রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ব্লগার হত্যার সব ঘটনা মেজর জিয়ার নির্দেশে

জঙ্গি খাইরুল পাঁচ দিনের রিমান্ডে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্লগার হত্যার সব ঘটনা মেজর জিয়ার নির্দেশে

মেজর জিয়া

ব্লগার নিলাদ্রী চ্যাটার্জি ওরফে নিলয় ও প্রকাশক ফয়সল আরেফীন দীপন হত্যাকাণ্ডে জড়িত নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) এক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তার নাম খাইরুল ইসলাম ওরফে জামিল ওরফে রিফাত ওরফে ফাহিম ওরফে জিসান। শুক্রবার রাতে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ডিবি বলছে, এবিটির ইন্টেলিজেন্স শাখার শীর্ষ পর্যায়ের একজন সদস্য খাইরুল। গতকাল তাকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হলে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

গতকাল দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম-কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন বলেন, অতীতে দেশে যত ব্লগার হত্যার ঘটনা ঘটেছে, তার সব কটিই হয়েছে এবিটির নেতা চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকের নির্দেশে। সর্বশেষ প্রকাশক দীপন ও ব্লগার নিলয় হত্যাকাণ্ডও তার নির্দেশে হয়। গ্রেফতার খাইরুল এই দুটি হত্যাকাণ্ড জিয়ার নির্দেশেই করেছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। এবিটির সামরিক শাখার নেতা মেজর জিয়া হত্যা সংক্রান্ত বিভিন্ন দায়িত্ব সদস্যদের মধ্যে ভাগ করে দিতেন। জিয়া ২০১১ সালের ডিসেম্বরে সেনা অভ্যুত্থানে প্ররোচনা চালিয়ে ব্যর্থ হন। এরপর থেকে পলাতক রয়েছেন। তাকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ।

যুগ্ম-কমিশনার বলেন, খাইরুল ২০১৩ সালে এবিটিতে এক বড় ভাইয়ের নির্দেশে যোগ দেন। ওই বড় ভাই হচ্ছেন মেজর জিয়া। যোগ দেওয়ার পর খাইরুল সংগঠনের আইটি এক্সপার্ট হিসেবে দায়িত্ব পান। তার কাজ ছিল ইন্টারনেট থেকে মুক্তমনা ও ব্লগারদের তথ্য সংগ্রহ করে তা জিয়াকে দেখানো। এরপর জিয়া টার্গেট ঠিক করতেন কাকে হত্যা করতে হবে। টার্গেট ঠিক করার পর, একটি অপারেশনাল টিমকে হত্যার দায়িত্ব দেওয়া হয়। নিলয় ও দীপনকে হত্যার দায়িত্ব পায় খায়রুল। সে পুরো বিষয়টি মনিটরিং করে। হত্যাকাণ্ড শেষ হওয়ার পর বিভিন্ন ওয়েবসাইটে হত্যার দায়ও সে স্বীকার করে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জিয়ার সঙ্গে খাইরুলের যোগাযোগ ছিল। এরপর থেকে আর যোগাযোগ হয়নি।  ২০১৩ সাল পর্যন্ত খাইরুল চট্টগ্রামে তার ভাই-বোনের সঙ্গে ছিল। গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার চণ্ডীপুরে। তার বাবা-মা নেই। সে চট্টগ্রামের এম এ সালাম হাইস্কুল, ফৌজদারহাট কলেজিয়েট স্কুল, পাহাড়তলী কলেজে পড়াশোনা করেছে। এবিটিতে যোগ দেওয়ার পর সে ঢাকায় আসে। পরে শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিং ও এলিফ্যান্ট রোডে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নেয়। ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের সময় ওই এলাকায় থাকা সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে খাইরুলকে দেখা গেছে। ওই ভিডিও ফুটেজ থেকে চারজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের সাংগঠনিক নাম জানা গেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। গত বছরের ৩১ অক্টোবর আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর অফিসে দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার পর এবিটি ওই খুনের দায় স্বীকার করে। এর আগে, ৭ আগস্ট গোড়ানে নিজ বাসায় ব্লগার নিলয়কে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ হত্যাকাণ্ডের পর এবিটির বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।

সর্বশেষ খবর