শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
শুক্রবারের বিশেষ আয়োজন

বাংলার চায়ে মাত হবে বিশ্ব

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

বাংলার চায়ে মাত হবে বিশ্ব

অন্যকিছু খাক আর না খাক, সারা বিশ্বের মানুষের সত্যি কিন্তু দিন শুরু হয় চা পান করেই। বিশ্বে মানুষ যত বাড়ছে, চায়ের চাহিদাও তত বাড়ছে। গোটা বিশ্বে বাংলাদেশের চায়ের একটি বিশেষ সুনাম রয়েছে। তাই তো বিশ্ব চা-বাজারে আবার জায়গা দখলের সব আয়োজন শেষ করেছে বাংলাদেশ। অবশ্য একসময় বিশ্বের সর্ববৃহৎ চা উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের চায়ের একচেটিয়া আধিপত্য ছিল আন্তর্জাতিক বাজারে। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে গিয়ে বিশ্ববাজার থেকে ছিটকে  পড়েছে বাংলাদেশের চা। আর এখান থেকে টেনে তুলে আবারও বিশ্ববাজারে চায়ের হারানো জৌলুস ফিরিয়ে আনতে মহাপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এ জন্য ‘চা শিল্পের উন্নয়নে পথনকশা’ নামে একটি কর্মকৌশল তৈরি করা হয়েছে। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৬৭ কোটি টাকা। ১৫ বছর মেয়াদি এই পথনকশায় চায়ের উৎপাদন ১৩২ মিলিয়ন কেজিতে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা থেকে বিদেশে রপ্তানি করা যাবে কমপক্ষে ২৫ মিলিয়ন কেজি চা। এই পথনকশা এখন মন্ত্রিসভার অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সর্বশেষ পর্যালোচনা শেষে ৩ নভেম্বর পথনকশাটি চা বোর্ড থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়  থেকে এর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নকশাটি মন্ত্রিসভা থেকে অনুমোদন হয়ে গেলে প্রয়োজনীয় অর্থছাড়ের পরপরই এর কাজ শুরু হয়ে যাবে। এর পর থেকে এই পথনকশার পথ ধরেই এগিয়ে যাবে চা শিল্প। এর ফলে চা শিল্পে আবার সুদিন ফিরে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। চা বোর্ডের উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা) মুনির আহমদ জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পথনকশাটি তৈরি করা হয়েছে। ২০১৫ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি সভা থেকে চা শিল্পকে বাঁচানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় মার্চ-এপ্রিলে ১০টি কর্মকৌশল নির্ধারণ করে পথনকশার একটি ছক আঁকা হয়। জুলাই-আগস্টে পথনকশা তৈরির কাজ পুরোপুরি শেষ হয়। কর্মকৌশলের মধ্যে রয়েছে—চায়ের আবাদ সম্প্রসারণ, রি-প্লেন্টিং, ক্ষুদ্রায়তন চা চাষ, পরিবেশ ভারসাম্য প্রকল্প, চা গবেষণা কেন্দ্র ও পিডিইউ শক্তিশালী করা, শ্রমকল্যাণ কেন্দ্রকে গতিশীল করা, চা-বাগানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, চা-কারখানা সময়োপযোগী ও আধুনিকায়ন করা এবং সেচ প্রকল্প। আর এগুলো বাস্তবায়ন করতে নেওয়া হয়েছে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। জানা যায়, একসময় রপ্তানি তালিকায় পাটের পরই ছিল চায়ের স্থান। কিন্তু দিনে দিনে দেশে যে হারে চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে, সেই হারে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়নি। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে চায়ের রপ্তানি কমেছে। এ ছাড়া একশ্রেণির লোভী ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার জন্য বিদেশ থেকে কম দামি চা আমদানি করে প্যাকেটজাত করে বিক্রি করছেন। জানা যায়, চলতি বছর প্রায় ছয় মিলিয়ন কেজি চা বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে।

বাংলাদেশি চা সংসদের সিলেট বিভাগের চেয়ারম্যান জি এম শিবলী বলেন, ‘চা শিল্পকে রক্ষা করতে হলে আমদানির ওপর শুল্ক বাড়াতে হবে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত চা আমদানির ওপর ১১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। সেখানে বাংলাদেশি চায়ের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও উচ্চ শুল্কের কারণে রপ্তানি করা যাচ্ছে না। অথচ বাংলাদেশে চা আমদানির ওপর মাত্র ৮৫ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। এ সুযোগে আমদানি হচ্ছে নিম্নমানের চা। কম শুল্কের সুবিধা নিয়ে চা আমদানি অব্যাহত থাকলে এ শিল্প ধ্বংসের মুখে পড়বে।’

বর্তমানে দেশে ১৬২টি চা-বাগানের অনুকূলে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৬২ দশমিক ৪১ হেক্টর জমি বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে আবাদি জমির পরিমাণ ৫৬ হাজার হেক্টর। চলতি মৌসুমে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ৭১ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। অনুকূল পরিবেশ থাকলে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮৫ মিলিয়ন কেজি উৎপাদন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চা শিল্পের উন্নয়নের পথনকশাটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কর্মকৌশল বাস্তবায়িত হলে একসময় বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের চায়ের যে একক আধিপত্য ছিল তা আবার ফিরে আসবে।

সর্বশেষ খবর