দেশের বিভিন্নস্থানে গতকাল থেকে নানা আয়োজনে শুরু হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব ও মেলা। উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতি বছর কার্তিক মাসের শেষ বা অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতে ভরা পূর্ণিমায় এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। এ উৎসব ও মেলা চলে তিন দিন। মেলায় হস্ত ও কুটির শিল্পের বিকিকিনি ছাড়াও রয়েছে পর্যটন ও বিনোদনের নানা আয়োজন। রয়েছে জারি-সারিসহ বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, দুইশ বছরের ঐতিহ্যবাহী রাস পূর্ণিমা উৎসবে গঙ্গা স্নান অনুষ্ঠানকে ঘিরে নতুন সাজে সেজেছে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা। গতকাল সন্ধ্যায় অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী হিন্দু সম্প্রদায়ের এ ধর্মীয় অনুষ্ঠান। আগামী সোমবার ঊষালগ্নে সমুদ্র স্নান শেষে সমাপ্তি ঘটবে রাস মেলা ও উৎসবের। রাস মেলা উদযাপন কমিটির নেতারা জানান, রাস পূর্ণিমা উৎসব ও মেলাকে ঘিরে আগেই প্রস্তুত হয়েছিল কুয়াকাটা রাধাকৃষ্ণ মন্দির ও তীর্থযাত্রী সেবাশ্রম। মন্দিরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে ১৭ জোড়া রাধা-কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা। মেলা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এসে তাদের পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন। উৎসবকে ঘিরে কুয়াকাটা সৈকতকে নববধূর রূপে সেজেছে। বিনোদনের জন্য কুয়াকাটার মনোমুগ্ধকর পর্যটন স্পট নারিকেল ও ঝাউ বাগান, রাখাইন পল্লী, কেরানীপাড়া বৌদ্ধ বিহার, রাখাইন কালচারাল একাডেমি, রাখাইন মার্কেট এলাকা অপরূপ সাজে সেজেছে। বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, পূর্ব সুন্দরবনের বঙ্গোপসাগর পাড় দুবলারচরের আলোরকেলে গতকাল সকাল থেকে শুরু হয়েছে প্রায় দুইশ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তিন দিনব্যাপী এই উৎসবকে ঘিরে হাজার হাজার পুণ্যার্থী ও দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য নেওয়া হয়েছে গোটা সুন্দরবনে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দুবলারচরের আলোরকোলে বসেছে রাস মেলা। উৎসবে যোগ দিতে সুন্দরবন বন বিভাগ আটটি রুট নির্ধারণ করে দিয়েছে। এসব রুট দিয়ে নৌকা, ট্রলার, লঞ্চ ও অন্যান্য নৌযানে পুণ্যার্থী ও পর্যটকরা গতকাল থেকেই আলোরকোলে পৌঁছাতে শুরু করেন। তবে এবার এই উৎসবের বন্যপ্রাণী বাঁচাতে তিন দিনই সুন্দরবনে সব ধরনের পাস পারমিট বন্ধর ঘোষণা দিয়েছে বন বিভাগ। আগামী সোমবার দিনের প্রথম জোয়ারে সাগরের লোনা জলে পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই রাস উৎসব। আলোরকোলে রাস উৎসবে যেতে এবার ঢাংমারী, বগি, শরণখোলা, বুড়িগোয়ালিনী, কদমতলা, কৈখালী, কয়রা ও নালিয়ান স্টেশন হয়ে এই আটটি রুটের অনুমতি দিয়েছে বন বিভাগ। এসব রুটেও নেওয়া হয়েছে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। টহল দিচ্ছে বনরক্ষী, পুলিশ, কোস্টগার্ড, র্যাব ও নৌবাহিনীর সদস্যরা। বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) সাইদুল ইসলাম জানান, হরিণসহ বন্য প্রাণী শিকার রোধে ভ্রাম্যমাণ টিম সুন্দরবনে আগতদের ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখছে। পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীরা কোনো প্রকার রান্না করা মাংস, এমনকি ছাগল-মুরগিও সঙ্গে নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন না। এবারই প্রথম পর্যটকদের মতো অন্য ধর্মের দর্শনার্থীদেরও রাস উৎসবে যোগ দিতে রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে।