২২৮ বছরের স্মৃতিবিজড়িত পুরান ঢাকার এক নম্বর নাজিম উদ্দিন রোডে অবস্থিত সাবেক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ভবন জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করতে যাচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ। ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার স্মৃতিবিজড়িত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে দুর্লভ আলোকচিত্রের প্রদর্শনী ‘সংগ্রামী জীবনগাথা’ এর আয়োজন করা হয়েছে। ১-৫ নভেম্বর পর্যন্ত আয়োজিত এ প্রদর্শনীতে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার থাকবে ২-৫ নভেম্বর পর্যন্ত। এ ছাড়া কারাগারে থাকতে কেমন লাগে সাধারণ মানুষকে সেই অনুভূতিটি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে কারা কর্তৃপক্ষ। গতকাল সকালে পুরনো কারাগারের ভিতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কারা অধিদফতরের মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন এসব কথা জানান। তিনি বলেন, স্মৃতিবিজড়িত পুরনো কারাগার এখন ইতিহাসের প্রামাণ্য দলিল। এ কারাগারেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের বেশ কয়েক বছর কেটেছে। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর এই কারাগারেই সংঘটিত হয়েছে জাতীয় চার নেতার নির্মম হত্যাযজ্ঞ। ঐতিহাসিকভাবে এ স্থানটি বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ। তাই বহু ঘটনার সাক্ষী পুরনো কারাগারের ইতিহাস সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতেই দুর্লভ আলোকচিত্র ‘সংগ্রামী জীবনগাথা’ এর আয়োজন করা হয়েছে।
আগামী ১ নভেম্বর বিকাল ৩টায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন। এ প্রদর্শনীতে ১৪৫টি আলোকচিত্র প্রদর্শিত হবে। ২ নভেম্বর থেকে সাধারণ মানুষ দিনে তিনবার (সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা, দুপুর ১টা থেকে ৩টা ও বিকাল ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত) মাত্র ১০০ টাকার টিকিটের বিনিময়ে প্রদর্শনী দেখার সুযোগ পাবেন।
টিকিট মূল্য ১০০ টাকা বেশি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কম দাম হলে বেশি জনসমাগম হবে। এত বড় এলাকাজুড়ে শৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন হবে। প্রবেশ লিমিট করতেই টিকিট মূল্য ১০০ টাকা করা হয়েছে। শুধু যারা আগ্রহী তারাই যেন এ সুযোগটা নিতে পারেন। আর এই টাকা কেরানীগঞ্জে স্থানান্তরিত কেন্দ্রীয় কারাগারে মায়ের সঙ্গে থাকা শিশুদের খেলাধুলার সরঞ্জাম কেনায় খরচ করা হবে।
আইজি প্রিজন বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই টাকার বিনিময়ে কারাগারে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। কারাগারে থাকার অভিজ্ঞতা কেমন হয় তা জানতে অনেকেই অর্থের বিনিময়ে কিছুদিন কারাবাস করেন। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই পুরনো কারাগারে ‘ফিল দ্য প্রিজন’ করার কথা চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। ফিলিপাইন ও ভারতের কয়েকটি পুরনো কারাগার যেগুলো মিউজিয়াম করা হয়েছে সেসব কারাগার পরিদর্শন করেছি। সেখান থেকেই আমরা ‘ফিল দ্য প্রিজন’র আইডিয়াটা পেয়েছি। একই সঙ্গে আমরা জেনেছি অক্সফোর্ডের একটি কারাগারকে এর আদল ঠিক রেখে হোটেলে রূপান্তর করা হয়েছে। সে দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের সাধারণ জনগণের মধ্যে অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় অনেকে হয়তো ভাবেন কারাগারে থাকতে কেমন লাগে সে বিষয়টাকে ফিল করার জন্য। আমরা হয়তো সে সুযোগটা এখানে রাখতে পারি। এক প্রশ্নের উত্তরে আইজি প্রিজন বলেন, ২২৮ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো যথার্থ ইতিহাস সংরক্ষণ করা হয়নি। আমরা চেষ্টা করছি। যতটুকু সম্ভব এই কারাগারের ইতিহাস সংরক্ষণ করার। এ ছাড়াও ৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবস হওয়ায় ওই দিন সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় চার নেতার পরিবারের সদস্যরা ও তৎকালীন সময়ের উপ-কারা পরিদর্শক যতটুকু জানেন ততটুকু সবার সামনে তুলে ধরবেন। কারাগারের স্মৃতি রক্ষা করতে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, কবে থেকে তার কার্যক্রম শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী একবার কারাগারে আসতে চান। আশা করছি তিনি শিগগিরই কারাগারে আসবেন। তিনি আসার ১৫ দিনের মধ্যেই পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা কাজ শুরু করব। ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী যে ধরনের কাজ করা প্রয়োজন পুরনো কারাগার স্থলে সেসব কাজ সম্পন্ন করা হবে। প্রসঙ্গত, গত ২৯ জুলাই পুরান ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর করা হয়। এর আগ পর্যন্ত এই কারাগারে প্রায় সাত থেকে আট হাজার বন্দী হাজতি ও কয়েদি থাকত। আর তাই কখনো যারা কারাগারে যাননি তাদের মধ্যে কারা অভ্যন্তরে কয়টি ভবন আছে, ভবনগুলোর কোনটিতে সাধারণ কয়েদি-হাজতিরা থাকত, কোথায় ভিআইপিরা বন্দীরা, কোথায় রন্ধনশালা, কোথায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসিতে ঝোলানো হতো ইত্যাদি জানার প্রবল আগ্রহ রয়েছে। এ ছাড়াও এককালের মোগল দুর্গ, কোতোয়ালি পুলিশ স্টেশন ও পরবর্তীতে জেলখানায় রূপান্তরিত হওয়ার ইতিহাস রয়েছে। এসব ইতিহাস তুলে ধরা এবং দর্শনার্থীদের প্রবল আগ্রহের কথা মাথায় রেখেই কারা অধিদফতর এই প্রদর্শনীর আয়োজন করতে যাচ্ছে।