মাটি, মানুষ ও প্রাণের সুর মূর্ছনায় দর্শক-শ্রোতাদের বিমোহিত করে গতকাল শেষ হয়েছে ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসব-২০১৬’। মেরিল নিবেদিত ও সান ইভেন্টসের আয়োজনে তিন দিন আগে উদ্বোধন করা হয় এ উৎসবের। সহযোগিতায় ছিল গ্রামীণফোনের জিপি মিউজিক, ঢাকা ব্যাংক ও মাইক্রোসফট।
সমাপনী দিনেও শৈল্পিক শুদ্ধতায় লোকসংগীতের জ্বরে কেঁপেছেন সংগীতের সমজদাররা। মাটির প্রেমে ঋদ্ধ শেকড়ের সুরের সুধায় সিক্ত হয়ে প্রাণের উচ্ছ্বাসে সমগ্র আর্মি স্টেডিয়ামই মেতে উঠেছিল। সাধকদের সুরের ধারায় ছিল পিনপতন নীরবতা। হেমন্তের মৃদু শীতে উষ্ণতার উত্তাপ ছড়িয়ে দেয় এ উৎসব। এবারের আসরে ছয় দেশের প্রায় শতাধিক শিল্পী অংশ নেন। নেত্রকোনার অন্ধ বাউল সুনীল কর্মকারের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে আয়োজন শুরু হয়। চোখের আলো না থাকলেও এই শিল্পী সুরের আলোতে দর্শক-শ্রোতার মাঝে শিল্পের আলো ছড়িয়ে দেন। ‘অতৃপ্ত আশা’ ‘আঁধারে ঘিরিলো কোথায় যাইবো’ ও ‘কত আশা ছিল রে বন্ধু’ ইত্যাদি গানগুলো তৃপ্তিতে ভরিয়ে দেয়। শিল্পীর সঙ্গে অংশ নেয় খুদে বাউল শফিকুল ইসলাম। সুনীল কর্মকারের কণ্ঠের নির্যাস শেষ না হতেই মঞ্চে আসেন কিশোরগঞ্জের পালাকার ইসলাম উদ্দিন কিসসাকার। নারীর বেশে এই শিল্পী তার পরিবেশনা দিয়ে ঢেউ তুলে দেন দর্শক-শ্রোতার মাঝে। এরপর নিজের পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন দেশবরেণ্য শিল্পী বারী সিদ্দিকী। জনপ্রিয় গান ‘শুয়াচান পাখি’ ও ‘চন্দ্র সূর্য যত বড় আমার দুঃখ তার সমান’সহ বেশ কয়েকটি গানের অনবদ্য পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানস্থলে মুগ্ধতার রেশ ছড়িয়ে দেন এই শিল্পী। এরপর মঞ্চে আসেন ভারতের ওস্তাদ গুলশান মীরের কন্যারা। নুরান সিস্টার্সখ্যাত ভগ্নিদ্বয় তাদের পরিবেশনায় প্রাধান্য দেন সুফিজমকে। সারগামের মাধ্যমে কণ্ঠকে প্রস্তুত করেই এই নুরান ভগ্নিদ্বয় পরিবেশন করেন ‘আল্লাহু আল্লাহু’ ‘আলী আলী’ ও ‘দামাদাম মাস্তাকালান্দার’সহ বেশ কয়েকটি গান। সুফিজমের সুরে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সংগীতানুরাগীদের মাতিয়ে রাখেন শিল্পীরা।
মাটির গানের সঙ্গে সুফিজমের সরল সমীকরণে আসরে নেমে আসে ভালোলাগা আর ভালোবাসার ঢেউ। সবশেষে মঞ্চে আসেন পবন দাস বাউল। শিল্পীর সঙ্গে মঞ্চে সম্মিলিত পরিবেশনায় অংশ নেন যুক্তরাজ্যের গানের দল সুশীলা রামান ও স্যাম মিলস। লোকসংগীতের সঙ্গে ভক্তিমূলক গানের শৈল্পিকতায় সুরের কাঙ্গালরা মেতে উঠেন মুগ্ধতার আবেশে। এরপর নিজেদের পরিবেশনায় সুরের চাদর বিছিয়ে আসরকে উপভোগ্য করে তোলেন তাপস অ্যান্ড ফ্রেন্ডস। পবন দাস বাউল, সুশীল রামান ও স্যাম মিলসের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে তিন রাতের এ পরিবেশনার পর্দা নামানো হয়।