সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত ঝিনাইদহের সেই মুক্তিযোদ্ধাকে এবার প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। হুমকি-ধমকির কারণে তিনি এখন নিজ এবং পরিবারের সদস্যদের জীবন নিয়ে শঙ্কিত। ই-টেন্ডারে শিডিউল জমা দেওয়ার জেরে স্থানীয় এমপির লোকজন বেধড়ক পিটিয়ে ৬৫ বছরের এই মুক্তিযোদ্ধার হাত পা ভেঙে দিয়েছে। তিনি বর্তমান ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার আবাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার হোসেনকে নির্মমভাবে মারধরের এই ঘটনাটি ধরা পড়ে সিসিটিভিতে। ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেলে তা নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, লোহার রড, লাঠিসোটা, হাতুড়ি দিয়ে একদল যুবক মোক্তার হোসেনকে নির্মমভাবে পেটাচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার হোসেন উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র সদস্য। আর হামলাকারীরাও একই দলের নেতা-কর্মী। পুলিশ এজাহারভুক্তদের মধ্যে মাত্র দুজনকে গ্রেফতার করলেও দুদিন পরই তারা জামিনে মুক্তি পান। বাকিরা এখনো গ্রেফতার হননি। জানা গেছে, গত ১৮ অক্টোবর সকালে স্থানীয় এমপি আবদুল হাইয়ের এপিএস আবদুল হাকিম মোবাইল ফোনে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যে প্রায় ২৫-৩০ জনের একটি দল এসে তার ওপর হামলা চালিয়ে বেধড়ক মারপিট করেন। হামলায় মোক্তার ও তার বড় ছেলে ব্যাংক কর্মকর্তা সুমন গুরুতর আহত হন। তাত্ক্ষণিকভাবে তাদের ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা পরে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। পঙ্গু থেকে তাকে বেসরকারি একটি হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেই তার চিকিৎসা চলছে। ইতিমধ্যে তার হাত ও পায়ে তিনটি অপারেশন করা হয়েছে। এ ঘটনায় গত ১৯ অক্টোবর স্থানীয় এমপির এপিএস হাকিমকে প্রধান করে ১০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়। মামলার পরে পুলিশ দুজনকে গ্রেফতার করলে তিন দিন পরই তারা জামিনে ছাড়া পান। বাকিরা জামিন নেন ১৫দিন পর। এরপর থেকে মোক্তারের পরিবারকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে আসছেন আসামিরা। মোক্তারের ছোট ছেলে সাজন মৃধা অভিযোগ করেন, স্থানীয় রাস্তা মেরামতের জন্য এলজিইডির দুই কোটি ৮৮ লাখ টাকার চারটি কাজের দরপত্র অনলাইনে আহ্বান করা হয়। অনলাইনেই তার সিডিউল জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল গত ১৭ অক্টোবর। এ দিনেই তার বাবা সর্বনিম্ন দর ধরে শিডিউল জমা দেন। পরের দিন সেই টেন্ডার ওপেন করা হয়। এ সময় তার বাবা কাজগুলো পান বলে ঘোষণা আসে। বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় এমপির এপিএস হাকিম তার বাবার মোবাইলে ফোন দেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় শৈলকূপা উপজেলা কমপ্লেক্সের পুরনো গেটের পাশে জাকের মেডিকেল নামে একটি দোকানে বসে ছিলেন তিনি। এ সময় হাকিম তার বাবার মোবাইল ফোনে কল দেন। হাকিম তার বাবাকে বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ে সব কাজ আমরা পাই। কিন্তু আপনি টেন্ডার জমা করলেন কেন? এর মজা কিছুক্ষণ পরই পাবেন।’ এ কথা বলার ১০ মিনিট পরই এমপি ও তার এপিএসের নির্দেশে শামীম মোল্লার নেতৃত্বে প্রায় ২৫-৩০ জনের একটি দল হাতুড়ি, লাঠি ও রড নিয়ে হামলা চালায়। হামলাকারীদের মধ্যে আশরাফুল, সুমন, সিহাব মোল্লা, রিপন মোল্লা, রিপন, সাওন শিকদার, কর্নেল ও শামীম জোয়ার্দ্দারসহ আরও অনেকে ছিলেন। তারা সবাই স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী।
তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় তারা মামলা করলে পুলিশ দুজন আসামিকে গ্রেফতার করে। পরে এমপি কোর্টে নিজে বসে থেকে তাদের জামিন করে নিয়ে আসে। আর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা তার বাবার এ পর্যন্ত তিনটি অপারেশন করা হয়েছে। চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় বাড়িতে-মোবাইল ফোনে আসামিরা তাদের মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। না হলে আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয় আবদুল হাকিমের সঙ্গে। তিনি জানান, আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। হামলার সময় আমি ছিলাম না এবং জড়িতও না। যারা জড়িত তারা চিহ্নিত ভিডিও ফুটেজে তাদের দেখা গেছে আমি তাদের প্রত্যেকের শাস্তি দাবি করছি। আর তথ্য বিভ্রাটের কারণে হামলার ঘটনায় করা মামলায় আমাকে আসামি করা হয়েছে। হামলায় নির্দেশ দেওয়ার বিষয়টি জানতে ঝিনাইদহ-১ আসনের এমপি আবদুল হাইয়ের কাছে জানতে মোবাইলে ফোন দেওয়া হয়। তা ধরেন তার ব্যক্তিগত সহকারী ইমদাদুল হক। তিনি বলেন, আমি এমপি সাহেবের সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা থাকি। একসঙ্গে থাকি, খাই, ঘুমাই। কখনই তিনি এই হামলার নির্দেশ দেননি। এটা আমি ১০০ভাগ নিশ্চিত। এ বিষয়ে শৈলকূপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তরিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মামলার দুই ঘণ্টা পরই আমরা দুজনকে গ্রেফতার করেছিলাম। এ সময় অন্যরা পালিয়ে যায়। তারা সবাই ১৫দিন পর আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পুলিশের কোনো গাফিলতি নেই।