রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সংবাদের নিরপেক্ষতা সত্যতা যাচাই করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ

সেমিনারে দেশি-বিদেশি সিনিয়র সাংবাদিকদের অভিমত

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশি-বিদেশি সিনিয়র সাংবাদিকরা বলেছেন, বর্তমান সময়ে সংবাদের নিরপেক্ষতা আর সত্যতা যাচাই করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। ডিজিটাল বিশ্ব আর অনলাইনের যুগে পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই ছাপানো পত্রিকার প্রচারসংখ্যা কমছে। মানুষের হাতে হাতে স্মার্টফোন আর সহজলভ্য ইন্টারনেটের কারণে মানুষ খুব সহজেই সব ধরনের নিউজ হাতের কাছে পেয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে পত্রিকা, টেলিভিশন ছাড়াও খবরপ্রাপ্তির মাধ্যম হিসেবে যুক্ত হয়েছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি। প্রথম আলোর অষ্টাদশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত ‘সাংবাদিকতার সামনে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে দেশি-বিদেশি সিনিয়র সাংবাদিকরা বলেন, বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের যে কোনো ঘটনা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের চেয়ে এসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার ছড়িয়ে পড়ছে আরও দ্রুতগতিতে।

সবশেষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন কেন্দ্র করে প্রার্থী এগিয়ে থাকা পিছিয়ে থাকার বিষয়টিও খোদ গণমাধ্যমকেও বিভ্রান্ত করেছে সামাজিক  যোগাযোগের মাধ্যম এবং নামসর্বস্ব বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল। সেই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমে রয়েছে বিভিন্ন মহলের চাপ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, রাজনৈতিক ও বিভিন্ন গোষ্ঠীগত অযাচিত হস্তক্ষেপ। ফলে এখন সংবাদের নিরপেক্ষতা আর সত্যতা যাচাই করাই গণমাধ্যমের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। সেমিনার পরিচালনা করেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, সমাপনী বক্তৃতা করেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। সংবাদের গ্রহণযোগ্যতা, সুসাংবাদিকতা, ঝুঁকি বা চ্যালেঞ্জ, সত্যতা যাচাই, অপপ্রচার মোকাবিলা, সংবাদকর্মীদের স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয়ে বক্তব্য দেন অংশগ্রহণকারীরা। তারা বলেন, বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকতা এখন নানামুখী চাপের মধ্যে। এ চাপের সঠিক জবাব হতে পারে সুসাংবাদিকতা। আর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মাধ্যমে মানুষের আস্থা অর্জন ও তাদের মনের ভাষা বুঝে সংবাদ পরিবেশন করা। বক্তারা আরও বলেন, মানুষ কী চায়, তা দেখতে হবে। তাদের মনের কথা বুঝতে হবে। গণমাধ্যম তাদের ভাষায় কথা বললে কোনো চাপই কার্যকর হতে পারবে না। সেমিনারে বিশ্বের অন্যতম প্রধান সংবাদমাধ্যমগুলোর ২০ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। এর মধ্যে ফিনল্যান্ডের দৈনিক হেলসিঙ্গিন সানোমাট-এর কূটনৈতিক সম্পাদক কারি হুতা, নেপালের দৈনিক কান্তিপুর-এর প্রধান সম্পাদক সুধীর শর্মা, ভারতভিত্তিক সাউথ এশিয়ান উইমেন ইন মিডিয়ার প্রেসিডেন্ট জ্যোতি মালহোত্রা, ভুটানের জাতীয় দৈনিক কুয়েন সেল-এর সম্পাদক রিনঝিন ওয়াংচুক, ভারতের আসামের বাংলা সংবাদপত্র দৈনিক সাময়িক প্রসঙ্গ-এর সম্পাদক তৈমুর রাজা চৌধুরী, ভারতের ত্রিপুরার দৈনিক দেশের কথার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক গৌতম দাশ, এশিয়া ও লাতিন আমেরিকায় ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া সাপোর্টেন (আইএমএস) কর্মসূচি ব্যবস্থাপক এসবেন কিউ হারবো, অস্ট্রিয়াভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউটের নির্বাহী বোর্ডের চেয়ারম্যান জন ইয়ারউড, বিবিসি স্কটল্যান্ডের উত্তর-পূর্ব ও উত্তরাঞ্চলীয় দ্বীপবিষয়ক ব্যবস্থাপনা সম্পাদক স্যান্ডি ব্রেমনার, ভারতের দৈনিক দ্য হিন্দুর সম্পাদক মুকুন্দ পদ্মনাভন, মেঘালয়ের পুরনো ইংরেজি দৈনিক দ্য শিলং টাইমস-এর সম্পাদক প্যাট্রিসিয়া মুখিম, ভুটানের দৈনিক কুয়েনসেল-এর প্রকাশনা বিভাগের সম্পাদক উখ্যিয়ান পেনজর, গার্ডেনস অব দ্য রাইচাস ওয়ার্ল্ডওয়াইডের (গারিও) প্রতিনিধি এমিলিও বারবারানি, ভারতের দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর প্রধান সম্পাদক রাজ কমল ঝা, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস দক্ষিণ এশিয়া সংবাদ পরিচালক বার্নাত আর্মেঙ, ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক বারবারা ত্রিয়োনফি ও আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতার জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক স্বাথী ভট্টাচার্য। বাংলাদেশি সিনিয়র সাংবাদিকদের মধ্যে বক্তৃতা করেন নিউজ টুডে সম্পাদক রিয়াজউদ্দীন আহমদ, ইত্তেফাকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও একুশে টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুল, আমাদের অর্থনীতি সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শামসুদ্দীন আহমেদ, ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহান, বেসরকারি টেলিভিশন নিউজ টোয়েন্টিফোরের হেড কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স সামিয়া রহমান প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর