বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

জাতিসংঘে চাঁদা বাড়ল বাংলাদেশের

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

মাথাপিছু আয়ের হিসাবে নিম্নমধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ায় জাতিসংঘে আগের চেয়ে বর্ধিত হারে চাঁদা দিতে হবে বাংলাদেশকে। সংস্থাটির অনুরোধে এরই মধ্যে আগামী চার বছরের জন্য অন্তত ২৫ শতাংশ বেশি হারে চাঁদা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। নভেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের প্লেজিং কনফারেন্সে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের পক্ষ থেকে (ইআরডি) বাংলাদেশের এই চাঁদার হার বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়। ইআরডি জানায়, জাতিসংঘে এর আগে যে হারে চাঁদা দেওয়া হতো তা প্রায় এক দশক আগে নির্ধারণ করা হয়েছিল। ফলে চাঁদার হার বাড়ানোর বিষয়টি যৌক্তিক হয়ে ওঠে। ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে বাংলাদেশ। সেই থেকে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে কর্মরত জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা সম্পূর্ণ অনুদান সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম চলমান রেখেছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়সহ দুর্ঘটনাজনিত বিভিন্ন জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় সংস্থাটি জরুরি সহায়তা নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে। সে অনুযায়ী বাংলাদেশও সংস্থাটিতে বিভিন্ন অনুপাতে চাঁদা দিয়ে আসছে। মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪৬ ডলার অতিক্রম করায় গত বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশকে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্নমধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করার ঘোষণা দেয় বিশ্বব্যাংক। আর তখন থেকেই জাতিসংঘ বাংলাদেশের প্রদেয় চাঁদার হার বাড়ানোর অনুরোধ জানাতে থাকে। তবে এ ধরনের আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থায় রাষ্ট্রের চাঁদার হার বাড়ানোর বিষয়টি অনুমোদন করে থাকে এ-সংক্রান্ত সচিব কমিটি। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার এই চাঁদার হার বাড়ানোর অঙ্গীকার করার আগে এ বিষয়ে সচিব কমিটির অনুমোদন নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে। এখন অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়ে চিঠি লিখেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ।

ইআরডি সূত্র জানায়, প্রতি বছর নভেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত প্লেজিং কনফারেন্সে সাধারণত বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বার্ষিক চাঁদার হার ঘোষণা করা হয়। এবার বিষয়টি শেষ মুহূর্তে জানতে পারায় এ বিষয়ে সচিব কমিটির অনুমোদন নেওয়ার সুযোগ ছিল না। ফলে জরুরি ভিত্তিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের অনুমোদন নিয়ে ৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত প্লেজিং কনফারেন্সে বাংলাদেশের চাঁদার হার বাড়ানোর অঙ্গীকার করা হয়। এখন এ বিষয়ে সচিব কমিটির অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, ‘জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় চাঁদা বাড়ানোর বিষয়টি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের মর্যাদার সঙ্গে জড়িত বলে আমরা এটিকে ইতিবাচকভাবেই দেখছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ইতিমধ্যে নিম্নমধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন হয়েছে। মাথাপিছু আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও রপ্তানি আয় বাড়ছে। আমাদের অর্থনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক এসব অগ্রগতি বিবেচনায় জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে চাঁদার পরিমাণ বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে।’

যে হারে চাঁদা বাড়ল : জাতিসংঘের ইউএনডিপিকে ৪ লাখ ডলারের পরিবর্তে ৫ লাখ, ইউএনডিপির লোকাল অফিসকে ১১ হাজারের স্থলে ১৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, ইউএনএফপিএকে (হেড অফিস) ২৫ হাজারের স্থলে ৩১ হাজার ৩০০ ডলার, লোকাল অফিসকে ৩ হাজারের স্থলে ৩ হাজার ৮০০ ডলার, ইউনিসেফকে (হেড অফিস) ৩৪ হাজার ৫০০-এর স্থলে ৪৩ হাজার ২০০ ডলার, ইউএনইপিকে ৬৫৩ ডলারের স্থলে ৯০০, ইউএনভি, এসএসসি, ইউএনডিসিপি ও ইউএনওডিসিকে ১ হাজারের স্থলে ১ হাজার ৩০০ ডলার এবং ইউএন উইমেনকে ১০ হাজার ৫০০ ডলারের স্থলে ১৩ হাজার ২০০ করে বার্ষিক চাঁদা পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে।

সর্বশেষ খবর