শিরোনাম
শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ধর্ষকদের পালাতে সহায়তা

ঢামেকে কিশোরী ধর্ষণে পাঁচ অভিযুক্ত এখনো অধরা

মাহবুব মমতাজী

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত অভিযুক্ত পাঁচ আনসার সদস্যকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছে, এরা চাকরিতে নেই। ঘটনার পর এই পাঁচজনকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন এক আনসার কর্মকর্তা। তবে একজন কারাগারে আটক রয়েছেন। এর আগে তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত ছয় আনসার সদস্যকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে।

অভিযোগ : গত ২৭ অক্টোবর রাতে হাসপাতালের ক্যান্সার ডিপার্টমেন্টের বহির্বিভাগের নিচতলার একটি কক্ষে ওই তরুণীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে ছয় আনসার সদস্য। ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরীকে আহতাবস্থায় প্রথমে গাইনি ওয়ার্ডে এবং পরে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়।

জানা গেছে, রাজধানীর মিরপুরে থাকত ওই তরুণী। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার হোমনায়। ঘটনার তিনদিন পর গত ৩১ অক্টোবর অভিযুক্ত আনসারদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আনসার-ভিডিপির সদর দফতর। অভিযুক্তরা হলেন— আনসারের এপিসি একরামুল, আনসার সদস্য আমিনুল, আতিকুল, মীর সিরাজ, মিনহাজ ও বাবুল। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে গত ২ নভেম্বর বিকালে ধর্ষণের শিকার তরুণী বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় ছয় ধর্ষকের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। মামলার পরই ছয়জনের একজন আতিকুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন তাকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ড শেষে গতকাল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আসামি আতিকুল। এ সময় তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন ঢাকা মহানগর হাকিম মাহমুদুল হাসান। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আতিকুল জানায়, হাসপাতাল এলাকায় ওই তরুণী একাকী ঘোরাঘুরি করতে থাকলে তার পরিচয় জানতে চায় আনসার সদস্যরা। এরপর ওই তরুণীকে বহির্বিভাগের নিচতলার সুনসান নিরিবিলি একটি কক্ষে থাকতে দেয় তারা। ওইদিনই রাত ১১টার পরে তাকে একরামুল, আমিনুল, মীর সিরাজ, মিনহাজ ও বাবুল ধর্ষণ করে। সে সবকিছু দেখেছে কিন্তু ধর্ষণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না বলে দাবি করে আতিকুল। পরদিন ওই তরুণী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদেরই একজন পরিচয় গোপন রেখে তাকে গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি করায়। বিষয়টি নিজেদের মধ্যে জানাজানি হলে তাদের পিসি জজ মিয়া একটি সালিশ বসায়। এ সময় তাদেরকে কিছু টাকা জরিমানাও করা হয়। আর বলা হয়— তোমাদের কারও চাকরি থাকবে না। সঙ্গে পুলিশও গ্রেফতার করে নিয়ে যাবে। তাই চাকরি ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যাও। আতিকুল বাদে অন্যরা তখন পালিয়ে যায়। আতিকুল চাকরিতেই থাকতে চায়। ওই ঘটনায় মামলার খবর পেয়ে কর্তৃপক্ষই তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ধর্ষক আনসারদের পালাতে কর্তৃপক্ষের সহায়তা প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভাগের পরিচালক (নিয়ন্ত্রণ) হীরা পারভেজ জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আতিকুল যা বলেছে তা সঠিক নয়। তাকে ধরতে পুলিশকে আমাদের পক্ষ থেকে যদি কোনো সহায়তা করা হয়ে থাকে তা দোষের কিছু নয়। আর বাকিদের পালাতে কখনো সহায়তা করা হয়নি বরং তারা পালিয়ে গেছে। ঢামেক সূত্র জানায়, গত ২৭ অক্টোবর রাত ১১টার দিকে হাসপাতালের বহির্বিভাগের নিচতলায় একটি ফাঁকা রুমে নিয়ে ওই তরুণীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে আনসার সদস্যরা। তার একদিন পর তাকে গাইনি বিভাগের ২১২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করে ‘কামাল’ নামে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি। ঘটনাটি জানতে পেরে ঢামেকে আসেন ওই কিশোরীর ভাই। সে সময় তিনি জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ফোন পেয়ে তিনি এখানে এসে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারেন। তার বোন পড়াশোনায় ভালো ছিল। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তিও পায়। কিন্তু নবম শ্রেণির পর তার আর পড়াশোনা হয়নি। বাবার মৃত্যুর পর তার বোনের কিছুটা মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। কখনো ভালো আবার কখনো অসুস্থ হয়ে পড়ে। তবে সে পাঁচ-ছয় দিন আগে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হয়েছিল।

সর্বশেষ খবর