রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

শ্রমবাজারে নতুন বাস্তবতা ‘বেশি প্রবাসী কম আয়’

বিশ্ব অভিবাসী দিবস আজ

জুলকার নাইন

আগের বছরের তুলনায় এক লাখ ৩৩ হাজার জন বেশি বিদেশে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু গত পাঁচ মাসে  রেমিট্যান্স ৯৭ কোটি ডলার কম এসেছে। এমনই এক নতুন বাস্তবতায় বিশ্ব অভিবাসী দিবস পালন হতে যাচ্ছে আজ।

অভিবাসী কর্মীদের মর্যাদা ও অধিকার সমুন্নত রাখার প্রয়াসে প্রতি বছর ১৮ ডিসেম্বর পালিত হয় আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস। ‘উন্নয়নের মহাসড়কে, অভিবাসীরা সবার আগে’ প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালন হচ্ছে। এ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেছেন, বর্তমানে বিশ্বের ১৬১টি দেশে বাংলাদেশের প্রায় এক কোটির অধিক কর্মী কর্মরত আছেন। দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি সুদৃঢ় করার প্রত্যয়ে অভিবাসী কর্মীরা যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, সে অনবদ্য অবদানকে মূল্যায়ন করাই এ দিবসের উদ্দেশ্য। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্যানুসারে, গত ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে সাত লাখ ২২ হাজার ১০০ জন। এর আগে ২০১৫ সালে পাঁচ লাখ ৫৫ হাজার জনশক্তি রপ্তানি হয়। ২০১৪ সালে রপ্তানি হয় চার লাখ ২৫ হাজার এবং ২০১৩ সালে হয় চার লাখ ৯ হাজার। সেই হিসাবে ২০১৩ সালের পর আবার জনশক্তি রপ্তানি বড় সংখ্যায় বেড়েছে। কিন্তু রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে মিলছে ভিন্ন চিত্র। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া রেমিট্যান্স তথ্যানুসারে, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) প্রবাসী আয় এসেছে ৫২০ কোটি ডলার। আগের (২০১৫-১৬) অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৬১৭ কোটি ডলার। এ হিসাবে গত পাঁচ মাসে ৯৭ কোটি ডলার বা ১৫.৭২ শতাংশ রেমিট্যান্স কমেছে। সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্ববাজারে তেলের দর পড়ে যাওয়ার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সুবিধাজনক অবস্থানে না থাকায় সেখানকার শ্রমিকদের কাজের সুযোগ ও আয় কমে গেছে। কিছু দেশে ডলারের বিপরীতে মুদ্রা বিনিময় হার কমে যাওয়ার কারণেও আগের মতো অর্থ পাঠাতে আগ্রহ পাচ্ছেন না প্রবাসীরা। এর বাইরে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে হুন্ডি কারবারির সংখ্যা ও পরিধি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিংগুলোর বেআইনি দোকান চালিয়ে অবৈধ উপায়ে অর্থ সংগ্রহ করে বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে। ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে কমেছে রেমিট্যান্স। গতকাল ঢাকার ইস্কাটনের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিশ্ব অভিবাসী দিবস উপলক্ষে দিনব্যাপী র‌্যালি, আলোচনা সভা, ২০১৫ সালের জন্য নির্বাচিত সিআইপিদের সম্মাননা প্রদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সেমিনার, বিশেষ সুভেনীর প্রকাশ, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, অভিবাসন মেলা, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রবাসী কর্মীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে সরকার। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে দেশের সব জেলা ও উপজেলায় এবং বিদেশে অবস্থিত দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসীদের অংশগ্রহণে এ দিবসটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উদ্যাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আজ সকাল ৮ টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা হয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র পর্যন্ত বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও আন্তর্জাতিক সংস্থা অভিবাসন বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। প্রসঙ্গত, দিবসটি সম্পর্কে উইকিপিডিয়া বলছে, ১৯৯৭ সাল থেকে ফিলিপিনো এবং অন্যান্য এশীয় অভিবাসী সংগঠনগুলো ১৮ ডিসেম্বর দিনটি পালন শুরু করে। শুরুর দিকে এটি ‘আন্তর্জাতিক ঐক্য দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। এ ছাড়া এর আগে ১৯৯০ সালে জাতিসংঘ অভিবাসী শ্রমিক ও দেশে রেখে আসা তাদের পরিবারের নিরাপত্তা রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্মেলন করেছিল এই দিনে। এ প্রেক্ষাপটে ১৮ ডিসেম্বর দিনটিকে লক্ষ্য করে মাইগ্রেন্ট রাইটস্ ইন্টারন্যাশনাল, ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অন মাইগ্রেন্টস রাইটস্সহ বিশ্বের অনেক সংগঠন অভিবাসীদের স্বার্থ রক্ষার্থে বৈশ্বিকভাবে প্রচারণা চালায়। অবশেষে ১৯৯৯ সালের শেষার্ধে অনলাইনে ব্যাপক প্রচারণার ফলে জাতিসংঘ ১৮ ডিসেম্বরকে ‘বিশ্ব অভিবাসী দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। সেই থেকে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে দিনটি পালনও শুরু করে জাতিসংঘ।

সর্বশেষ খবর