শিরোনাম
শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে শত বছরের মন্দির

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে শত বছরের মন্দির

দিনাজপুর জেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে নানা নিদর্শন। যা অতীত ইতিহাসকে জাগ্রত-উজ্জীবিত করে। পূর্ব পুরুষদের জানতে অনেকটাই সহায়তা করে সেই আমলের পুরাকীর্তি। সভ্যতা, কৃষ্টি-কালচার জানতে ও বুঝতে এসব পুরাকীর্তির বিকল্প নেই। এমনই স্মৃতিবিজড়িত নিদর্শন শতবর্ষের ঐতিহ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে প্রাগৈতিহাসিক শিববাড়ি মন্দির। সরেজমিন দেখা গেছে, এ মন্দিরটি চিরিরবন্দর উপজেলার আলোকডিহি ইউনিয়নের গছাহার গ্রামে। এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এ মন্দিরটি। এটি গছাহার মৌজায় ২২ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত। চিকন ও ছোট ছোট ইটে চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি। বর্ণিল কারুকার্যে গড়া একটি প্রত্নসম্পদ। পাঁচ কক্ষবিশিষ্ট এ মন্দিরটিতে পৃথকভাবে প্রবেশ ও বাহির পথ রয়েছে। সংস্কারের অভাবে মূল্যবান এ প্রত্নসম্পদ অরক্ষিত আজও। এখানে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিভিন্ন পূজা-অর্চনা করে থাকেন। বর্তমানে এটি শ্রীহীন হয়ে পড়েছে। মন্দিরের ইট, সুরকি উঠে যাচ্ছে। আগাছা বাসা বেঁধেছে মন্দিরের বিভিন্ন স্থানে। প্রতিটি দেয়ালে বিভিন্ন গাছপালা। ছাদের ওপরও জন্মেছে গাছপালা। বর্তমানে মন্দিরটির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এরপরও জানান দিচ্ছে তার অস্তিত্ব। বছরের পর বছর অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থাকা মন্দিরের মূল স্থাপনা কোনোরকমে টিকে আছে। সংস্কারের অভাবে অন্তত ৩০০ বছরের পুরনো এ মন্দিরটি ধ্বংস হতে চলেছে। গছাহার ক্ষেণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক সত্য নারায়ণ দাস জানান, মুস্তফী (ব্রাহ্মণ) সম্প্রদায়ের আপন দুই ভাই হেমবাবু ও সত্য নারায়ণ এবং তাদের চাচাতো ভাই তিনকুড়ি ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এ মন্দিরটি পরিচালনা করেন। এর পূর্ব-দক্ষিণ পাশে আরও ২-৩টি ছোট ছোট মন্দির ছিল। মুস্তফীরা এখান থেকে চলে গেলে এলাকার লোকজন মন্দিরের ইট খুলে নিয়ে যাওয়ায় সেগুলোর আজ চিহ্ন পর্যন্ত নেই। পরে খানসামা উপজেলার দুবলিয়া গ্রামের শিক্ষক যতীন্দ্রনাথ দাস, গছাহার গ্রামের তাঁতীপাড়ার রায় দাস দেবনাথের (ঠাকুর) নেতৃত্বে চলে মন্দিরের দেখভাল ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান। এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ দুর্গাপূজা ও চৈত্র মাসের শিব চতুর্দশী ব্রত পালন করত। এ উপলক্ষে বসত মেলা। মেলায় সর্বস্তরের মানুষের সমাগম হতো। মেলায় চলত গান-বাজনা, যাত্রাপালা ও সার্কাস। এ মেলা ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত চলে। এরপর আঞ্চলিকতা ও নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৬৮ সালে পিতাম্বর দেবনাথের ছেলে শিক্ষক সুবল চন্দ্র দেবনাথের নেতৃত্বে তিনবার শিবলীলা প্রদর্শিত হয়। এখন আর এখানে বসে না কোনো মেলা। স্থানীয় কয়েকজন জানান, এটি কে, কখন নির্মাণ করেছেন তার কোনো নামফলক নেই। তবে অনেকেই ধারণা করছেন, এটি ব্রিটিশ শাসনামলে কিংবা রাজা রামনাথের শাসনামলে নির্মিত হতে পারে। পায়ে হেঁটে চলার মতো জায়গা দিয়ে এসে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এখনো পূজা-অর্চনা করেন। বর্তমান মন্দির কমিটির সভাপতি তপন কুমার দেবনাথ জানান, এ দেবোত্তর সম্পত্তির সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণে কোনো সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। সংস্কারের জন্য কোনো সরকারি অনুদানও আসেনি।

সর্বশেষ খবর