বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

দুর্যোগে বিজিবি আস্থার ঠিকানা

বিজিবি দিবসের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী

প্রতিদিন ডেস্ক

দুর্যোগে বিজিবি আস্থার ঠিকানা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বিজিবি সদর দপ্তরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিজিবি সদস্যদের র্যাংক ব্যাজ পরিয়ে দেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সীমান্ত রক্ষা, অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং প্রাকৃতিক কিংবা সামাজিক যে কোনো দুর্যোগে বিজিবি জাতির আস্থার ঠিকানা। বিজিবি সদস্যদের আনুগত্য ও বিশ্বস্ততা প্রশ্নাতীত। কর্মকর্তা ও সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধাবোধ, শৃঙ্খলাবোধ, মানবিকতা, সর্বোপরি পারস্পরিক সহানুভূতিশীলতাই এ বাহিনীর বন্ধন দৃঢ়তর করবে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল বিজিবি দিবস উপলক্ষে বাহিনীর সদর দফতর পিলখানার বীরউত্তম ফজলুর রহমান খন্দকার মিলনায়তনে আয়োজিত বিশেষ দরবারে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। খবর বাসসের। শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগ বিবেচনায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ একটি গৌরবোজ্জ্বল প্রতিষ্ঠান। এ বাহিনী ২২১ বছরের ঐতিহ্যমণ্ডিত। ১৭৯৫ সালে রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন নামে প্রথম গড়ে তোলা হয় এ বাহিনী। সময়ের ব্যবধান ও ভৌগোলিক পরিবর্তনের কারণে নানান নামে দায়িত্ব পালনের পর এখন বিজিবি নামে সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে কাজ করছে। দরবারে অংশগ্রহণকারী বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুনর্গঠনের পর বিজিবি সদর দফতরে এটা আমার চতুর্থ দরবার। এখানে এসে নতুন পরিবেশ ও সুশৃঙ্খল আয়োজনে আমি মুগ্ধ। বিজিবি সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধি, পেশাদারিত্ব তৈরি, জওয়ানদের আবাসনসহ সার্বিক উন্নয়নে তার সরকার অনেক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বিজিবির উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের খণ্ডচিত্র তুলে ধরেন। বিশেষ দরবারে আরও বক্তৃতা করেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজিবি সদর দফতর পিলখানার সঙ্গে রিজিয়ন সদর ও সেক্টর সদরের ডিজিটাল কানেকশন প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় প্রতিনিয়ত ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করা হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, গত জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে রাজনৈতিক সহিংসতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং জনসাধারণের জানমাল রক্ষায় আপনারা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসররা পরিকল্পিত টানা অবরোধে গাড়ি ভাঙচুর এবং চলন্ত গাড়িতে পেট্রলবোমায় জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে হত্যাসহ দেশ অচলের ষড়যন্ত্র চালিয়েছিল। আপনারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে তা বানচালে সক্ষম হন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা, মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা, রামুর বৌদ্ধপল্লীর নিরাপত্তা ও পুনর্বাসন, পার্বত্য এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, ছিটমহলবাসীকে পুনর্বাসনে আপনাদের পদক্ষেপ বিজিবির সুনাম ও মর্যাদা বৃদ্ধি করছে। প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেক বিজিবি সদস্যকে দেশপ্রেম, সততা ও শৃঙ্খলার সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিজিবির কল্যাণ ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে তার সরকারের সবরকম সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিজিবি সদর দফতরের বীরউত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ শেষে বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশে বক্তৃতা করেন। বক্তৃতায় শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বিজিবি তার ঐতিহ্য সমুন্নত রেখে সামনে এগিয়ে যাবে এবং একদিন বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মর্যাদা লাভ করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সংঘটিত বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ড এ বাহিনীর ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। সে সময় সরকার গঠনের পরপরই বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ডের মতো ন্যক্কারজনক ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি আমাদের মোকাবিলা করতে হয়। আপনাদের সবার সহযোগিতায় সেই সংকটময় পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ বাহিনীকে একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা ব্যাপক সংস্কার ও উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এর আগে প্রধানমন্ত্রী প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন তাকে স্বাগত জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহণ করেন এবং একটি সুসজ্জিত খোলা জিপে করে প্যারেড পরিদর্শন করেন। বিজিবির উপমহাপরিচালক আমিরুল ইসলাম শিকদার কমান্ডার হিসেবে প্যারেড পরিচালনা করেন। মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, বিদেশি কূটনীতিক এবং পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বিজিবির ৫৯ সদস্যের মাঝে বীরত্বপূর্ণ এবং কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিজিবি পদক বিতরণ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী চিত্তাকর্ষক ‘ট্রিক ড্রিল’ ও ‘ডগ স্কোয়াড ডিসপ্লে’ উপভোগ করেন। বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামে বিজবি সদস্যদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বাহিনী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে তৎকালীন ইপিআরের বেতারকর্মীরা এ পিলখানা থেকেই বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা সমগ্র দেশে প্রচার করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ওয়ারলেসযোগে প্রচার করায় ইপিআরের সুবেদার মেজর শওকত আলীসহ তিনজনকে পাক হানাদার বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রায় ১২ হাজার বাঙালি সদস্য মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের মোকাবিলা করতে গিয়ে এ বাহিনীর ৮১৭ সদস্য শাহাদাতবরণ করেন। আমি তাদের মহান আত্মত্যাগ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।

সর্বশেষ খবর