রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নাগরদোলায় চড়িয়ে কেউ ক্ষমতায় বসাবে না

বিজয় দিবসের আলোচনায় বিএনপিকে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

নাগরদোলায় চড়িয়ে কেউ ক্ষমতায় বসাবে না

বিএনপিকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তারা এমন আশায় বসে আছে যে, কেউ নাগরদোলায় করে কোলে তুলে তাদের ক্ষমতায় বসাবে। নাগরদোলায় চড়িয়ে কেউ ক্ষমতায় বসাবে না। তারা (বিএনপি) যাদের আশা করছে তারা কেউ সাড়া দেবে না। যারা নির্বাচনে পরাজিত, আন্দোলনেও পরাজিত তাদেরকে মানুষ কেন ভোট দেবে?

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল বিকালে খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা এ অনুষ্ঠানে  সভাপতিত্ব করেন। সভাপতির বক্তৃতায় তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের মর্যাদা অক্ষুণ্ন ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে জনগণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী আওয়ামী লীগ ও তার জোটকে আবারও ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনবে। জনগণের প্রতি সেই আস্থা ও বিশ্বাস আওয়ামী লীগের রয়েছে। আর তারা (বিএনপি) ক্ষমতায় এলে একাত্তরের মতো আবার গণহত্যা চালাবে, সেটা জনগণ বোঝে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেত্রী ২০০১ সালে আমেরিকার কাছে গ্যাস বিক্রির চুক্তিতে ক্ষমতায় আসেন। তবে আল্লাহ জন বুঝে ধন দেয়। আমি জানতাম, তারা গ্যাস পাবে না, তো দেবে কী! এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার কাছে ক্ষমতাটা বড় না, দেশের মানুষ বড়, দেশের স্বার্থ বড়। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বিভিন্ন অফার দেন, আমি স্পষ্টভাবে বলে আসি, দেশের মানুষের সম্পদ ক্ষমতার লোভে বিক্রি করব এমন মানুষ আমি নই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নির্বাচনে হেরে গেলে তখন নির্বাচন কমিশন খারাপ হয়, আর জিতে গেলে নির্বাচন কমিশন ভালো। তারা (বিএনপি) যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করেছে, তাদের নিয়ে সরকার পরিচালনা করেছে, তাদের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়েছে। তাদের জনগণ কেন ভোট দেবে? তবে বিএনপি গণতন্ত্রের পথে আসার চেষ্টা করছে, করুক মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন ভালো কথা, রাষ্ট্রপতি আপনাদের ডেকেছেন। সবার সঙ্গে আলোচনা করে রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত নেবেন। শেখ হাসিনা আরও বলেন, জনগণের ওপর আমাদের বিশ্বাস, আস্থা আছে। তাদের ওপর আমরা আস্থা হারাই না। জঙ্গিবাদ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে, বিচার অব্যাহত থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে আমরা গড়ে তুলতে চাই। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের যে মর্যাদা সৃষ্টি হয়েছে তা ধরে রাখতে হবে। আওয়ামী লীগ ও আমাদের জোটকেই জনগণ আবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে সহযোগিতা করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের সময় ব্যর্থ হওয়া উপদেষ্টারাই এখন টকশোতে যান, সমালোচনা করেন, তাদের টকশোতে বলা উচিত কী কারণে তারা ব্যর্থ হয়েছিলেন। তিনি বলেন, যারা নির্বাচন করার দায়িত্ব নিয়ে নির্বাচন করতে পারে না তারা কীভাবে উপদেশ দেয় বুঝি না। রাষ্ট্রপতি সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা গণতন্ত্র এনেছি, গণতন্ত্র অব্যাহত রাখব। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়িত হবে। বিগত সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নেননি। কারণ, তিনি জানতেন যে, যুদ্ধাপরাধীদের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য বিএনপি ভোট পাবে না। এটা জেনেই তারা নির্বাচন বর্জন করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের মুখে গণতন্ত্র মানায় না। আওয়ামী লীগ জাতির কাছে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরছে। আগামীতে কেউ আর ইতিহাস বদলাতে পারবে না। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা মুক্তিযুদ্ধের সময় কেউ কেউ খেতাবও পেয়েছেন। তবে তারা মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করতেন কি-না, তা নিয়েই সন্দেহ আছে। কারণ, তারাই এদেশে স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন, পতাকা তুলে দিয়েছেন। আর তারাই এখন কী করে গণতন্ত্রের কথা বলেন।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কেন্দ্রীয় নেতা বদর উদ্দীন আহমেদ কামরান ও নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, দলের ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান (উত্তর) ও শাহে আলম মুরাদ (দক্ষিণ)। সভা পরিচালনা করেন ড. হাছান মাহমুদ ও আমিনুল ইসলাম আমীন।

সর্বশেষ খবর