকবে। ৪০ হাজার মানুষের ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন প্যান্ডেল করা হচ্ছে। প্রতিদিনই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মঞ্চ সাজসজ্জা উপ-কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সেখানে কাজের তদারকি করছেন। কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ছাড়াও সিনিয়র নেতারা প্রতিদিনই আসছেন অগ্রগতি পরিদর্শনে। ইতিমধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারপাশে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। সবমিলিয়ে কর্মব্যস্ত স্থান হয়ে উঠেছে ধানমন্ডির সভাপতির কার্যালয় ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। মঞ্চ সাজসজ্জা উপ-কমিটির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সদস্য সচিব মির্জা আজম জানিয়েছেন, রাজধানীতে দিন-রাত ধরে বড় বড় এলইডি স্ক্রিনে দেখানো হবে দলটির ইতিহাস, ঐতিহ্য, অর্জন ও উন্নয়নের চিত্র। এরই মধ্যে সেসব ডকুমেন্টারি তৈরি করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মূলমঞ্চের সামনে বালি শিল্পের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য। কাউন্সিলকে সফল করতে নেতা-কর্মীদের মহাকর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে বলেও জানান তারা। 

 

আমন্ত্রণপত্র ও পোস্টার বিলি শুরু : আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিদেশি কূটনৈতিক, পেশাজীবী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণপত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। কাউন্সিল সফল করতে গঠিত অভ্যর্থনা উপ-কমিটি, দফতর উপ-কমিটি এবং প্রচার-প্রকাশনা উপ-কমিটির নেতারা সমন্বয় করে আমন্ত্রণপত্র বিতরণ করছেন। কূটনীতিকদের আমন্ত্রণপত্র বিতরণ করছে অভ্যর্থনা উপ-কমিটি। গতকাল থেকে দ্বিতীয় দফায় সারা দেশে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পোস্টার বিতরণ শুরু করেছে প্রচার-প্রকাশনা উপ-কমিটি। কাউন্সিল উপলক্ষে আগত কাউন্সিলর, ডেলিগেট, সাংবাদিকদের দেওয়া হবে ব্যাগ ও ক্যাপ। ব্যাগের একপাশে লেখা থাকছে কাউন্সিলের স্লোগান। আরেক পাশের উপরের অংশে লেখা ‘আল্লাহ সর্বশক্তিমান’। তার নিচে লেখা জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। আছে কাউন্সিলের লোগোও। প্রচার প্রকাশনা উপ-কমিটির সদস্য সচিব ড. হাছান মাহমুদ জানান, এই ব্যাগ ও ক্যাপ দেওয়া হবে কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের। ব্যাগে থাকবে সম্মেলন উপলক্ষে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রকাশনা। থাকবে একটি পানির বোতল এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য দুটি চকলেট। প্রচার-প্রকাশনা উপ-কমিটির সদস্য অসীম কুমার উকিল বলেন, অভ্যর্থনা কমিটির চেয়ারম্যানের ভাষণ ইতিমধ্যে ছাপানো হয়েছে। সাধারণ সম্পাদকদের রিপোর্ট ও শোকপ্রস্তাব ছাপাতে প্রিন্টে দেওয়া হয়েছে। আজকালের মধ্যেই দলীয় সভাপতির উদ্বোধনী ভাষণ পাওয়া যাবে। তারপরই প্রেসে দেওয়া হবে। তিনি জানান, ইতিমধ্যে কূটনৈতিক, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, পেশাজীবী এবং জামায়াত বাদে দেশের সব প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো শুরু হয়েছে।

ঘোষণাপত্রে থাকছে ভিশন ২০২১-২০৪১ এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের ডাক : আওয়ামী লীগের  প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বিশ্বের কারও কাছে মাথানত না করে, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুস্পষ্ট ঘোষণা থাকবে আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্রে। পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনসহ রূপকল্প ২০৪১ সালকে সামনে রেখে ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করবে আওয়ামী লীগ। শেখ সেলিম বলেন, বরাবরের মতো এবারও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে। এ ছাড়াও এ কমিটির সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেছেন, আমরা সবাই শেখ হাসিনার উন্নয়নগুলো নিয়ে বলি—এবারের কাউন্সিলের ঘোষণাপত্রেও তা দেওয়া হবে। তবে এবার শেখ হাসিনার মানবিক ও কল্যাণমুখী যেসব কাজ আছে সেগুলো নতুন একটি বিষয় সংযোজন করা উচিত।

প্রস্তুত দুই হাজার স্বেচ্ছাসেবক : দলের কাউন্সিল সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর পাশাপাশি মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগের দুই হাজার স্বেচ্ছাসেবক। ইতিমধ্যে তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক ও শৃঙ্খলা উপ-কমিটির সদস্য সচিব আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

মোরগ-পোলাও, মাটন রেজালায় আপ্যায়ন : খাদ্য উপ-পরিষদের বৈঠকে কমিটির আহ্বায়ক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে আমন্ত্রিত ৪০ হাজার কাউন্সিলর-ডেলিগেট আপ্যায়িত হবেন মোরগ-পোলাও, সাদা পোলাও এবং মাটন রেজালায়। ৪০ থেকে ৪৫ হাজার লোককে আপ্যায়ন করা হবে। ২২ তারিখ দুপুরে প্রতিজনকে মোরগ পোলাও, হাফ লিটার কোক এবং পানির বোতল, ফিরনি, পান, টিস্যু এবং কাঁটা চামচ দেওয়া হবে। রাতে মোরগ পোলাওয়ের বদলে মাটন রেজালা দেওয়া হবে। ২৩ তারিখ সাদা পোলাও এবং মুরগির রোস্ট দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে হোটেল ও রেস্তোরাঁয় অর্ডার করা হয়েছে বলে খাদ্য উপ-কমিটির একাধিক নেতা নিশ্চিত করেছেন।

সর্বশেষ খবর